সুদ হারের সীমা তুলে দেওয়ার ভাবনা

| মঙ্গলবার , ৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই দেশে ব্যাংক ঋণে সুদ হারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের সীমা তুলে নেওয়ার বিষয়ে নতুন করে পর্যালোচনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ৯ শতাংশের ওই সীমা একবারে তুলে না দিয়ে কোন কোন খাতে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও বিষয়টি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, ৯ শতাংশের সীমা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে, আগেও বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন খাতে সুদহারের ৯ শতাংশের সীমা ঠিক রেখে অন্য কোন কোন খাতে তা বাড়ানো যায়, তা ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে এসএমই ও ব্যক্তি খাতে, অর্থাৎ ভোগ্য পণ্যর বিপরীতে দেওয়া ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া বা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। সুদহারের সীমা তুলে দিলে অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, সে বিষয়টিও পর্যালোচনায় রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক খাতে সুদের হার ঋণে সর্বোচ্চ ৯ ও আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ কার্যকর আছে। ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে সুদহার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর দেশের অর্থনীতির সূচকগুলোতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে তিনবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদহার না বাড়িয়ে কেবল রেপোর সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপ কতটা কাজে লাগছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। সমপ্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক সেমিনারেও সুদ হারের ওই সীমা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

গত ২৭ অগাস্ট বিআইবিএম এর ‘নবম বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্স’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপিক মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মুদ্রাবাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে মুদ্রানীতিতে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়া মানে হল, অর্থ পরিশোধ কমে যাবে ব্যাংকে। যার ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সেদিনও বিআইবিএম প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সুদহার সীমা তুলে দিলে অর্থ খরচ আরও বাড়বে উদ্যোক্তাদের। পাশাপাশি ব্যাংকেরও তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচ বৃদ্ধি পাবে। আমরা উদ্যোক্তাদের কম খরচে ঋণ দিতে চাই। যাতে উৎপাদন খরচ কমে আসে। সরকার যখন ওই সুদহার বেঁধে দেয়, তার আগে ২০২০ সালের মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর পর থেকে মূল্যস্ফীতির পারদ শুধু উপরের দিকেই উঠতে দেখেছে বাংলাদেশে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী এ বছর অগাস্টে এই হার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে যায়। সেপ্টেম্বরে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ হয়। এ অবস্থায় ব্যাংকে টাকা রেখে লোকসান হচ্ছে আমানতাকারীদের, কারণ তারা যে হারে সুদ পাচ্ছেন, মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছিল, তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির উপরে থাকতে হবে আমানতের সুদের হার। কিন্তু বাস্তবে তার কার্যকারিতা নেই। গত সেপ্টেম্বর শেষেও ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৪ শতাংশের ঘরেই ছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মূল্যস্ফীতির এই বাড়তি চাপ সামাল দিতে অর্থনীতিবিদরা ঋণের ৯ শতাংশ সুদ হার তুলে দিয়ে আমানতের সুদহার বাড়ানোর পক্ষে মত দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইমএফ) প্রতিনিধি দলের চলমান সফরের মধ্যে বিষয়টি ফের আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশনাক্ত ও হাসপাতালে নিতে দেরির কারণে মৃত্যু বাড়ছে ডেঙ্গুতে
পরবর্তী নিবন্ধদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে