সুকুমার শিশু পাঠাগার

সুকুমার বড়ুয়া | বুধবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

‘‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’’অর্থাৎ শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এই আপ্তবাক্যটি ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া মর্মে মর্মে ধারণ করেই নিজ জন্মভূমির বাস্তুভিটাতে একটি পাঠাগার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন দীর্ঘদিন থেকে। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে আমি বিনাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে রত ছিলাম। তখন একদিন আমাকে ঢাকা থেকে ফোনে বিনাজুরীতে একটি শিশু পাঠাগার গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনার কথা জানালেন এবং বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ করলেন। তাঁর এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি রাউজানের সাংসদ জনাব এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং আমার সার্বিক তত্ত্বাবধানে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাঠাগার নির্মাণের কাজ ২০১৫ সালে শুরু করে ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ ইং তারিখে শিশু পাঠাগার উদ্বোধনের মাধ্যমে কবির স্বপ্ন বাস্তবায়িত করি।

আবহমান গ্রাম বাংলার আলো বাতাসে বিনাজুরীর পল্লী মায়ের কোলে জন্ম নেয়া একুশে পদক প্রাপ্ত সুকুমার বড়ুয়া একজন ছড়ার রূপকার ও প্রতিভাবান কবি। তাই বাংলার ছড়াসাহিত্যে তিনি ছড়া সম্রাট হিসেবে খ্যাত। তাঁর কবিতায় আবেগময়ী সুর ও ছন্দের যে আলপনা তা প্রতিটি বাঙালির অন্তরকে জয় করেছে। নাগরিক ও পল্লী জীবনের নানা ঘাতপ্রতিঘাত ও নানা ভাবনার অপূর্ব মাধুর্যে ভরপুর তাঁর কবিতার প্রতিটি ছন্দ। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডী পাড় না হয়েও তাঁর কবিতার ভাব, ভাষা, শব্দচয়ন ও কবিত্বশক্তি পাঠককে মুগ্ধ করেছে। তিনি দুঃখদারিদ্র, বঞ্চনা ও বিড়ম্বনাকে জয় করে শৈশবকালের স্মৃতি বিজড়িত বিনাজুরী গ্রামের কচিকাঁচা শিশুদেরকে পাঠাগার সঙ্গী করার প্রত্যয়ে জীবন সায়াহ্নে আনন্দধারায় পৈত্রিক নিবাসে বাকী জীবন অতিবাহিত করার স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের প্রতি তাঁর মায়ামমতা ও নাড়ির টান বিনাজুরীবাসী আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবে।

পাঠাগার হলো শিশুযুববৃদ্ধ সব বয়সের নানা ধরনের বইয়ের সংগ্রহশালা। পাঠাগারে সঞ্চিত থাকে বিভিন্ন লেখক ও গবেষকের যুগযুগান্তরের চিন্তাচেতনা, ধ্যানধারনার অমূল্য গ্রন্থাবলি। সর্বস্তরের মানুষের কাছে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয় বলে এই গ্রন্থাগারকে বলা হয় ‘জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়’। একটি দেশ ও জাতির উন্নত মননশীলতা গড়তে হলে পাঠাগারের ভূমিকা অপরিসীম।

মানুষের শরীরে রোগমুক্তির জন্য যেমন প্রয়োজন হাসপাতাল; তেমনি মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পাঠাগার। ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া নিজ জন্মভূমিকে ভালোবেসে বিনাজুরী গ্রামকে উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে তোলার সৎ ইচ্ছা পোষণ করে এই শিশু পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে দেশ এগিয়ে গেলেও বিনাজুরী গ্রাম এখনো পশ্চাদপৎ। আত্মসামাজিক উন্নত না থাকায় মৌলিক চাহিদা মেটাতে যেখানে হিমসিম খায়; সেখানে বই কিনে পড়া কয়জনের ভাগ্যে জুটে। তদুপরি স্কুল ছুটির পর এলাকার ছাত্রছাত্রীরা অবসর সময়টা আড্ডা ও কুসঙ্গীদের সাথে গল্পগুজব করে কাটিয়ে দেয়। ফলে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই ছড়া সম্রাট সুকুমার বড়ুয়া শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষে শিশুবান্ধব সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি পাঠাগারের ব্যবস্থা করে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। তাঁর এ প্রচেষ্টায় নতুন প্রজন্মরা একদিন উচ্চ শিক্ষা লাভ করে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে এবং কবির স্বপ্নকে স্বার্থক করবেএ প্রত্যাশা রাখি।

লেখক : গ্রন্থকার, রাউজানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সাবেক চেয়ারম্যান, বিনাজুরী ইউনিয়ন পরিষদ ও সভাপতি, আওয়ামী লীগ বিনাজুরী ইউনিয়ন পরিষদ, রাউজান, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমায়ের আদরই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে