ড. মইনুল ইসলামের কলাম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতি দমনে ডাঁহা ফেল্‌ মেরেছে

| বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঐ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। ক্ষমতাগ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যেই সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিটি গঠন করে, যেগুলোকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন প্রদানের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ঐ সংস্কার কমিটিগুলোর মধ্যে দুর্নীতি দমনে সরকারের করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ড: ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে। যেহেতু ড. ইফতেখারুজ্জামান বেশ কয়েক বছর ধরে দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা সংস্থা ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের’ নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তাই আমরা খুবই আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে তার নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশগুলো খুবই কার্যকর ও সাহসী প্রমাণিত হবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যখন কমিটির সুপারিশমালা সরকারের কাছে প্রদান করা হয়েছিল তখন সুপারিশগুলো সম্পর্কে বেশ কিছুটা আশাহত হয়েছিলাম, কারণ আমার মনে হয়েছিল যে কমিটি সমস্যাটার সমাধানে খুব সাহসী সুপারিশ প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছিল। মনে হয়েছিল, কমিটি খুব বেশি সময় দেয়নি সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য সমস্যার গভীর বিশ্লেষণে যাওয়ায়। তবুও সরকার সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নে নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু, রিপোর্ট প্রদানের এগার মাস পার করে এসে এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে সরকার এব্যাপারে ডাঁহা ফেল্‌ মেরেছে।

দুর্নীতি এদেশের তুলনামূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনে ব্যর্থতার জন্য প্রধানত দায়ী। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে, আর ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছে ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে। লজ্জাজনক পরাজয় মেনে নিয়ে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে ১৯৭৫ সালে পালাতে হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। দুই দশকের ঐ চরমবিধ্বংসী যুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ভিয়েতনাম বাংলাদেশের মত বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হিসেবে বিবেচিত হত। ১৯৭৫ সালে সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম যখন বিজয়ী দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল তখন ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’সুকান্তের এই অবিস্মরণীয় কবিতার লাইনটি আক্ষরিকভাবে প্রযোজ্য ভিয়েতনামের জনগণের ক্ষেত্রে। এতদ্‌সত্ত্বেও ভিয়েতনাম কখনোই কোন দেশের কাছে মাথা নত করেনি, ভিক্ষার জন্যে হাত পাতেনি। এমনকি, অনুদান ও ‘সফট লোনের’ আশায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতেও আবেদন করেনি। অথচ, কী নিদারুণ কষ্টকর ছিল ১৯৭৫পরবর্তী বছরগুলোতে ভিয়েতনামের জনগণের জীবন! ভিয়েতনামের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৯৭৪ সালে ছিল মাত্র ৬৫ ডলার। ১৯৮৬ সালে ‘দোই মোই’ সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের আগে ১৯৮৫ সালে তা ছিল ২৮৫ ডলার। ২০২৫ সালে আইএমএফ এর প্রাক্কলন মোতাবেক ভিয়েতনামের মোট জিডিপি ৪৯০ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ এর হিসাব মোতাবেক ২০২৫ সালে ভিয়েতনামের মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি ৪৮০৬ ডলারে পৌঁছে গেছে, যেটাকে ‘মিরাকল’ বলা হচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে ভিয়েতনামের মাথাপিছু জিডিপি ২০২৫ সালে পৌঁছে গেছে ১৭,৪৮৪ পিপিপি ডলারে। ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের মাত্র ২ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান করছে। অথচ, ২০২৫ সালের জুনে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ২৮২০ ডলার, আর ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের ২৪ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে এই অনুপাত ছিল ১৮.৭ শতাংশ। এর মানে, গত তিন বছরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যার অনুপাত হয়তো পাঁচ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

