রহস্যেঘেরা সভ্যতার নৌকা

রেজাউল করিম | বুধবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবী নামক গ্রহটা এমনিতে রহস্যেঘেরা। আজকের আধুনিক মানুষ একদিনে হয়ে উঠেনি। পরিবার, সমাজ, সম্প্রদায় ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। গড়ে তোলে সভ্যতা। গ্রিক, রোমান, সিন্ধু, ব্যবলিন- এ রকম সভ্যতার ফল আধুনিক বিশ্ব। প্রাচীন সভ্যতা মানেই রহস্যেঘেরা আদি মানববসতি। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম মায়া সভ্যতা। এটি শুধু প্রাচীনই নয় বরং সভ্যতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রহস্যেঘেরা রয়েছে মায়া সভ্যতা। যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা এই সভ্যতার রহস্য উন্মোচনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমাজনের ২ মিলিয়ন বর্গমাইল আয়তনের বিশাল জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে এই রহস্যময় প্রাচীন সভ্যতা। হাজার হাজার বছর পুরনো এ সভ্যতাকে আমেরিকাতে স্প্যানিশদের আসার আগে সবচেয়ে আধুনিক সভ্যতা হিসেবে ধরা হয়। তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত সভ্যতা ছিল সভ্যতা। বসবাসকারীদের মায়ানও বলা হতো।
২৬০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মধ্য আমেরিকার বর্তমান বেলিজে মায়া সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায়। বর্তমান মধ্য আমেরিকার মেক্সিকো, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, এল সালভেদরের ১০০০ কিলোমিটার জুড়ে ছিল এই সভ্যতা। এর বাইরেও অনেক স্থানে শিল্প ও সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। এসব অঞ্চলজুড়ে তাদের শিলালিপি, মৃৎশিল্প ও স্থাপত্য কলার বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়।
মেক্সিকোতে সম্প্রতি প্রায় হাজার বছরের পুরোনো মায়া সভ্যতার একটি ক্যানোর (ডিঙি নৌকা) অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। দেশটির একটি প্রধান রেল সংযোগের নির্মাণকাজের সময় খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় ওই ক্যানোর সন্ধান পাওয়া যায়। এ বছরের জানুয়ারিতে মায়া ট্রেন নির্মাণের সময় কর্তৃপক্ষ প্রায় আট হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যানথ্রোপলজি অ্যান্ড হিস্ট্রি (আইএনএএইচ) এ তথ্য জানিয়েছে। পানির নিচে প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধানে কাজ করা আইএনএএইচের একদল গবেষক দেশটির একটি প্রধান রেল সংযোগের নির্মাণকাজের সময় ওই ক্যানোর সন্ধান পান।
মায়া ট্রেন নামে একটি বিতর্কিত পর্যটন প্রকল্পের কাজের সময় এর সন্ধান পাওয়া যায়। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট বিতর্কিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যারিবীয় রিসোর্টগুলোর সঙ্গে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর সংযোগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আইএনএএইচ বলেছে, ছোট নৌকাটি সিনোট থেকে পানি তোলার জন্য বা ধর্মীয় আচারের সময় নৈবেদ্য জমা করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।
গবেষকরা বলেছেন, মায়া অঞ্চল থেকে এত ভালোভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় উদ্ধার করা এই ধরনের প্রথম ক্যানো এটি। এর আগে গুয়াতেমালা ও বেলিজ থেকে এ ধরনের ডিঙি নৌকার অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ ক্যানো ৮৩০ থেকে ৯৫০ অব্দের হতে পারে। তবে এ নিয়ে আরও বিশ্লেষণ করার কথা বলেছে আইএনএএইচ।

মায়া সভ্যতা বিখ্যাত হয়ে আছে স্থাপত্যশিল্প, বিশালাকৃতির ঘরবাড়ি, পিরামিড আর মূর্তির জন্য। এখনও মায়া সভ্যতার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এগুলো। তবে সম্প্রতি পাওয়া ডিঙিনৌকা অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে গবেষকদের জন্য। আগামীতে হয়তো জানা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইঁদুর বাহিনীর যুদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধভাটিয়ারীতে ৮ম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে ঠেকালেন ইউপি চেয়ারম্যান