দুঃসাহসী কলম্বাসের সমুদ্র যাত্রা

আরিফ রায়হান | বুধবার , ৬ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬) যিনি মহাসমুদ্রে দুঃসাহসী একজন অভিযাত্রী। তিনিই প্রথম বিশাল অচেনা, অজানা আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার দুঃসাহস করেছিলেন। বলা যায়, দেশ আবিষ্কার যুগের সূচনা করেছিলেন তিনি। শৈশব থেকেই সমুদ্রের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তাঁর। এই আগ্রহ থেকে দুঃসাহসী অভিযাত্রী কলম্বাস বিশাল আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে রীতিমতো আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। এছাড়া কলম্বাসই প্রথম সভ্য পৃথিবীকে জানিয়েছিলেন যে ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের মাঝে অজানা ভূখণ্ডে আমেরিকা অবস্থিত। যার সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। কলম্বাসের সমুদ্রযাত্রার কারণে আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তৃতি, সমুদ্র স্রোত, বায়ূপ্রবাহ, শৈবাল সাগর, অক্ষাংশের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া গেছে।
কলম্বাস নৌ-চলাচলের বিভিন্ন বই গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়েছিলেন। টলেমির বর্ণিত এশিয়া মহাদেশের বিশাল আয়তন তার মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। ১৪৭৭ সালে কলম্বাস ইংল্যাণ্ডে যান এবং সেখানেই তিনি প্রথম জানতে পারেন মহাসাগরের ওপারে দূর পশ্চিমে বিশাল ভূখণ্ড থাকার কথা।
জানা যায়, ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ৩ আগস্ট শুরু হয় কলম্বাসের ঐতিহাসিক সমুদ্রযাত্রা। অভিযানে তিনি ক্যানারি এবং বাহামা দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। প্রথম আবিষ্কৃত দ্বীপের নাম রাখেন সান সালভেদর।
স্পেনের রানি তাকে ‘সমুদ্রের এডমিরাল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তিনটি পালতোলা জাহাজ এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। শান্তা মারিয়া ছিল পাটাতন জাহাজ। দৈর্ঘ্য ১১৭ ফুট। বাকি দুই জাহাজের নাম ছিল পিন্টা এবং নীনা। এই অভিযানে তাকে কয়েকবার প্রচণ্ড সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়তে হয়েছিল। কলম্বাস তার দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রায় ১৭টি জাহাজ নিয়ে ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর কাদিজ বন্দর ত্যাগ করেন। এ অভিযানে তিনি আবিষ্কার করেন ডোমিনিকা, গেলান্টি, মনটসেরাট, সান্তাক্রুজ দ্বীপ। এছাড়া তিনি পুয়োর্তোরিকা জামাইকা দ্বীপও আবিষ্কার করেন। তিনি গুয়াডেলোপ দ্বীপ থেকে বিভিন্ন উদ্ভিদ এনেছিলেন। তার এ যাত্রা ছিল বাণিজ্য বায়ূর বিপরীতে। তিনি যে দুটো জাহাজ নিয়ে স্পেনে এসেছিলেন তা ইসাবেলা বন্দরে তৈরি হয়েছিল। এ দুটোই হল প্রথম জাহাজ যা প্রথম ইউরোপের বন্দরে নোঙর করে। কলম্বাসের তৃতীয় সমুদ্রযাত্রা শুরু হয় ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে। তিনি কেপ ভার্দি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছান। ৬২ দিন সমুদ্রযাত্রার পর ১ আগস্ট ত্রিনিদাদ দ্বীপ আবিষ্কার করেন। এরপর দক্ষিণ আমেরিকার পারিয়ারে পৌঁছান। সেখানে ওরিনিকো নদীর পানি সাগরে পড়তে দেখেন।
কলম্বাসের সর্বশেষ সমুদ্রযাত্রা ছিল ১৫০২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। এ যাত্রায় জাহাজ ছিল ৩২টি। এর মাঝে কলম্বাসের নিজস্ব ছিল ৮টি জাহাজ। হন্ডুরাসের উপকূলের দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে দারিয়েন উপসাগরে। ভেরাগুয়ার উপকূলের দক্ষিণে অনুসন্ধান চালান তিনি। প্রতিকূল বায়ূ, সমুদ্র স্রোত এবং ঝড়ের কারণে তার যাত্রা যথেষ্ট বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর যাত্রা করলেন জামাইকার দিকে। সেখান থেকে সোজা পশ্চিম দিকে। এই প্রথমবারের মতো মূল ভূ-খণ্ড খুঁজে পেলেন কলম্বাস। সস্পন্ন হল তার আমেরিকা আবিষ্কার। তার ধারণা ছিল ওই অঞ্চলটি হয়ত এশিয়া মহাদেশেরই মূল ভূখণ্ড। জামাইকা থেকে জাহাজ নিয়ে হন্ডুরাসের উপকূলে পৌঁছালেন। তারপরে গেলেন গ্যাসিরাস ও ডায়াস অন্তরীপে। সেখানে গিয়ে তার বিশ্বাস হয়েছিল যে তিনি ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছে গেছেন। এরপর উপকূল ধরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে পৌঁছান পানামাতে। একটি অংশের নাম রাখেন বেলেন।
কলম্বাসের সমুদ্রাভিযান নতুন দেশ আবিষ্কারের যুগে এক বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তার সমুদ্র জয়ের কারণে ভৌগোলিক জ্ঞানের জগতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল। কলম্বাস অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করেছিলেন। এর ফলে মানুষ বিশাল সমুদ্র পাড়ি দিতে সাহসী হয়েছে। কলম্বাসের এই দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রা অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুরগি দিলো ডিম পাহারা
পরবর্তী নিবন্ধকেআরসি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু