যা আছে আইইডিসিআর’র প্রতিবেদনে

চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ জুন, ২০২৩ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

গত এপ্রিলের শুরুর দিকে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায় চট্টগ্রামে। বেশ কয়টি উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। হঠাৎ ডায়রিয়ার এই প্রকোপ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে গত ৪ মে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পানিবাহিত এ রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণ খুঁজতে নির্দেশনা দেয়া হয় কমিটিকে। পাশাপাশি ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) চিঠি দেয় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর স্বাক্ষরে গত ৬ মে আইআইডিসিআর’র পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। ডায়রিয়ার আউটব্রেক/ইনভেস্টিগেশন কারণ অনুসন্ধানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এর প্রেক্ষিতে ১২ সদস্যের একটি টিম পাঠায় আইইডিসিআর। ৭ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত আইইডিসিআর’র এ টিম মাঠ পর্যায়ে নমুনা ও তথ্য সংগ্রহ করে। এসময় তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডি হাসপাতাল ও বেশ কয়টি উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডায়রিয়া রোগীর সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করেন। তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু রোগীর বাসাবাড়িও পরিদর্শন করেন। পানি ও মলের নমুনাও সংগ্রহ করে আইইডিসিআর’র এ টিম। ঢাকায় ফিরে গিয়ে নমুনা পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। গত ৩১ মে আইইডিসিআর’র পরিচালকের স্বাক্ষরে প্রতিবেদনটি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো হয়েছে। যা কয়েকদিন আগে হাতে পেয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। আইইডিসিআর’র এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

প্রতিবেদনে যা আছে : আইইডিসিআর তাদের প্রতিবেদনে বলেছেআনোয়ারা ও পটিয়ায় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ এবং বোয়ালখালী ও চন্দনাইশে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। অপরদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি হাসপাতালে এপ্রিলের ২য় সপ্তাহ থেকে এই প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়।

রোগীদের তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছেআক্রান্তদের বেশির ভাগই তরুণ বয়সী। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছর। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আক্রান্তদের ৬২ শতাংশ এবং উপজেলায় আক্রান্তদের ৪৫ শতাংশই এই বয়সের। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আক্রান্তদের ৫২ শতাংশ নারী। আর উপজেলায় আক্রান্তদের বেশির ভাগ পুরুষ (৫৭ শতাংশ)

সিটি কর্পোরেশন এলাকার রোগীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশেরই খাবার পানির প্রধান উৎস ওয়াসা। ৩৩ শতাংশের ডিপ টিউবওয়েল। ৩৭ শতাংশ রোগী পানিতে লবণাক্ততা জনিত সংকটের কথা উল্লেখ করেছেন। শহর এলাকায় আক্রান্ত রোগীদের ৫৩ শতাংশ পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করে।

অন্যদিকে, উপজেলা পর্যায়ে আক্রান্ত ৫৭ শতাংশ রোগীর খাবার পানির প্রধান উৎস ডিপ টিউবওয়েল। আর উপজেলার রোগীদের মাত্র ১৬ শতাংশ পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করে।

মল ও পানির নমুনা পরীক্ষা : ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মলের ২৩টি নমুনার কালচার ও সেন্সিটিভিটি পরীক্ষায় ৬টিতে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। আর উপজেলা পর্যায় থেকে পানির ৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৬টি নমুনায় কলেরার জীবাণু এবং ৭টিতে কলিফর্মের উপস্থিতি মিলেছে বলে আইইডিসিআর তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। বিশেষ করে পুকুরের পানিতে এই কলেরার জীবাণু ও কলিফর্মের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে।

তবে প্রায় এক মাস আগে সংগ্রহ করা তথ্যনমুনার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, এখন ডায়রিয়ার প্রকোপ অনেক কমে গেছে। যার কারণে অন্য জীবাণুর যে উপস্থিতির তথ্য এসেছে তাও এতদিনে কমে গেছে বলে আমরা আশা করছি। খাবার ও ব্যবহারের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণে জোর দিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। যারা অপরিষ্কার (ঠিকমতো বিশুদ্ধ না করে) পানি ব্যবহার করে সেসব পরিবার পানিবাহিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে আরো সচতেন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা নিতে থানাকে নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধআফছারুল আমীনের আসনে উপ-নির্বাচন ৩০ জুলাই