দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে

শান্তিচুক্তি করেছি বলেই পাহাড়ে উন্নয়ন হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী ।। পটিয়ার কালারপোল, চন্দনাইশের বরকল, বান্দরবানের জামছড়ি ও খাগড়াছড়িতে ৪২টিসহ ১০০ সেতু উদ্বোধন

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে গতকাল খাগড়াছড়িতে ৪২টি, পটিয়ায় কালারপোল অহিদিয়া, চন্দনাইশে বরকল ও বান্দরবানে জামছড়ি সেতুসহ ১০০ সেতু উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি এ উদ্বোধনকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা ১০০টি সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ৮৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর বলেন, সেতুগুলো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।

বাসস জানায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করা সহজ হবে, পণ্য পরিবহন এবং বিপণন দ্রুত ও সহজ হবে। সেতুগুলো রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে, কারণ, এগুলো ৩৩টি রুট ফেরি পরিষেবা থেকে মুক্ত করেছে, যা সড়ক যোগাযোগকে অবাধ, দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। আমরা শান্তি চুক্তির করার ফলে ওই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থারও আমরা উন্নতি করে দিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এক সাথে এতো সেতুর উদ্বোধন এটাই প্রথম। বেইলি সেতুর বদলে পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় দুর্গম পাহাড়ের অর্থনীতি ও পর্যটন খাত আরো বিকশিত হবে। সেতু উদ্বোধন হওয়ায় মানুষ এখন থেকে সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। সেতু নির্মিত হওয়ায় পণ্য বাজারজাতকরণে সুবিধা হবে এবং উৎপাদন বাড়বে। সেতু নির্মিত হওয়ায় উন্নয়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। অনুষ্ঠানে সেতুর ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী এসময় আরো বলেন, এক সময় পার্বত্য এলাকায় মোবাইল নেটওর্য়াক ছিলনা। আমরা সেটারও ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এসময় প্রধানমন্ত্রী সেতুর উপকারভোগী স্থানীয় জুমচাষী অঞ্জলী ত্রিপুরার সাথে ভিডিও কনফারান্সের মাধ্যমে কথা বলেন। এর আগে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় ঐতিহ্যবাহী মূয়র নৃত্য উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৬টি, সিলেট বিভাগে ১৭টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে সাতটি, ময়মনসিংহ বিভাগে ছয়টি এবং রংপুর বিভাগে তিনটি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত প্রায় ১৪ বছরে আমরা বিভিন্ন মহাসড়কে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ এবং ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেছি। তাছাড়া, বহু সড়ককে তাঁর সরকার মহাসড়কে উন্নীত করেছে যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়। তিনি বলেন, সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণ কাজ সমাপ্তকরণসহ খুলনা, পাকশী ও আশুগঞ্জে তিনটি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করা হয়- যা মহাসড়ক নেটওয়ার্ককে নিরবচ্ছিন্ন্ন করে তোলে। তাঁর সরকার ’৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসেই সে সময়ে ১৯ হাজার বৃহৎ, মাঝারি, ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করে। এসময় গণভবনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সুনামগঞ্জ, বরিশাল, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলা প্রান্ত যুক্ত ছিল।

সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেনকে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা এবং বিশ্বে খাদ্য সংকট সৃষ্টির যে আশংকা করা হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে সকলকে সাশ্রয়ী এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যায়ী হবার পাশাপাশি সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোতে তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রত্যেকটা এলাকায় আপনারা যত পারবেন খাদ্য উৎপাদন করবেন। তরি-তরকারি যেটা পারেন উৎপাদন করবেন, হাঁস মুরগী ছাগল, ভেড়া- যেটা পারেন সেটা পালন করতে হবে। অর্থাৎ নিজেদের খাদ্য সংস্থান নিজেদের করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা, বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে এর ধাক্কা যেন বাংলাদেশকে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করতে না পারে।

পটিয়া প্রতিনিধি জানান, এদিকে গতকাল সকাল ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পটিয়া কালারপোল অহিদিয়া সেতু উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সেতু সংলগ্ন এলাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগমে জনসমাবেশে রূপ নেয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সঞ্চালকের বক্তব্য প্রদানকালে পটিয়ায় বিগত চৌদ্দ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে বলে মন্তব্য করলে প্রধানমন্ত্রী অপরপ্রান্ত থেকে বলেন, সামশুকে (হুইপ) আমি সব দিয়েছি। এ সময় সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে। অপরদিকে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য প্রদানকালে তিনি পটিয়া কালারপোল সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সবচেয়ে বড় আয়োজন ও সমাবেশ বলে মন্তব্য করেন।

এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবের রহমান, ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুল মামুন, পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল, সহকারী কমিশনার (ভুমি) রাকিবুল ইসলাম, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তিমির বরণ চৌধুরী, জেলা আ. লীগ নেতা বিজন চক্রবর্তী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ ছাড়াও বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলর, উপজেলা আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন ।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের আওতাধীন নব নির্মিত ৪২ টি পাকা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবন থেকে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এক যোগে এসব সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং, খাগড়াছড়ির স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সাংসদ বাসন্তী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো.নাইমুল হক, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী প্রমুখ। খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ জানায়, ৪২ সেতুর মধ্যে খাগড়াছড়ি সদরে ১০টি, পানছড়িতে ৯টি, দীঘিনালায় ৫টি, মহালছড়িতে ৫টি, মাটিরাঙায় ৩টি, গুইমারায় ১টি, রামগড়ে ৩টি, লক্ষ্মীছড়িতে ৫টি ও রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ১টি রয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এসব সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, অপরদিকে চন্দনাইশের বহুল প্রত্যাশিত বরকল সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালী সেতুটির উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বরকল সেতু সংলগ্ন এলাকায় দোহাজারী সড়ক বিভাগের উদ্যোগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম- ১৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল জব্বার চৌধুরী, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরীন আক্তার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দীন, চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, দক্ষিণ জেলা আ.লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান শিবলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ রাফিজ বিন মনজুর, বরকল ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম চৌধুরী, কার্য-সহকারী মো. আবদুন নুর, ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি টংকাবতী-বারআউলিয়া অভ্যন্তরীণ সড়কে জামছড়ি সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে ২০২০-২১ অর্থবছরে পিএমপি প্রকল্পের আওতায় বার আউলিয়া-টংকাবতী মহাসড়কে জামছড়ি সেতুটি ৫ কোটি ৯০ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুদ হারের সীমা তুলে দেওয়ার ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধএকদিনে কক্সবাজারের বাইরে গেল ৭০ মেট্রিক টন