কালবৈশাখীর তাণ্ডব, বিদ্যুতে ভোগান্তি

নগরে জলাবদ্ধতা, সড়কে উপড়ে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি, দুর্ভোগ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ মে, ২০২৪ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় ও অতি ভারী বর্ষণ দুর্ভোগ বয়ে আনে নাগরিক জীবনে। ঝড়ে নগরের কাজীর দেউড়ি ও জাকির হোসেন রোডসহ কয়েক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এছাড়া এমএইএস কলেজের সামনে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ খুঁটি উপড়ে পড়ে। এছাড়া অন্যান্য জায়গায় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। এছাড়া পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট ও অলিগলি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। এ সময় স্কুলফেরত সন্তানকে নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৯৭ দশমিক মিলিমিটার বৃৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। একই পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আমবাগান আবহাওয়া অফিসও। এছাড়া গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে সেটাকে অতি ভারী বর্ষণ বলা হয়। ওই হিসেবে গতকাল অতি ভারী বর্ষণ হয়ে হয়েছে নগরে।

গতকাল দুপুর ২টার পর থেকে ধীরে ধীরে কালো মেঘে ডেকে যায় নগরের আকাশ। আড়াইটাতিনটার দিকে পুরো শহর রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যায়। যানবাহন চলে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এরপর শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত। তীব্র ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়ে গাছপালা। এর মধ্যে কাজীর দেউড়িতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে তিনটি গাছ উপড়ে পড়ে। এ সময় এক মোটরসাইকেল চালকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাছটি সরিয়ে নেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এদিকে জাকির হোসেন সড়কে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে সড়কের একাংশের গাছ সরিয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা। চান্দগাঁও র‌্যাব অফিসের সামনে দেয়াল ধসে চাপা পড়ে একটি সিএনজি। এতে চালক আহত হন। ঝড়ে নগরের বিভিন্ন কলোনির কাঁচাঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উড়ে যায় বিভিন্ন বাড়ির চাল।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর জানান, জাকির হোসেন রোড, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকা, পাহাড়তলী ও আমিন কলোনি এলাকায় বড় বড় কয়েকটি গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এছাড়া কালুরঘাট, বায়েজিদ, চন্দনপুরা ও নন্দনকান ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গাছ পড়ার খবর পেয়ে সরাতে গেছেন।

এদিকে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে গত রাত ১০টার দিকে আজাদীকে বলেন, কয়েক জায়গায় গাছ পড়েছে, বিদ্যুতের পোল ও ট্রান্সফরমার পড়েছে। এর প্রভাবে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আমরা কাজ করছি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৬০ শতাংশ এবং এখন ৮০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। কিছু জায়গায় গাছ পড়ে থাকায় এবং অন্ধকারের জন্য কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটাও রাতের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে গত রাত সোয়া ১০টার দিকে মির্জাপুল অ্যালুমিনিয়াম গলিসহ কয়েক জায়গায় বিদ্যুৎ আসেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ : বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জলযট সৃষ্টি হয় প্রবর্তক মোড়ে। প্রায় হাঁটুসমান পানি ছিল সেখানে। বিকাল সাড়ে ৪টায়ও পানি নামেনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সড়ক উঁচু করায় গতবার প্রবর্তকে তেমন জলযট হয়নি।

এছাড়া নগরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। নিচু এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও পানি ঢোকে। এতে পথচারী ও ঘরমুখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। এছাড়া মূল সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাছল। এতে সৃষ্টি হয় যানজটের। মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহামুখী সড়কেও বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে পথচারীর দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এ সময় রিকশাচালকদের ইচ্ছেমতো ভাড়া দাবি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া জিইসি মোড়, ওয়াসা, তিন পোলের মাথা, রেয়াজুদ্দিন বাজার, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, আগ্রাবাদ, চকবাজার মুহম্মদ শাহ আলী লেইন, ২ নম্বর গেট, মেহেদীবাগ, বাদুরতলা, বহাদ্দারহাট, বাকলিয়া, বাকলিয়া ডিসি রোডে পানি জমে যায়।

বৃষ্টির সময় শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, রাস্তায় সংকট ছিল যানবাহনের। শত শত পথচারী গাড়ির অপেক্ষা করছিল সড়কে। এ সময় মনগড়া ভাড়া দাবি করছিলেন চালকরা। কিছু গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিয়োগ রয়েছে।

এদিকে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পথচারীরা। মুরাদপুর এলাকায় পথচারী নাজিম আজাদীকে বলেন, বর্ষা মৌসুম আসার আগেই শহর ডুবে যাচ্ছে। সামনে আরো ভয়াবহ অবস্থা হবে মনে হচ্ছে। তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে লাভ কী?

এদিকে হাঁটুর বেশি পানি জমে যায় মোহাম্মদপুর মাজার রোডে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়ও নামেনি সেই পানি। সড়কটির পাশের বিভিন্ন দোকানেও পানি ঢোকে। স্থানীয়রা জানান, চারপাঁচ মাস আগে সড়কটি উঁচু করা হয়। কিন্ত সড়ক সংলগ্ন নালা পরিষ্কার না করায় সুফল আসেনি।

চকবাজারের মুহাম্মদ শাহ আলী লেনের আবদুল হামিদ বলেন, বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যাওয়া আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমন বৃষ্টি চলতে পারে ৭ দিন
পরবর্তী নিবন্ধব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমডির সম্পত্তিতে খুলশীর ওসিকে রিসিভার নিয়োগ