রাস্তা নির্মাণের নামে কাটা হচ্ছে বিশাল পাহাড়

নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে রাস্তা নির্মাণের নামে কাটা হচ্ছে বিশাল পাহাড়। মূলত পার্শ্ববর্তী নীচু জমি ভরাটের জন্য কয়েকটি এস্কেভেটর ব্যবহার করে প্রভাবশালীরা পরিবেশ ধ্বংসের কাজটি করছেন। অনুমোদন ছাড়াই প্রকাশ্যে বিশাল পাহাড় কাটা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা- এ অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের রামজাদী এলাকায় কয়েকটি এস্কেভেটর ব্যবহার করে প্রকাশ্যে বিশাল একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণের নামে ইতিমধ্যে পাহাড়টি কয়েক দফায় কেটে বিশাল পাহাড়টি মধ্যখানে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের অপরপ্রান্তে কোনো গ্রাম বসতি নেই। মূলত রামজাদী এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করতে ফসলি নীচু জমি ভরাটের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে বলে জানান অভিযোগকারীরা।

কাজটির তদারকের দায়িত্বে থাকা টিটু বড়ুয়া বলেন, রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড় কাটা মাটিগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকায় জমি ভরাটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথম দফায় পার্বত্য জেলা পরিষদ রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কেটেছিল। কিন্তু পরিত্যক্ত রাস্তাটি নতুন করে জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ইটের রাস্তা তৈরির জন্য একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে শুনেছি।

জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মোহাম্মদ মূছা কোম্পানি বলেন, পাহাড় আগেই কাটা হয়েছিল। এখন রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কেটে ঢালু কমানো হচ্ছে। পাহাড় কাটা মাটিগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকায় জমি ভরাটের কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজটি আমি নই, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অজিত কান্তি দাস করছেন। আমি শুধু এস্কেভেটর এবং ট্রাক মালামাল সরঞ্জামগুলো দিয়ে সহযোগিতা করছি। আওয়ামী লীগ নেতা অজিত কান্তি দাস বলেন, জামছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নির্বাচনী ইশতেহার ছিলো রাস্তাটি। ছোটখাটো যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত করতে পাহাড়ের মাটি কেটে রাস্তাটি নীচু করা হচ্ছে। মাটিগুলো পাশ্ববর্তী এলাকায় জমি ভরাটের কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজটি মূছা কোম্পানি আর আমি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ের অপরপ্রান্তে কোনো গ্রাম জনবসতি নেই। শুধুমাত্র রামজাদী এলাকায় নীচু জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। প্রথম দফায় পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল, এখন নবগঠিত জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা নির্মাণের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে এলাকাটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষায় বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এস্কেভেটর দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা হলেও পরিবেশ ধ্বংসকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। এদিকে জামছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্যচিং প্‌রু মারমার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফখরুল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পাহাড় কাটা অপরাধ। রাস্তা নির্মাণ বা ফসলি জমি ভরাটের জন্য পাহাড় কাটার কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্রীলঙ্কায় মোবাইলের আলোতে চলছে অস্ত্রোপচার
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের কপালে কোপ