নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় নিখোঁজ ২ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার

এখনো সন্ধান মেলেনি একজনের

মীরসরাই প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২১ জুন, ২০২২ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছরা ইউনিয়নের দৃষ্টিনন্দন নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ তিন ছাত্রের দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার বিকেলে ঘটনার পর রাতে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্তের (১৯) মরদেহ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ থাকে দুই সহোদর মাসুদ আহম্মেদ তানভীর (২৪) ও তৌফিক আহম্মেদ তারেক (১৯)। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টা নাগাদ ইউএসটিসির স্নাতকের ছাত্র নিখোঁজ তানভীরের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তার ছোটভাই কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র তৌফিক আহম্মেদ তারেকের সন্ধান এখনো মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে একসাথে দুই সহোদর তাদের এক বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে যায় মীরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায়। রোববার বিকেলে তারা তিনজনই নিখোঁজ হলে দিবাগত রাতে ঝর্ণা থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে নিখোঁজ দুই সহোদরের বড়জন তানভীরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি তানভীরের ছোট ভাই তারেকের। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকালে তৌফিক আহম্মেদ তারেক, মাসুদ আহম্মেদ তানভীর ও ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্ত চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে বের হয়। তারা ঝর্ণা এলাকার একটি টি-স্টলে নিজেদের ব্যাগ রেখে ঝর্ণার চূড়ায় ওঠার প্রস্তুতি নেয়। দুপুর নাগাদ তারা ঝর্ণার জলের পাশ দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টাকালে যেকোনো একজন পা পিছলে পড়ে গেলে তাকে ধরতে গিয়ে অন্য দুজনও জলের ধারায় হারিয়ে যায়। ঝর্ণার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মীরসরাই থানা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে অভিযানে নেমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৮টার দিকে নিখোঁজ ইশতিয়াকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত ইশতিয়াক চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর বি-ব্লকের মোহাম্মদ জাকারিয়ার ছেলে।

মীরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন জানান, নিহত ইশতিয়াকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজ দুই সহোদর তানভীর ও তারেকের মধ্যে তানভীরের মরদেহ একটি ছড়া থেকে সোমবার বিকেল ৪টায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তানভীরের ছোট ভাই কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র তারেকের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। তারা চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকার বি ব্লকের বাসিন্দা। তাদের গ্রামের বাড়ি মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ারা গ্রামে। নিখোঁজ তারেককে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল কাজ করছে। ঘটনাস্থল তদন্ত করা ওসি কবির হোসেন, এসআই সৈয়দ হোসেন ও রাজিব তালুকদার জানান, ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের দরুন অবশিষ্ট মৃতদেহ ঝর্ণার জলে, মাটিতে বা ঝোঁপঝাঁড়ের কোথাও আটকা পড়ে আছে।

এদিকে নিখোঁজ তারেককে উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে মীরসরাই ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ডুবুরি দল। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঝর্ণা এলাকায় নিখোঁজ একজনের একটি জুতা কুড়িয়ে পেয়েছে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত তারেকের সন্ধান পায়নি ডুবুরি দল।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ডুবরী দলের প্রধান মোহাম্মদ মানিক জানান, সোমবার বেলা ১২টা থেকে আমরা নিখোঁজ দুই পর্যটককে ঝর্ণার কূপ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিকেল ৪টার দিকে তানভীর নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কূপের গভীরতা অনেক বেশি। ছড়ার মধ্যে পানির স্রোতও রয়েছে।

নিহত তানভীর ও নিখোঁজ তারেকের মামা মো. তৌহিদুল ইসলাম সুমন জানান, নিহত তানভীর চট্টগ্রাম নগরীর ইউএসটিসির স্নাতকের ছাত্র এবং নিখোঁজ তারেক চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। নিহত ইশতিয়াক তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে চট্টগ্রাম ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। নিহতের স্বজন মেহেদী হাসান মাহি বলেন, তানভির এবং তৌফিক মা-বাবার দুটিই সন্তান। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর পর আর কোনো সন্তান রইল না তাদের।

রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, মীরসরাই থানা আঙ্গিনায় নির্বাক দুই ভাইয়ের মা কামরুন্নেছা ও প্রবাসফেরত প্যারালাইজড বাবা সাহাবুদ্দিন বড় ছেলের মৃতদেহ নিয়ে বসে আছে। ছোট ছেলের হদিশ নেই এখনো। মা-বাবার পাথরসম নির্লিপ্ততা দেখে আশেপাশে থাকা স্বজনরাও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু ধর্ষণ মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধবাসের ভেতর গৃহবধূকে দল বেঁধে ধর্ষণ