প্রাইমারী শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে ভিয়েতনাম ২০০০ সালের মধ্যেই তার পুরো জনসংখ্যাকে শতভাগ শিক্ষিত করে তুলেছে এবং জনগণের বিশাল একটি অংশকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে সফল করে তুলেছে। ভিয়েতনামের জনগণের শতভাগ ২০২৫ সালে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় সেবা পেয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফলকে কয়েকটি নগরে কেন্দ্রিভূত না করে ভিয়েতনাম গ্রামীণ জনগণের মাঝে উন্নয়নের সকল ডাইমেনশানকে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এখন ভিয়েতনামে প্রতি বছর বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ দাঁড়াচ্ছে ২০২৫ বিলিয়ন ডলার। এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতিশীলতার পেছনের চাবিকাঠি হলো ভিয়েতনামে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক কম, ভিয়েতনামের শ্রমশক্তি বাংলাদেশের চাইতে অনেক শিক্ষিত, দক্ষ এবং পরিশ্রমী। ভিয়েতনামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। বন্দর, মহাসড়ক ও সুলভ গণপরিবহনের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম দ্রুত আধুনিকায়নে সফল একটি দেশ। তৈরী পোষাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম এখন বাংলাদেশকে হটিয়ে মাঝে মাঝে গণচীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানটি দখল করে নিচ্ছে। ইলেকট্রনিকস পণ্য রপ্তানিতে এখন সিঙ্গাপুরের পর ভিয়েতনাম দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। চাল রপ্তানিতে থাইল্যান্ডকে হটিয়ে ভিয়েতনাম ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ব্রাজিলের পর কফি রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। সাড়ে নয় কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনামের মোট রপ্তানি আয় বাংলাদেশের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় ছিল ৪০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

উপরে ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক মিরাকলের যে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো তার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো এই কথাটা বলা যে বাংলাদেশের তুলনামূলক পশ্চাৎপদতা ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এখানকার দুর্নীতির অব্যাহত তান্ডব। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল বাংলাদেশ বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিগবেষণা সংস্থা ‘ট্রান্সপারিন্সি ইন্টারন্যাশনাল’ কর্তৃক প্রণীত ‘করাপশান পার্সেপশান ইনডেক্সে’ পরপর পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ঘোষিত হয়েছিল। ২০২৪ সালেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ। অতএব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার মিশনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া সমীচীন ছিল দুর্নীতিদমন। কিন্তু, জনমনে ইতোমধ্যেই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে সরকার সাংবিধানিক সংস্কার কিংবা নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে যতখানি আন্তরিক তার তুলনায় দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা দেখিয়ে চলেছে। আমরা বুঝতে পারি, দেড় বছরের শাসনকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে খুব বেশি সফলতা দেখাতে পারবে না। কিন্তু, সংগ্রাম শুরু করতে বাধা কোথায়? দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা কঠোর সংগ্রাম শুরু করে এগিয়ে নিয়ে গেলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে ঐ সংগ্রাম চালিয়ে নিতে বাধ্য হবে না?

