নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে

মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে কেন জিয়ার আমলে নির্বিচারে হত্যার তদন্ত হওয়া উচিত

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘নতুন নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি করবেন তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করবে। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন ২০২৩ সাল শেষে ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরকে ‘নির্বিচারে হত্যার’ ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে নিজের মনোভাব তুলে ধরেন তিনি।
একজন ভুক্তভোগীর কথা তুলে ধরে একজন সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন রেখেছিলেন, সেসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো কমিশন গঠনের উদ্যোগ সরকার নেবে কিনা। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ৭৭ সালে তখন ক্যুর নামে, বিশেষ করে বিমানবাহিনীর ৫৬২ জন অফিসারসহ বহু লোক সে সময় মারা গেছে, হত্যা করা হয়েছে। এর মাঝে আরও কয়েকটি ক্যু হয়, সেটা নিয়ে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি বিমান ও সামরিক বাহিনীর অফিসারকে মারা হয়। তো আমরা দেখি, বিষয়টা নিয়ে যেহেতু দাবি উঠছে, আমাদের নিশ্চয় এটা নিয়ে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এজন্য ভালো জনমতও সৃষ্টি হওয়া উচিত। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী, বিএনপি, ই-কমার্স ও বাংলাদেশ বিমান নিয়ে কথা বলেন।
জিয়ার আমলের হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে স্বজনহারাদের পরিবার। তদন্ত কমিশন নিয়ে প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, সেই সময়ে, পঁচাত্তরের পর এই বাংলাদেশে বারবার ক্যু হয়েছে। এবং এই ক্যুর নামে শুধু এয়ারফোর্সের অফিসার বা সৈনিক-কর্মচারীই না, সেনাবাহিনীরও বহুজনকে হত্যা করা হয়েছে। এবং আপনারা যদি বিভিন্ন জেলখানাগুলিতে খোঁজ করেন যে, কোন জেলে কতজনকে এভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাহলে দেখবেন এই রকম হাজার হাজার মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদেরকে ওই সময়ে হত্যা করা হয়েছে, গুম করে ফেলায় তাদের পরিবারের সদস্যরা লাশও পায়নি। তারা যে এভাবে ‘হারিয়ে গেল’ তারও কোনো জবাবদিহি হয়নি। এটা একটা আশার কথা যে, আজকে এত বছর পর সবার এই চেতনাটা এসছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এতকাল সবাই কেন এটা ধরে ছিল?
জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য এসব ঘটিয়েছিলেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা তো জানা কথা। এবং একের পর এক শুধু সেনাবাহিনীতে তো না, আমাদের আওয়ামী লীগসহ বহু নেতাকর্মীকেও তো হত্যা করেছে, গুম করে দিয়েছে। মনে হয় যেন তাকে এমন একটা ফেরেশতার মতো বানিয়ে দেওয়া হলো, শেষকালে স্বাধীনতার ঘোষকও বানিয়ে ফেলা হলো। সেটা নিয়ে তেমন কেন কেউ কথা বলেনি, এটা আমার বড় প্রশ্ন।
বিএনপিও যে ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার করেনি, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউটিনির বিচার করে ১১ জন সামরিক অফিসারকে যে ফাঁসি দিল, সেটাও কিন্তু খুব অন্যায়ভাবে; কারণ এখানে অনেকে জানতই না, কিন্তু রাতারাতি একটা ক্যামেরা ট্রায়াল করেই তাদের ফাঁসি দিয়ে দিল। আমরা কিন্তু তখন তার প্রতিবাদ করেছিলাম, যে না এটা তদন্ত হওয়া দরকার। এই মিউটিনিটা কেন হলো, কারা করল, কারা জড়িত, তারপর কাদের ফাঁসি দিচ্ছি তা কিন্তু করেনি।
