যুদ্ধকে না বলার আহ্বান

থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক কমিশনের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী

| শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রতি সকল প্রকার আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কারণ টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই সব ধরনের আগ্রাসন এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘নিউ এজেন্ডা ফর পিস’ কে সমর্থন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে থাইল্যান্ডে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে (ইউএনসিসি) এসক্যাপ হলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

তিনি সমস্ত যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজায় হামলা শুধুমাত্র হতাহত বিশেষ করে নারী ও শিশুদের হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, কিন্তু আলোচনা শান্তি আনতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনে যুদ্ধ এবং গণহত্যা চলছে। এটা বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান আনতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পার্বত্য শান্তি চুক্তির কথা উল্লেখ করেন যা জনগণের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল। আমাদের অবশ্যই আলাপআলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বোপরি জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি আমাদের পারস্পরিক সম্মান দেখাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশেষ করে আসিয়ানকে মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, রোহিঙ্গারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে যেন স্থায়ীভাবে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, তাদের সংকটের উৎস মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যতদিন সমাধানটি নাগালের বাইরে থাকবে, ততদিন আঞ্চলিক সংযোগ, একীভূতকরণ এবং সমৃদ্ধির জন্যে আমাদের সকল প্রচেষ্টা একটি অদেখা ধাঁধা দ্বারা চিহ্নিত হতে থাকবে। আসুন সেই ধাঁধাটিকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করি। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশু বাংলাদেশে পালিয়ে গেলে মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়। তিনি বলেন, একটি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে এটি এখন বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে ৪০ হাজার শিশু। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক সেবন ও পাচার, খুন, ছিনতাই রাহাজানির মতো এহেন কর্মকাণ্ডে জড়িত। এতে পর্যটন শহর কঙবাজারের পরিবেশপরিস্থিতির দিন দিন ক্রমাবনতি ঘটছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে। এটি আমাদের অঞ্চলের ভেতরে এবং এর বাইরে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে তার অভিন্ন শত্রু দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ৪১.৫১ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্য ২৫.১ থেকে ৫.৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়াপ্যাসিফিক অঞ্চলকে জলবায়ু সংকট, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং আন্তঃসীমান্ত দূষণ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, ২০২৫ সালের পরেও কপ২৯এ উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যের জন্য আমাদের চাপ দিতে হবে। আমাদের আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা এবং বায়ুর মানের উন্নতিতে সহযোগিতা করতে হবে। ক্রমবর্ধমান চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর জন্য আমাদের সকলকে প্রস্তুত হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আগাম সতর্কতার সক্ষমতার উন্নয়নে আমরা ইউএনএসকাপের সহায়তার প্রশংসা করি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি ও অর্জনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের বেশির ভাগ অর্জনই জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, নিম্ন বদ্বীপ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতায় ব্যাপক বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে তার সরকার পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুষ্ঠু মিশ্রণে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, আমরা একটি বৃত্তাকার এবং নিম্নকার্বনঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ অন্বেষণে আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো। তিনি বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সক্ষমতা গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন সরবরাহের জন্য আমি ইউএনএসকাপকে আমন্ত্রণ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন ট্রান্সএশিয়ান হাইওয়ে এবং রেলওয়ে নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ প্রদান করছে। তিনি বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে আমাদের ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ তার আশপাশের স্থলবেষ্টিত অঞ্চলগুলোকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সকল আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধপ্রথমবারেই বাঘা শরীফের বাজিমাত