রাসায়নিক পরীক্ষক সংকটে ধুঁকছে কাস্টমস ল্যাব

৭০ শতাংশ পণ্যের নমুনা যাচ্ছে বাইরে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থের অপচয়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৮ জুলাই, ২০২২ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রাসায়নিক পরীক্ষকের ‘সীমাবদ্ধতা’য় ধুঁকছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগার (ল্যাব)। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষক হেলাল হাসান বেশিরভাগ পণ্যের নমুনা ঢাকাসহ বিভিন্ন বহির্ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। আগের তুলনায় কাস্টমসের ল্যাবে পরীক্ষণ কার্যক্রম চলছে মাত্র ৩০ শতাংশ। আর ৭০ শতাংশ হচ্ছে বহির্ল্যাবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। একইসাথে অর্থেরও অপচয় হচ্ছে।

আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমসের ল্যাবে জনবল সংকটের সমস্যা অনেক পুরনো। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একমাত্র রাসায়নিক পরীক্ষক আবদুল হান্নান অবসরে গেলে ল্যাবের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। এরপর বেনাপোল কাস্টমস থেকে মনোয়ারা শিরীন নামের একজন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষককে নিয়োগ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে তিনি নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের বাইরে পরীক্ষা করতে পারেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে মংলা কাস্টম হাউস থেকে গত ১১ এপ্রিল সহকারী কেমিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট মো. হেলাল হাসানকে নিয়োগ দেয় এনবিআর। তিনিও বেশিরভাগ পরীক্ষা করতে পারেন না।

জানা গেছে, আমদানি পণ্য বন্দর থেকে খালাসের আগে ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। রাসায়নিক পরীক্ষকরা ঘোষণা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের মান ঠিক আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে দেখেন। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট সন্তোষজনক হলেই খালাসের অনুমতি মেলে। আবার কোনো আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য নিয়ে এলে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে পরীক্ষকরা সেই পণ্যের যথাযথ শুল্কায়নের জন্য সুপারিশ করে থাকেন। এতে সরকারের প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি রোধ হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন পণ্যের ৬০-৭০টি নমুনা আসে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরা বিভিন্ন ফোরামের সভায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও এনবিআরের কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে একজন পূর্ণাঙ্গ রাসায়নিক পরীক্ষক দিয়ে ল্যাব চলেছে। ওই পরীক্ষক এ বছরের শুরুতে অবসরে গেলে পরীক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। এরপর থেকে একপ্রকার জোড়াতালি দিয়ে ল্যাবটি চালানো হচ্ছে।

বর্তমান রাসায়নিক পরীক্ষকের পণ্য পরীক্ষায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষার বাইরে অনেক পরীক্ষা বহির্ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। এতে অর্থের অপচয় ও সময়ক্ষেপণ দুটোই হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস ল্যাবের সহকারী কেমিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট মো. হেলাল হাসান আজাদীকে বলেন, আমি আগে কাজ করেছিলাম মংলা কাস্টমসে। সেখানে কাজের এতটা চাপ ছিল না। চট্টগ্রাম কাস্টমসে কাজের চাপ অনেক বেশি। তাই যেসব পণ্যের পরীক্ষা করতে একটু বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় সেগুলো আমি বাইরে থেকে করিয়ে আনার জন্য বলি। জটিল পণ্যের পরীক্ষা নিয়ে যদি বেশি সময় দিই তাহলে অনেক ছোটখাটো পরীক্ষা জমে যাবে। কারণ সব কাজ আমাকেই করতে হচ্ছে। জনবল থাকলে এ সমস্যা থাকত না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১১৫০ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহে মেঘ দেখালো টেলিস্কোপ
পরবর্তী নিবন্ধআসামিকে লাগাতে হবে ১০০ গাছ