নারী ফুটবল দলের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক

লালন কান্তি দাশ | বুধবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

আবারো সাফল্য অর্জনের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠল সারাদেশ। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২২ এর শিরোপা জিতে দেশবাসীকে খুশির এ উপলক্ষ এনে দিল জাতীয় নারী ফুটবল দল। সত্যি বলতে টিভি পর্দায় বাংলাদেশের খেলা দেখে অনেকে চমকে গিয়েছিল এটা ভেবে যে, হিমালয়ের দেশ নেপালের সবুজ মাঠে প্রতিপক্ষের উপর প্রতিনিয়ত আধিক্য বিস্তার করে যে দলটি খেলছে তা বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল! কী অসাধারণ ফুটবল শৈলী! প্রতিটি খেলায় নারী ফুটবলারদের গতি, পাসিং, ড্রিবলিং, রক্ষণভাগের দৃঢ়তা, আক্রমণের তীব্রতা, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, দলীয় কৌশল ও সমন্বয় ছাড়াও দেশের সাফল্যের জন্য নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার লড়াকু মানসিকতা সবার মন জয় করেছে। পুরো টুর্নামেন্টে লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল প্রতিটি দলের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে বাংলাদেশের জয়লাভ। কয়েক বছর আগের নারী ফুটবল দলের সাথে এই দলটির মানের পার্থক্যে ছিল যোজন ব্যবধান। চ্যাম্পিয়ন হয়ে নারী ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পাশাপাশি জানান দিল নিজেদের ফুটবল সামর্থ্যের। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও প্রশিক্ষণ পেলে আন্তজার্তিক ক্রীড়াঙ্গনে নারীরাও যে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে পারে তা আবারো প্রমাণিত হল। সামাজিক বঞ্চনা, প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে ফুটবলার হওয়া এসব নারীরা এখন দেশের গর্ব ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তারা এখন অসংখ্য নারীদের কাছে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। এ সাফল্য যেন খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রম থেকে নারীদের বিচ্ছিন্ন ও বঞ্চিত করে রাখার মানসিকতার বিরুদ্ধে চপেটাঘাত! নারীদের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে সরকার ও ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। এ কথা সত্যি যে, বাংলাদেশের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রাণী সরকার, রুপনা চাকমাদের মত অসংখ্য নারী প্রতিভা। প্রয়োজন শুধু সঠিক পদ্ধতিতে তাদের খুঁজে বের করে আনা। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব নারী ফুটবলাররা সঠিক পরিচর্যা পেলে ফুটবলে আরো জাগরণ ও গতি আসবে নিশ্চিত। দেশ-বিদেশে উন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক নিরাপত্তা ফুটবল খেলার প্রতি নারীদের আগ্রহ তৈরি এবং তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে রাখতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সাফল্যের এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে সারাদেশে নিয়মিত বয়সভিত্তিক ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের পাশাপাশি পেশাদার নারী ফুটবলার তৈরির অবকাঠামো নির্মাণ করা খুবই জরুরি। এজন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনার। শক্তিশালী জাতীয় নারী ফুটবল দল তৈরি করে নিয়মিত আন্তজার্তিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করলে সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হবার পাশাপাশি দেশের ফুটবল ইতিহাসে রচিত হবে গৌরবগাথা অনেক স্বর্ণালী অধ্যায়ের – এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাফ-ফুটবল জয়ী একেক জন নারী বাংলাদেশের এক একটা মাইলস্টোন
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা দর্শনই শেখ হাসিনার দর্শন