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে বেধড়ক দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন ও পুঁজিপাচারের সংস্কৃতি চালু হয়েছিল। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে ক্ষমতাসীন হওয়ার অব্যবহিত পরেই দুর্নীতি ও পুঁজিলুন্ঠনের বেলাগাম তৎপরতা শুরু করার জন্য আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদেরকে ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদেরকে সরাসরি আদেশ দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সাড়ে পনেরো বছরের স্বৈরশাসন হাসিনাকে সুযোগ করে দিয়েছিল বেলাগাম লুটপাট করতে। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে যে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনামলে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুন্ঠিত হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি লুন্ঠিত হয়েছে ব্যাংকিং খাত, এরপর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, ভৌত অবকাঠামো খাত এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত। বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ২৩৪০ শতাংশ পর্যন্ত নাকি লুটপাট হয়েছে। শ্বেতপত্রে মোট ২৮টি দুর্নীতির পদ্ধতির মাধ্যমে লুন্ঠন প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণে নিয়ে আসা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, ভারত এবং কয়েকটি ‘ট্যাক্স হেভেন’ সবচেয়ে বেশি অর্থপাচারের সুবিধাভোগী হিসেবে চিিত হয়েছে। (এর আগে ২০০১২০০৬ মেয়াদে ক্ষমতাসীন বিএনপিজামায়াত জোট সরকারের আমলেও দেশে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছিল)। কমপক্ষে আগামী এক দশক ধরে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে হাসিনার আমলের এই দুর্নীতির কারণে। হাসিনার শাসনামলে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় ও স্বল্পপ্রয়োজনীয় মেগাপ্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সারা দেশে বেলাগামভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। মেগাপ্রকল্পসহ সকল প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিনচার গুণ বেশি ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা, যেজন্য এসব প্রকল্পের ব্যয় ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার ‘ডেটা ডক্টরিং’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে দেশটাকে লুটেপুটে ছারখার করে দিয়েছে, যে অর্থের সিংহভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এই পুঁজিলুন্ঠনের কেন্দ্রে ছিল হাসিনাপুত্র জয়, রেহানাকন্যা টিউলিপ ও রেহানাপুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও তার পুত্র শেখ ফাহিম, শেখ হেলাল, তাঁর ভাই শেখ জুয়েল ও তাঁর পুত্র শেখ তন্ময়, সেরনিয়াবাত হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাঁর পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ তাপস, শেখ পরশ, লিটন চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরী এবং হাসিনার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। আর ছিল এস আলম, সালমান রহমান, সামিটের আজিজ খান, বসুন্ধরার আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের ওবাইদুল করিম ও নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের মত লুটেরা অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার লুটেরা রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতিবাজ আমলা।

তবুও বলতে হবে, শুধু শেখ হাসিনার দুর্নীতির ভয়াবহতা বর্ণনা করলে প্রশ্ন উঠবে আপনারা গত দেড় বছরে সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কী কী ‘কংক্রীট পদক্ষেপ’ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন? সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বেশিরভাগ উপদেষ্টা দুর্নীতি করেন না বলে জনমনে বিশ্বাস জন্মেছে, কিন্তু প্রত্যেক উপদেষ্টার নিয়ন্ত্রণাধীন মন্ত্রণালয়গুলোতে দুর্নীতি দমনে কী কী পদক্ষেপ গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে সে ব্যাপারে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি মনে করি। (একজন ছাত্র উপদেষ্টা ও কয়েকজন এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে)! সাধারণ জনগণ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে এখনো দুর্নীতির প্রকোপে জর্জরিত রয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর তাদের স্থলাভিষিক্ত বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ব্যাপক চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে। ভূমি সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রকোপ আগের মতই রয়ে গেছে। কাস্টমস, ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিতে কোন আঁচড়ই পড়েনি। বিআরটিএ অফিসে এখনো প্রতি পদক্ষেপেই দুর্নীতির তাণ্ডব। সরকারী যে কোন অফিসেই সেবা পেতে হলে আগের মত ঘুষ দিতে হচ্ছে। বিচার বিভাগের ঘুষদুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আগের মতই বহাল রয়ে গেছে। ঘুষদুর্নীতির জন্য কোন স্তরের কর্মকর্তাকর্মচারীর চাকুরি গত পনেরো মাসে যাওয়ার কোন খবর পত্রপত্রিকায় পড়েছি বলে মনে পড়ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা শুরু করলেও কর্মরত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা শেষ করেছে বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে না। দেশের সংবিধানে কিছু ত্রুটি থাকার কারণে শেখ হাসিনা স্বৈরশাসন জারি করতে পেরেছিলেন, দুর্নীতিপুঁজি লুন্ঠনপুঁজি পাচার যার প্রধান বৈশিষ্টে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু দেশের ‘এক নম্বর সমস্যা’ দুর্নীতি, তাই দুর্নীতিদমনকে প্রধানঅগ্রাধিকার না দেওয়াটা বড়সড় ভুল মনে করি।

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুতি কতটুকু
পরবর্তী নিবন্ধবাবা, তোমার সন্তানরা আজও তোমার জন্য কাঁদে