কানাডায় আসবেন? কী ভিসায় আসবেন?

জিন্নাহ চৌধুরী | মঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

কানাডার টরেন্টোতে বাংলাদেশী নতুন ভিজিটরদের ভীড় বেড়েই চলছে দিনে দিনে। তাদের এতো বেশি সংখ্যায় কানাডা আসা নিয়ে কমিউনিটিতে পক্ষে বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া বা বিতর্কও চলছে। কেউ ভিজিটরদের আসাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। কেউ বলছেন, নতুন ভিজিটররা আসার কারণে বাংলা টাউন ডেনফোর্থের পরিবেশ খারাপ হয়ে গেছে। দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না এখন। ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হচ্ছে ডেনফোর্থ, অনেকে অনৈতিক কাজেও জড়িয়ে যাচ্ছে। কানাডার ফুড ব্যাংকে বিশাল লাইন। এখানে সরকারের কোনো সাহায্য সহযোগিতা থাকে না, ফুড ব্যাংকে স্থানীয় লোকজনের দানের টাকায় এ ফুড ব্যাংকগুলো চলে। এখানে আগে যারা খেতে আসতো তাঁরা ভাসমান মানুষ, অসহায় ছাত্র, সাময়িক চাকরি হারানো মানুষ, আর এখন অনেক নামি দামি ভিজিটরও আসে মাটির দিকে তাকিয়ে। অন্যদিকে কয়েকগুণ মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ফুড ব্যাংকগুলোকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। আবাসন সংকট ও প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। কানাডায় তাঁদের অতীত জীবনের কাজের অভিজ্ঞতা যেমন নেই শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই ফলে হাজারো বাংলাদেশি কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না এখানে।

ভিজিট ভিসা বেশ সহজ করার ফলে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপ্রত্যাশী বছর খানেক ধরে কানাডা আসছেন। ভিজিট ভিসায় আসা এলএমআইএ (লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট) অ্যাপ্রুভড চাকরি খুঁজে পাওয়ার একটা সুযোগ আছে এখানে তাঁরা কানাডায় এসে অস্থায়ীভাবে কাজ করতে পারেন। কানাডায় যদি কেউ জীবনের হুমকির কথা বলে অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে কানাডা সরকার তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীরা কানাডায় প্রটেকটিভ পারসন হিসেবে মর্যাদাও পায় এবং কোনো কাজ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ৭০০/৮০০ ডলার করে প্রতি মাসে সরকারের কাছ থেকে ভাতা পায়, দালালেরা অনেককে বুদ্ধি দিয়েছেন এই রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার। এটা পেতেও এখন সময় লাগে, এবং কেস চালানোর জন্য একজন ইমিগ্রেশন আইনজীবী নিয়োগ দিতে হয়। তখন আইনজীবীকে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার দিতে হয়। এই টাকা আনতে হবে দেশ থেকে হয়তো সাথে করে নতুবা হুন্ডি করে। মামলা যদি একটা তারিখে শেষ না হয় পরবর্তী তারিখে আবারো লাগবে ডলার। এবং মামলাগুলো আগে ৬ মাসে শেষ হলেও এখন তিন চার বছরও লাগতে পারে যতবার মামলা উঠবে আদালতে ততবারেই আইনজীবীকে ডলার দিতে হবে। আর সবশেষে যদি মামলায় হেরে যায় তাহলে দেশে ফিরে যেতে হবে খালি হাতে কিন্তু ততদিন থাকতে লাগবে বাড়ি ভাড়া, বাসে চড়লে টিটিসি ভাড়া, একবার টেপ করলে ২৬০ টাকা, খাওয়া দাওয়া। এখানে চুল কাটতে লাগে ১৫ ডলার, (১২শ টাকা) দাড়ি কাটতে ৫ ডলার (৪০০ টাকা) একটা ডিমের দাম ১৩৫ টাকা। হাত খরচাতো আছেই। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার ফলে সরকারের কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়েছে ফলে তাঁরা দেশেও ফিরে যেতে পারবে না আর এখনি। ভিসার জন্য অ্যাপ্লিকেশনে তাঁরা বাংলাদেশে ভালো চাকরি বা ব্যবসাবাণিজ্য, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা, ভালো ট্রাভেল হিস্ট্রি ইত্যাদি দেখিয়েছে এখন কানাডায় আসার পরে অন্য কথা বলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার ফলে অনেকেরই এই রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলায় হেরে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। যদি হেরেই যায় শেষ পর্যন্ত তাঁদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। সেই আইন ও ইতিমধ্যে কানাডা সরকার পাশ করে নিয়েছে। আশ্রয় প্রার্থী কাউকে যদি মনে করে যে সে এদেশের জন্য হুমকি তাহলে তার জেল জরিমানাও হবে। আপনি জানেন কি? কানাডায় আসা যত সহজ টিকে থাকা তত সহজ না। তাহলে কেন আসবেন? কী ভিসায় আসবেন? কিসের জন্য আসবেন? একটু ভেবে চিন্তে আসবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃক্ষরোপণ
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টি নামুক