কাউন্সিলরপুত্র গ্রেপ্তার

রেহনুমার জানাজায় ছিলেন না শ্বশুর পক্ষের কেউ একমাত্র সন্তানও দেখেনি মায়ের মুখ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ জুলাই, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পুত্রবধূ রেহনুমা ফেরদৌসের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তার পুত্র নওশাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অবশ্য ঘটনার পর অর্থাৎ ২ জুলাই দুপুরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে রেহনুমার পিতা তারেক ইমতিয়াজ বাদী হয়ে স্বামী নওশাদুল আমিন ও শাশুড়ি পপিকে আসামি করে তার মেয়েকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। এরপর স্বামী নওশাদুল আমিনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ (রোববার) সকালে তাকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, মামলার এজাহার জমা দিতে শনিবার রাত ১১টার দিকে থানায় যান রেহনুমার বাবা তারেক ইমতিয়াজ। তিনি প্রায় ২ ঘণ্টা থানায় ছিলেন। এদিন দুপুর থেকেই থানায় পুলিশ হেফাজতে ছিলেন রেহনুমার স্বামী নওশাদুল আমিন। এ সময় শ্বশুরের সাথে কোনো কথা বলেননি তিনি। এদিকে গত শনিবার রাত ১০টার দিকে আলকরণে নিজ বাড়িতে রেহনুমার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। তবে তার জানাজায় শ্বশুর পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। রেহনুমার পিতা তারেক ইমতিয়াজ অনুনয় করে বলেছিলেন রেহনুমার একমাত্র সন্তান আরিবাকে শেষবারের মতো যেন মায়ের মুখ দেখতে আনা হয়। কিন্তু সে অনুরোধ রক্ষা করেনি নওশাদের পরিবার। গত ২ জুলাই জানাজা শেষে রেহনুমার বাবা তারেক ইমতিয়াজ বলেন, রেহনুমার জানাজায় তার শ্বশুর পক্ষের কেউ আসেনি। আমার নাতনিটাকেও তারা শেষবারের মতো মায়ের লাশ
দেখাতে আনেনি।
শনিবার সকালে কাউন্সিলর নুরুল আমিনের বাসা থেকে তার পুত্রবধূ রেহনুমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নুরুল আমিনের পরিবারের দাবি, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। রেহনুমার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলছে তার পরিবার। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খাটে শোয়ানো অবস্থায় রেহনুমার লাশ উদ্ধার করেছে। রেহনুমা চসিকের আলকরণ ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা তারেক সোলায়মান সেলিমের ভাই তারেক ইমতিয়াজের মেয়ে।
জানা যায়, রেহনুমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা কাউন্সিলর নুরুল আমিনের তুলনায় খারাপ ছিল। এসব নিয়ে তাকে প্রায়ই মানসিক নির্যাতন করত তার শাশুড়ি ও স্বামী। রোজার ঈদের আগে তিন মাস রেহনুমা বাবার বাড়িতে ছিলেন। এসব নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের বাসায় দুই পরিবারের সদস্যরা বৈঠকও করেছিলেন। সেখানে কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবার ভবিষ্যতে আর রেহনুমাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। তার ভিত্তিতে রেহনুমাকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠায় তার পরিবার। এরপর কিছুদিন সব ঠিক থাকলেও আবার নির্যাতন শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। রেহনুমার বাবা ঘটনার আগের দিনও রেহনুমাকে আনতে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলেছিলেন, এখন যাওয়া চলবে না। কোরবানের ঈদের পর তারা রেহনুমাকে বাবার বাড়িতে পাঠাবে। কোরবানের ঈদ আসার আগেই রেহনুমা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিফটে উঠা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসি পরীক্ষা আগস্টে