কিছু সংস্থা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী করে রাখতেই আগ্রহী : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও আশাব্যাঞ্জক সাড়া না পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো কোনো সংস্থা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী করে রাখতেই বেশি আগ্রহী বলে তার মনে হয়েছে। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, মনে হয় রিফিউজি পালাটা একটা ব্যবসা কোনো কোনো সংস্থার জন্য। রিফিউজি না থাকলে তাদের চাকরিই থাকবে না। এটা হলো আসল কথা।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকাণ্ডে মনে হয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়, রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের মনে হয় লাভই হয়। অনেক প্রস্তাব আসে রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে অনেক কিছু করে দিতে চায়। আমি সোজা বলে দিই, যান মিয়ানমারে, ওখানে ঘর করেন, ইশকুল করেন, এখানে করা লাগবে না। আমার কাছে যেটা মনে হয়, (তাদের কাছে) সব কিছুই যেন একটা ব্যবসা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংস্থা আছে, যারা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বরাবরই ভালো সাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সেই আগ্রহ দেখায় না। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার এই চাপে কঙবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, সে কথা জাতিসংঘে তুলে ধরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে নানা ধরনের অসঙ্গতি চলছে, নারী পাচার, শিশু পাচার, সবচেয়ে বড় ড্রাগ… এই ড্রাগ পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা (রোহিঙ্গারা)। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। আমরা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে বলছি, এটা সেখানে হচ্ছে, আরও হবে, যদি প্রত্যাবাসন না হয়।
মানুষ বিএনপিকে কেন ভোট দেবে : জনগণ ভোট দিতে পারছে না বলে যারা অভিযোগ করছেন, তাদেরকে কে ভোট দেবে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিএনপি জানে যে তাদের আর কোনো সম্ভাবনা নেই। সে কারণেই তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। একটা দল কীভাবে জিতবে, তার নেতৃত্বটা কোথায়? একজন এতিমের টাকা চুরি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন গ্রেনেড হামলার মামলায় কারাদণ্ড নিয়ে দেশান্তরী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জনগণ কোন ভরসায় ওই দলকে ভোট দেবে?
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ কখন ভোট দেয়? মানুষ দেখে ওই দলকে ভোট দিলে ক্ষমতায় কে যাবে। তারা (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) তো ইলেকশনও করতে পারবে না। বিএনপি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জানে যে তাদের কোনো সম্ভাবনা নাই। সম্ভাবনা যখন নাই, যেভাবে হোক নির্বাচনটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা, অর্থাৎ গণতন্ত্রের যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, সেটা নষ্ট করা।
ই-কমার্সে প্রতারণার শাস্তি অবশ্যই হবে : মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে যারা ই-কমার্সসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের টাকা ফিরে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর জন্য যে প্রতারণাটা করে, এটার শাস্তি অবশ্যই হবে। আমরা বসে নেই, সাথে সাথে এদেরকে ধরা হয়েছে। একবার যখন ধরা হয়েছে তখন তারা টাকাগুলো নিয়ে কোথায় রাখল, কী করল, কী সম্পদ বানাল সেটাও কিন্তু খুঁজে বের করা হবে।
বিমান প্রসঙ্গ : ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনার নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার যে সমালোচনা বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল করছে, তার জবাবও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য যে, করোনার কারণে অনেক জায়গায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বিমানগুলিকে প্রতিনিয়ত বসে থাকতে হয়, আর মেনটেইন্যান্সেরও একটা খরচা আছে। পড়ে থাকলেও কিন্তু ইঞ্জিন চালু রাখা, এটাকে ফ্লাই করানো এর পেছনে কিন্তু একটা খরচ হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু যাবই, তখন অন্য এয়ারলাইন্সকে টাকা দিয়ে লাভ কি? নিজেদেরটাই নিয়ে যাই। সেটার সাথে সাথে এটা বোয়িং, অ্যামেরিকান বিমান, জেএফকেতে নামবে সেটাও আমাদের জন্য একটা আনন্দের বিষয়। এর মধ্যে ফুয়েল নেওয়ার জন্য আমরা ফিনল্যান্ডে অবতরণ করি। ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট চালানোর যে স্লট ছিল, সেটা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বজুড়ে ফেসবুক সেবায় বিভ্রাট
পরবর্তী নিবন্ধআয়ত্তে এলো ‘টেকনিক’