ফখরুল সাহেব, খসরু সাহেব, দেখে যান জনপ্রিয়তা কাকে বলে

পলোগ্রাউন্ডে কাদের

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের দিবাস্বপ্ন ভুলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলুন। গতকাল বিকালে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে? খেলা হবে। বীর চট্টলা তৈরি। প্রস্তুত আছেন (সমাবেশে আগতদের উদ্দেশে)? খেলা হবে। দেখে যান ফখরুল (বিএনপি মহাসচিব) সাহেব, আমীর খসরু সাহেব, এখানে (পলোগ্রাউন্ড মাঠ) দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা বলেছেন। আজকে আটটা সমাবেশের সমান সমান লোক হয়েছে। পলোগ্রাউন্ড মাঠে শেখ হাসিনার জনসভায় যত লোক তার বেশি বাইরে আছে। পুরো চট্টগ্রাম মিছিলের নগরী হয়েছে। মহাসমাবেশ নয়, এ মহাসমুদ্র। কথা ঠিক? কর্ণফুলীর সব ঢেউ আজ পলোগ্রাউন্ডে। বঙ্গোপসাগরের সব ঢেউ আজ চট্টগ্রাম শহরে। দেখে যান জনপ্রিয়তা কাকে বলে। ফখরুল সাহেবকে বলব, কান পেতে মহাসাগরের গর্জন শুনুন। আপনি (ফখরুল) শুনতে না পেলে আমীর খসরু, নোমান (আবদুল্লাহ আল নোমান) ও মীর নাছির সাহেবকে বলব, আপনারা একটু দেখুন, চট্টগ্রাম শহরে আজ কি অবস্থা।

বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ফখরুল বলেন সরকারের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু সরকারের ঘুম নষ্ট হয়নি। ঘুম তো আসলে নষ্ট হয়েছে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশের মানুষের জন্য, মানুষকে বাঁচানোর জন্য, গরিব ও দুঃখী মানুষকে বাঁচানোর জন্য শেখ হাসিনাকে রাত জাগতে হয়।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে মারতে এখনো চক্রান্ত হচ্ছে। এর ইতিহাস আমরা জানি। বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচনে হারানো যাবে না। সেজন্য জিয়াউর রহমান সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন। তা না হলে আজ তাদের বেঁচে থাকার কথা ছিল না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনকে বাঁচাতে হলে ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই। খেলা তো হবেই। ডিসেম্বরে খেলা হবে।

বিএনপির সমাবেশের প্রতি ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, আরে, ছাত্রলীগের সম্মেলন নেত্রী ছয় তারিখে নিয়ে এসেছেন। পরিবহনকে বলে দিয়েছেন নো ধর্মঘট। এরপরও এক সপ্তাহ আগে থেকে কাঁথা, বিছানা-বালিশ, লোটা-কম্বল ও মশার কয়েল নিয়ে তাঁবু খাটিয়ে শুয়ে আছে।

তিনি বলেন, দুবাই ও লন্ডনের টাকা ফখরুলের কাছে আসে। টাকার বস্তা নিয়ে সমাবেশ করতে যায়। রাজশাহীতে গেছে, কত লোক হয়েছে? ১০ হাজার লোক হলেও বলে লাখ লাখ। এ হলো বিএনপি। তিনি বলেন, যারা দেশের শতসহস্র মায়ের বুক খালি করেছে, যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দিয়েছে, যারা আমাদের নেত্রীকে টার্গেট করে ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ড করেছে, তাদের নাম বিএনপি-বাংলাদেশ নালিশ পার্টি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বড় লোকের বাড়ির সামনে লেখা থাকে, কুকুর থেকে সাবধান। এখন বাংলার মানুষের মুখে মুখে হয়েছে তারেক (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) থেকে সাবধান।

ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র ও ভোটের কথা বলে। তাদের লজ্জা করে না? এই বিএনপিই রাতের অন্ধকারে ভোট চুরি করেছিল, হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে ৯৯ পার্সেন্ট ভোট নিয়ে নিজেদের নির্বাচিত করেছিল। জিয়া, বিএনপি, খালেদা, এরশাদ মিলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বন্দি করেছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই বন্দি গণতন্ত্রকে মুক্ত করে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে বিএনপি তর্জন-গর্জন দিচ্ছে। মির্জা ফখরুল সাহেবকে পরিষ্কার বলতে চাই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটলে তার পরিণতি ভালো হবে না। ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার জন্য মির্জা ফখরুলদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কিন্তু বাঁকা করা হবে।

শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আজকের জনসভা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে আবার জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে। শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি বলেন, একটি অশুভ শক্তি বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না, নির্বাচন করতে দেবে না। এই বাংলাদেশের জনগণ কোনো অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতার মসনদে দেখতে চায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ।

১০ ডিসেম্বর বুড়িগঙ্গায় নিক্ষিপ্ত হবে বিএনপি : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মায়া বলেন, জিয়ার পরিবার খুনির পরিবার। জিয়ার পরিবারের হাত রক্তে রঞ্জিত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনার মূল নায়ক জিয়া। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, বিএনপি নাকি ১০ ডিসেম্বর ঢাকা দখল করবে। বলে দিতে চাই, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা হবে বাংলার মানুষের। আমরা রাজপথে থাকব সেদিন। বিএনপি বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ হবে।

অন্যান্য : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। চট্টগ্রামবাসী রুখে দিয়েছেন সেদিন। প্রধানমন্ত্রী জনগণের পাশে আছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত পাকিস্তানের মতাদর্শে বিশ্বাসী। তারা দেশের উন্নতি বিশ্বাস করে না। দেশের অগ্রগতি তাদের মনে জ্বালা ধরায়। যার কারণে তারা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বারবার ষড়যন্ত্র করছে।

যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে বলেন, স্বপ্ন দেখিয়ে বাস্তবায়নের যোগ্যতা একমাত্র আওয়ামী লীগের। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। গাড়ি ভাঙচুর করতে সহজ হবে বলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাদ দিয়ে পল্টনে সমাবেশ করতে চায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধতোঁয়ারার লাই আঁর পেট পুরের