উত্তাল চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

দুটি বাসে আগুন, দিনভর বিক্ষোভের পর রাতে আন্দোলন স্থগিত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বৈঠকে শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সিদ্ধান্ত

রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে চলমান আন্দোলনের চতুর্থ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তারা দুটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এছাড়া চুয়েটের ১২টি বিভাগে তালা ঝুলিয়েছে তারা। এতে অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারী আটকা পড়েন। এছাড়া বিকাল সাড়ে চারটার দিকে চুয়েটের উপাচার্য, উপউপাচার্যের দপ্তরসহ প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এতে ভবনের ভেতরে তারা আটকা পড়েন বলে জানা গেছে। ৩০ মিনিট পর ভিসি কার্যালয়সহ একাডেমিক ভবনের সব তালা খুলে দেয় শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষার্থীরা। এর আগে রাত নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত উপাচার্য ও উপউপাচার্যের সঙ্গে আন্দোলনকারী ২০ শিক্ষার্থী বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এছাড়াও ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত জানান তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বিবৃতিতে বলেন, একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় পাঠানো হবে। ততক্ষণ হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা থাকতে পারবেন। রাত ১১ টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। চুয়েট এলাকার আশেপাশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

এর আগে বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের একাডেমিক কাউন্সিলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন উপউপাচার্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মো. রেজাউল করিম প্রমুখ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সাথে এদিন বিকেল ৫টার মধ্যে ছাত্রদের এবং আজ শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় থাকা শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাসে এবং অন্য একটি বাস ক্যাম্পাসের বাইরে সড়কে নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। চুয়েট বন্ধ ঘোষণার জেরে বিকেল পৌনে পাঁচ টায় সংবাদ সম্মেলন করে হল ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ১০ দফা দাবির প্রেক্ষিতে চুয়েট কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সাথে শিক্ষার্থীরা একমত হননি বলেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন আলোচনায় না বসেই হল ত্যাগের যে নির্দেশ দিয়েছে তা শিক্ষার্থীরা মেনে নেয়নি বলে জানান। এসময় কোনো শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করবেন না বলে ঘোষণা দেন এবং দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান। তারা আরও বলেন, তাদের হলে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তারা এর প্রতিবাদ জানিয়ে চুয়েট বন্ধের ঘোষণা দ্রুত ফিরিয়ে নিতে বলেন। আবারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে চতুর্থ দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। কাপ্তাই সড়কের চুয়েট ক্যাম্পাস এলাকা হেঁটে পাড় হতে দেখা যায় যাত্রীদের।

উল্লেখ্য গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২) ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন (২১) নিহত হন। আহত হন জাকারিয়া হিমু (২১) নামে অন্য একজন শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় মোটরসাইকেলকে বেপরোয়া গতির শাহ আমানত পরিবহনের একটি যাত্রীবাসী বাসের সংঘর্ষ হলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর থেকে টানা চারদিন সড়ক অবরোধ করে দশ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথমবারেই বাঘা শরীফের বাজিমাত
পরবর্তী নিবন্ধ২৬ মামলায় ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা