প্রথমবারেই বাঘা শরীফের বাজিমাত

জব্বারের বলী খেলা

নজরুল ইসলাম | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

শত বছরের ঐতিহ্য জব্বারের বলী খেলা। এই বলী খেলায় অংশ নেওয়া বা চ্যাম্পিয়ন হওয়া যেকোনো বলীর জন্য বড় একটি স্বপ্ন। গত ১১৪ আসর ধরে অনেকেই সে স্বপ্ন পূরণ করেছেন আবার অনেকের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। কুমিল্লার শাহজালাল বলীর সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। এবারেও এসেছিলেন। নামও লিখিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন। আর তার জায়গায় খেলতে দিলেন তারই শিষ্য বাঘা শরীফকে। গুরুর ত্যাগের মর্যাদা অবশ্য দিয়েছেন সেই বাঘা শরীফ। প্রথমবারের মতো জব্বারের বলী খেলার মত বড় আসরে অংশ নিয়ে বাজিমাত করলেন বাঘা শরীফ।

জিতলেন জব্বারের বলী খেলার শিরোপা। ফাইনাল খেলতে নামার আগে গুরুর কাছ থেকে দোয়া নিয়েছিলেন বাঘা শরীফ। সে সাথে গুরুর ভূয়সী প্রশংসাও করলেন। আর রিংয়ে নেমে গড়লেন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো জব্বারের বলী খেলায় অংশ নিয়ে গুরুর ত্যাগের মূল্য যেমন দিয়েছেন তেমনি প্রথমবারের মতো খেলতে এসে শিরোপা জিতে বাজিমাতও করলেন বাঘা শরীফ। আর শিরোপাও রয়ে গেল সেই কুমিল্লাতে। যদিও ফাইনালটা ছিল অল কুমিল্লার। কারণ ফাইনালে বাঘা শরীফের প্রতিপক্ষ ছিল তারই জেলার বাসিন্দা রাশেদ। দু জন লড়াই করেছেন প্রায় ১১ মিনিট। এক পর্যায়ে রাশেদ আত্মসমর্পণ করলে বাঘা শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আর তাতে ইতিহাসের অংশও হয়ে যান এই বাঘা শরীফ। দু হাত উচিয়ে জানিয়ে দিলেন আগামী এক বছরের জন্য জব্বারের বলী খেলার সিংহাসন আমার দখলে। আমিই রাজা।

এর আগে গত আসরের রানার আপ চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবনও এসেছিলেন এবারের আসরে খেলতে। তিনিও নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে সরে দাঁড়ান নিজে থেকে। ফলে আগের আসরে কুমিল্লার শহাজালাল বলীর কাছে হারের প্রতিশোধটা নেওয়া হয়নি তার। ফাইনালে খেলে দুজন নতুন বলী। আর জব্বারের বলী খেলা পায় নতুন চ্যাম্পিয়ন। এর আগে সেমি ফাইনালে বাঘা শরীফ হারিয়েছেন রাসলেকে। আরেক সেমিফাইনালে রাশেদ হারিয়েছেন সৃজন চাকমাকে। যদিও তার আগে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে বাঘা শরীফ পরাজিত করেন নুর মোহাম্মদকে। দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে বাবু ধন পরাজিত করেন রাশেদকে। তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে রাসেল হারিয়েছেন লিংকনকে। আর শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে রুবেলকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেন রাশেদ। কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালেও তেমন লড়াই হয়নি। বলা যায় একতরফা খেলেই জয় পেয়েছে বিজয়ীরা। যার পুনরাবৃত্তি ঘটে ফাইনালেও। দীর্ঘ দিন পর জব্বারের বলী খেলার ফাইনালে কোন বলী তার প্রতিপেক্ষর সাথে ১১ মিনিট লড়াই করার পর আত্মসমর্পণ করলেন।

জব্বারের বলী খেলার এবারের আসরে একশ জন বলী নাম তালিকাভুক্ত করেছিলেন। তাদের মধ্য থেকে ৭০ জনকে প্রথম রাউন্ডে খেলা সুযোগ দেওয়া হয়। আগেই চারজনকে বাছাই করা হয় কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য। চারজনকে বাছাই করা হয় প্রথম রাউন্ডে বিজয়ীদের মধ্য থেকে। এরপর চলে চ্যাম্পিয়ন বাউটের লড়াই। আর সেখানে সব বাধা টপকে শেষ হাসি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার বাঘা শরীফের। শারীরিক গঠনে সত্যিকারের বাঘের মতই দেখতে বাঘা শরীফ। যে স্বপ্ন কোন কালেই দেখেননি সে স্বপ্ন পূরণ করে ফিরে গেলেন নিজ বাড়িতে। আর জব্বারের বলী খেলা পেল নতুন রাজা। নতুন চ্যাম্পিয়ন। যাকে আগামী আসরে হারানোর জন্য নিশ্চয়ই বাকিরা নিজেদের প্রস্তুত করবেন।

গতকাল জব্বারের বলী খেলার ১১৫ তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রনালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে পুরষ্কারও বিতরণ করেন। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সিজেকেএস সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবারের জব্বারের বলী খেলার স্পন্সর এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেঙ এবং মঈন এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর।

এসময় উপস্থিত ছিলেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী, উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেন গুপ্ত, বলী খেলা ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, সহ সভাপতি চৌধুরী ফরিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী। এবারের জব্বারের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ পেয়েছেন ট্রফি সহ নগদ ৩০ হাজার টাকা। রানার আপ রাশেদ পেয়েছেন ট্রফি সহ নগদ ২০ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থান অধিকারী সৃজন চাকমা পেয়েছেন ট্রফি সহ নগদ ১০ হাজার টাকা। আর চতুর্থ স্থান অধিকারী রাসেল পেয়েছেন ট্রফি সহ নগদ ৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রথম রাউন্ডে বিজয়ী প্রত্যেকে পেয়েছেন দুই হাজার টাকা এবং একটি ক্রেস্ট। এবারের বলী খেলার প্রধান বিচারক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান। তার সাথে ছিলেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল হোসেন। প্রতিযোগিতার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুদ্ধকে না বলার আহ্বান
পরবর্তী নিবন্ধউত্তাল চুয়েট বন্ধ ঘোষণা