মুরগি দিলো ডিম পাহারা

মাহির জামিল | বুধবার , ৬ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

লাল একটা মুরগি। নাম তার লালসোনা। একদিন হলো কী শুনো, মুরগিটা সকালে বেশ বেলা করে উঠলো। তারপর কড়া গলায় ডেকে ওঠলো, ‘ককর্ কর্ ককর্ কর্, ডিম পেড়েছি জব্বর! ককর্ কর্,ককর্ র্কৃ.’। কক্‌ কক্‌, ডানে হেলালো মাথাটা। কক্‌ কক্‌, বামে হেলালো মাথাটা। এমনি করে তার ডিমটা দেখতে লাগলো!কী সাদা ফুরফুরে ওটা! দেখে দেখে তার খুশি আর ধরে না। ভাবলো আরও কিছুক্ষণ ডাকবে! তা না, বেলা হয় বলে বেরিয়ে এলো খোপের বাইরে। বাইরে এসেই আবার ছড়া কাটতে লাগলো,’ককর্ কর্, ককর্ কর্,ডিম পাড়লাম এত্তবড়!ককর্ কর্,ককর্ কর্,ডিমটা দিলাম জব্বর’!ককর্ কর্,ককর্ র্ক..!’
কাছেই ঘুমোচ্ছিলো এক হুলো বেড়াল। ঘুমটুম দিয়ে হয়ে গেছে খড়ের বিড়ে। মুরগির ছড়া শুনে অমন মজার ঘুমটা গেল ছুটে। আর সেও ওঠলো ফ্যাঁচ করে।বললো, ‘সকাল সকাল একী হুটোপুটি! ডিম দিয়েছিস তো বেশ করেছিস। তা অমন ছড়া কেটে বলতে আছে! লাজ শরম নেই তোর’!
লালসোনা তখন ঝুটি ফুলিয়ে ,নথ নাড়িয়ে বললো, ‘ওমা! ডিম পাড়লাম একটা। তা সারা বাড়ি ডিমের খোঁজ খবরটি করতে হবে না! তুমিও যেমন! আলসের ধাড়ি।এতো ঘুমোলে বুঝি চলে! এই যে বলে বেড়াও, তুমি নাকি বাঘের মেঁসো! বাঘের মেসো তো হয় বাঘের মতো! এমন আলসে হয় বুঝি।’ হুলোটা গোঁফ-টোফ নেড়ে, গাল-টাল খাঁমচে কিছু বলতে গেল। শেষে বেশ লজ্জাটি পেয়ে ম্যাও করে ব্যায়াম করতে চলে গেল। সত্যিই তো, আলসেমি বড় খারাপ।
লালসোনা এবার উঠোনে এসে দাঁড়ালো। দুটো হাঁস সেখানে পান্তা খাচ্ছিলো। লালসোনা কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বললো, ‘ডিম দিয়ে বুঝি ডিমরানী হয়ে গেছিস! এমনি ছড়া কেটে বলার কী আছে? আমরাও তো ডিম পাড়ি।কই? ছড়া কাটি না তো! এই কুটুম্বা, কটা ডিম যেন পাড়লাম রে?’
কুটুম্বা পান্তা গিলতে গিলতেই মাথা নাড়লো। তার মানে ওঁর মনেই নেই! লালসোনা তখন হেসে বলে ওঠলো,’তা আর জানবে কী করে?খাচ্ছো তো বাড়িরটা, ডিম পাড়ছো ঘাটে! সেদিন ডিম পাড়লে বাঁশঝাড়ে। কালকে খেতের আলে। আহারে! ডিমগুলোর কোন খেয়াল খোঁজও নেই। আর আলসেও কি কম! ডিম পেড়ে তা দিতেও তো তোমাদের শরীর বয়ে যায়! সেটুকুও করতে হয় আমাদের। মুরগির তাঁ পেয়ে বাচ্চা ফোঁটে হাঁসের’! হাঁস আর কী বলে।বেশ লজ্জাটি পেয়ে প্যাক প্যাক করতে করতে ডোবায় নামলো। তারপর পুকুরের পাড়ে একটা বাসা বানাতে বসলো। যেখানে সেখানে আর ডিম পাড়বে না ওরা! লালসোনা আবার ডেকে ওঠলো।
এদিক ওদিক চাইতেই দেখলো, চড়ুইটা মুখ ভার করে বসেছে। কাছে এগোতেই চড়ুই বললো,’মাগো মা! কী কড়কড়ে গলায় ডাকো তুমি। কী দুষ্টু! কী পাজি!’ এই বলে ঝগড়া করতে লাগলো। লালসোনা কিন্তু ঝগড়া করলো না। মিষ্টি হেসে বললো, ‘নিজের দিকে একটু দেখবে তো ভাই। পরের ঘরে ঠিক বাসাটি বেঁধে আছো। নিজে তো খুঁজেপেতেও খাবে না। চাষীর ঘরের ধানটা, চালটা ঘেঁটে নেবে। শুধু ঘুম আর আলসেমি তোমার!’ চড়ুই আর কী বলবে। ঠোঁট খানা ঘষেমেজে বললো, ‘তা বলেছ ঠিক। বাড়িরটা খেতে খেতে আমারও শরীরটা বেশ ভারিক্কি হয়ে গেছে। আর কুঁড়েমিতেও ধরেছে। যাই একবার মাঠে। একটু লাফ ঝাপ করি গে।আর মজার মজার দানা খুটে বেড়াই’। শুনে লালসোনার খুব ভালো লাগলো। আর তখুনি ছুটে এলো ছোট্ট মেয়ে তিতলি।
লাল মুরগিটার কাছে এসে বললো, ‘বুঝেছি, বুঝেছি। আর ডাকতে হবে না। এখনি খোয়ার থেকে ডিমটা নিয়ে আসছি!’ লালসোনা এবার ডাকাডাকি থামালো।আর খুট খুট করে ধান খেতে বসলো। এতক্ষণ ডেকে ডেকে তিতলিকেই খুঁজছিলো সে। এইতো তিতলি এসে গেছে। এখন আর দুষ্টু বেড়ালটা ডিম চুরি করতে পারবে না। কারণ..ওগুলো সব থাকবে তিতলির কাছে!

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুশির আহ্লাদ
পরবর্তী নিবন্ধদুঃসাহসী কলম্বাসের সমুদ্র যাত্রা