মায়ের আদরই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে

সুলতানা নীলুফা | বুধবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

নিজের জীবনটা নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ার তো বিষয়। কিন্তু আমার কাছে না হওয়ার কারণ কী? জীবন একটা রহস্য। মনীষারা বলে গেছেন। কিন্তু গুরুত্ব হারায় যখন বা হতাশাগ্রস্ত হয় যারা তাদের নিয়ে ভাবনা, জীবনকে রূপে চাওয়া আমাদের আশানিরাশাগুলো পেয়ে বসে আপনাকে, আমাকে! ভাবতে ভালোই লাগে আমার যখন রাজকন্যা হয়ে ঘুরে বেড়াই স্বপ্নজগতের বাসিন্দা আমি, পরীর ন্যায় রাজকুমারী রূপে নিজেকে দেখতে পেয়ে!এই যে আমার ঘোরের মধ্যে থাকা, সেখান থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলাম কেউ একজন আমারে বলছে, এমন সস্তায় কেউ জীবন কাটায়? জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলেন আপনি অমন করে? কী সহজ আপনার কাছে জীবন? এখন আমার প্রশ্ন হলো সস্তা জীবনটা কী? কাকে বলে? এই যে চারপাশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের জন্ম হচ্ছে, সাথে মৃত্যুর মতো ঘটনাও। একে আমরা কী বলবো? জীবনটারে আলিঙ্গন করে যারা একটু ভালো থাকতে চায়? তাদের আমরা কী বলবো? পাওয়া হয় কী তাদের? আজকেই দেখলাম পত্রিকায় পাতায় মেয়ে শিশুর ধর্ষিতা হওয়ার কাহিনী। টোকাই একটি মেয়েকে প্রাণ হারাতে হয়েছে সাঁইত্রিশ বছরের এক লোভী লম্পট যুবকের হাতে। পবিত্র রমজান মাসে মেয়েটির শ্রমের টাকায় মাবাবার কিনে দেওয়া দর্জির কাছে তৈরী করা জামা, জুতো পরা হবেনা তার। একজন মায়ের কাছে এরচেয়ে কষ্টকর বিষয় কী হতে পারে? বেশ পীড়িত হওয়ার মতো বিষয়। এখন আমি কী বলবোনা একজন টোকাইয়ের চাইতে আমার জীবন মূল্যবান? জীবন প্রকৃতির দান। তাকে আমাদের ভালোবাসতেই হয়। কিন্তু আমরা মানুষেরাই যদি হানাহানি করে নিজের জীবন এবং অপরের জীবনকে বিষাক্ত করে ফেলি তখন এটারেতো ভাগ্যের অদৃষ্টতা বলে চালানো ঠিক নয়। জীবন আমার আপনার একটাই। যারা আমারে বলছিল এরকম একটা কথা সেই মুহূর্তে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল আমার। ঘরে ফেরার পথে কেবলই মনে হচ্ছিল আমারতো আসলে হাসার কথা না, খুব করে কান্না করার কথা। ফাঁকটা কোথায় নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেস করছিলাম। কোথায় রয়ে গিয়েছে বেঁচে থাকার জন্য আকুলতা আমার? হঠাৎ করেই আমায় পেয়ে বসলো সুনসান নীরবতা এবং একটা নীরব কান্নার ঢেউ। মনে হলো অনেকদিন কাঁদা হয়না আমার। বিছানায় গিয়ে ঘুমোতে চাইলাম। ঘুমটাও ঠিকঠাক মতো আসতে চাইলো না। ইস্‌ এ মুহূর্তে মা যদি আমার পাশে থাকতো? মাকে যদি পাওয়া যেতো? জায়নামাজে নামাজ পড়ে আমার জন্য একটু যদি দোয়াদরুত করতেন? ঘুমিয়ে চাঁদের দেশে চলে যাওয়া হতো! মায়ের আদরই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেএটুকু বললে ভুল বলা হবেনা। মা আমার কাছে পরম প্রিয়। ছোটবেলায় মায়ের বুকে শুয়ে কত গল্পই না শোনা হয়েছে। এখনো যদি শোনা হয় তবে নষ্টালজিয়ায় আমাকে পেয়ে বসে না বললে ভুল বলা হবে। খোকা জুড়ালো, ঘুম পাড়ালো বর্গীএলো দেশে/ মায়ের পরনে নীল নাকফুল, গাঁয়ে কলাপাতা মোড়ানো শাড়ি ভাবনার অবলোকন সুখে নিজেরই মনে হতে লাগলো আমি স্বর্গসুখে আছি। আমিই বোধহয় পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ হতে যাওয়াদের মধ্যে একজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালো কাজে মন্দের বাধা দুঃখজনক
পরবর্তী নিবন্ধসুকুমার শিশু পাঠাগার