ইঁদুর বাহিনীর যুদ্ধ

শাম্মী তুলতুল | বুধবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

বনের নাম স্বপ্নপুর। হঠাৎ অশান্তিতে পরিণত হয় স্বপ্নপুর এক দৈত্যর কারণে। নইলে এই স্বপ্নপুর সব বনের চাইতে সেরা বন ছিল। সুখে শান্তিতে বসবাস করছিল এইখানের সব পশু-পাখিরা। কোথা হতে এক দৈত্য এসে সব তছনছ করে দিলো। সুখ-শান্তি মাটি করে দিলো। তাই বনের সব্বায় উদ্বিগ্ন। সবাই দফায় দফায় মিটিং এ ব্যস্ত।
আজও মিটিং চলছে। কথোপকথন হচ্ছে এক পশুর সাথে অন্য পশুর। বেটা আমাদের সকলের ঘুম হারাম করে দিলো, বাঘ বলল সিংহকে।
উপায় তো একটা বের করতেই হবে। এভাবে আর কদ্দিন? গালে হাত দিয়ে বসে থাকলেতো চলবে না। আমাদের এখানে দৈত্য রাজাগিরি করবে তা আমাদের লজ্জার ব্যাপার, বলল হরিণ মশাই শিয়ালকে উদ্দেশ্য করে।
তা ঠিক। আগে যেভাবে আমরা এই বনে স্বাধীন ভাবে বসবাস করেছিলাম তেমন পরিস্থিতি আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা এমন দিন চোখে দেখবো কল্পনাও করিনি।
কথার মাঝখানে বিড়াল একটু খেপে গিয়ে বলল, অনেক হয়েছে। মিটিং ফিটিং বাদ দিয়ে আজই একটা সিদ্ধান্ত চাই।
হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক ঠিক আজই সিদ্ধান্ত চাই। আজই সিদ্ধান্ত চাই।
এভাবে অন্যান্য বিড়ালরাও সমানভাবে চেঁচিয়ে উঠল।
শিয়াল বলল,আহ শান্ত হও তোমরা। আমরা আগের মতোই সব কিছু ফিরে পাবো চিন্তা করোনা।
কিন্তু কিভাবে বিড়াল বলল?
শিয়াল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। খানিক পর শিয়াল চিৎকার দিয়ে বলল, পেয়েছি পেয়েছি।
কি কি সবাই একসাথে বলে উঠল। কি পেয়েছেন?
সবাই কাছে এসো বলছি। শিয়ালের কথায় সবার মাথা এক হল। শোন এখন একমাত্র ভরসা ইঁদুর।
কথাটা শোনা মাত্র বিড়াল হি! হি! হি! করে হেসে দিলো। কি যে বলেন না শিয়াল ভাই?
শিয়াল তখন একটু চটে গিয়ে বলল, চুপ করো। হাসবে না। যা বলছি তাই কর।
বিড়াল তখন মাথা নিচু করে বলল, জি আচ্ছা। দায়িত্ব দেওয়া হলো বাঘকে ইঁদুরদের সাথে আজই ফাইনাল কথা বলে ফেলার জন্য। শিয়াল, বাঘকে সব বুঝিয়ে দিয়ে অন্যদেরকে নিয়ে চলে গেলো।
বাঘও আর দেরী না করে শিয়ালের কথামতো ইঁদুরদের আস্তানায় গিয়ে হাজির হলো। ইঁদুরের দলপতিকে হাক দিলো। দলপতি এসে দেখল বাঘ মশাই অতি আদরে ডাকছে।
ইঁদুর সুন্দর করে বলল, কি হলো বাঘ ভাই ডাকছেন কেন, কোন সমস্যা?
সমস্যাতো একটাই। ওই যে দৈত্য।
হ্যাঁ তার কথা তো আমরাও ভাবছি। আমরাও চিন্তিত অনেক। কাল সে আমাদের ঘর পা দিয়ে ভেঙে দিয়েছে। আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় আজ শিয়ালের মিটিংয়ে যেতে পারিনি।
আর মিটিংয়ের দরকার নেই। কোন মিটিং আর হবে না। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আপনারা পারবেন একমাত্র বনটা রক্ষা করতে।
আমরা?
হ্যাঁ আপনারাই। ভেবে দেখুন একবার।শিয়াল ভাই এমনি এমনিতো আর আপনাদের কথা বলেননি। নিশ্চয় আপনাদের সেই গুণ আছে। বোঝাতে পেরেছি?
হুম। বুঝেছি।
চিন্তা করবেন না আমরা সবাই আপনার সাথে আছি। আপনি ভাবুন। আমি আসছি। এই বলে বাঘ বিদায় নিয়ে চলে গেলো। বাঘ চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইঁদুর কর্তা তার দলের সবাইকে ডাকা পাঠাল। সবার সাথে বসে আলোচনা করল। কর্তা বলল, এ অনেক বড় দায়িত্ব। আমাদের উপর ভরসা করেছেন কম কথা নয়। দৈত্যকে যেভাবে হোক তাড়ানো খুব জরুরি। নইলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবো। এখন শোন বাঁচারা তোমরা তোমাদের দাঁতগুলো ভালো করে ধার করিয়ে নাও। ওই দাঁত দিয়েই ওদের আস্তানা ধ্বংস করে দিতে হবে। আর তাদের কামড় দিয়ে লালে লাল করে দিতে হবে। তোমরা সবাই আমার কথা বুঝতে পেরেছতো?
জী বুঝতে পেরেছি।
তাহলে এই মুহূর্ত থেকেই কাজ শুরু করে দাও।
বনের একটু ভেতরেই দৈত্যর আস্তানা। দুষ্ট দৈত্যটা তার ছানাপোনা নিয়ে সেখানে ঘেরা দিয়ে মহা আনন্দে দিন কাটায়। আজও সে তার ছানাদের নিয়ে শুয়ে ছিল। এরই মধ্যে ইদুররা কাজ শুরু করে দিলো। বড় ধেরে ইঁদুরটা তার দাঁত দিয়ে দৈত্যর চারপাশ ঘেরা তারগুলো কাটা শুরু করলো। তার কাটা শেষ হলে সব বাচ্চা ইঁদুররা প্রস্তুত ছিল তার গায়ের ওপর আক্রমণ করার জন্য। ইঁদুরের বড় কর্তা যখন আক্রমণ বলে দৌড় দিলো তার পেছন পেছন সব বাচ্চা ইঁদুরগুলো আস্তানায় ডুকে দৈত্যর গায়ের ওপর চড়ে বসল। দৈত্য তা দেখে ভড়কে গেলো। তারা তাদের ধাঁর করা দাঁত দিয়ে দৈত্যকে কামড়াতে লাগলো। কামড়ে দৈত্যর দু, কান দিয়ে রক্ত পরা শুরু হলো, দৈত্য যতই তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ততই ইঁদুরগুলো তার গায়ে চড়ে বসে।
ধেরে ইঁদুর বলে, অনেক জ্বালিয়েছিস আমাদের তুই।আমাদের স্বপ্নপুর ছেড়ে চলে যা নইলে তোর সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করে দেবো।
দৈত্য বলে, ওরে আমাকে মের না, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এখুনি চলে যাচ্ছি। আমার বাচ্চাদের ছেঁড়ে দাও। এই বলে চিৎকার করতে করতে বন থেকে সে বেরিয়ে পরল।
ইঁদুর কর্তা বলল, আর কোনদিনও ফিরে তাকাবি না আমাদের এই স্বপ্নপুরের দিকে। আজ জ্যান্ত ছেড়ে দিলাম। কাল কিন্তু ছাড়ব না।
না ভাই ভুলেও এই স্বপ্নপুরের দিকে আর তাকাবো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও। অবশেষে বিশাল ইঁদুর বাহিনীর কাছে হার মেনে দৈত্য স্বপ্নপুর থেকে বিদায় নিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেজাজ গরম
পরবর্তী নিবন্ধরহস্যেঘেরা সভ্যতার নৌকা