ঝড়ো হাওয়া-শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পাকা ধান

ক্ষতির মুখে গুমাইবিলের দেড় হাজার কৃষক

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | রবিবার , ৫ মে, ২০২৪ at ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলের স্বনির্ভর গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া। পাকা ধান কেটে ঘরে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ২০ কানি জমির ধান। শুধু রফিকের নয় শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপজেলার অনেক কৃষক। শুধুমাত্র গুমাইবিলের স্বনির্ভর অংশে দেড় হাজার কৃষকের অন্তত প্রায় ২ হাজার কানির জমির পাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের গুমাই বিলের অংশে গিয়ে দেখা যায়, বিলের অধিকাংশ ধান গাছের ধান ঝরে গেছে। দূর থেকে চারায় ধান আছে মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ জমিতে ধান নামমাত্রই। বেশিরভাগই নিচে ঝরে গেছে। কিছু কিছু ধানি জমি পানিতে ডুবে আছে। কোনো কোনো কৃষক জলাবদ্ধ জমির পানির অপসারণে কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কেটে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ধান ক্ষেত দেখতে গিয়েছিল স্থানীয় কৃষক মো. ওসমান। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ধারদেনা করে ৭ কানি জমিতে চাষাবাদ করি। শিলা বৃষ্টির কারণে মাঠের সব ধান ঝরে গেছে। এবার অনেক টাকার ক্ষতি হবে। ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় আছি। কৃষক বাদশা আলম বলেন, এত শিলা বৃষ্টি জীবনে দেখিনি। ৭০ কানি জমি সব শেষ। আল্লাহ পাক ব্যাপক ধান দিয়েছেন কিন্তু তা ঘরে তুলার আগেই সব শেষ।

আবদুল জলিল বলেন, একজন ধান কাটার শ্রমিকের বেতন দিনে এক হাজার টাকার ওপরে। জমি থেকে এবার ধান কেটে আনতে হবে না, সব ঝরে গেছে। যা আছে তা কাটতে গেলেও শ্রমিকের মজুরি উঠবে না। নুরুল আবছার বলেন, চার কানি জামির সব ধান ঝরে গেছে। ধান এবার কাটবো না। কৃষক শাহ আলম বলেন, স্বাভাবিকভাবে ১ কানি জমিতে ১ হাজার কেজি ধান হয়। ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে এবার কানিতে ১০০ কেজি ধানও পাওয়া যাবে না। এই ধান কাটতে গেলে শ্রমিকের বেতনও হবে না। পুরো ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। এই কৃষকের মতো মো. আজিম, মো. সেলিম, নজরুল ইসলাম, মো. ইউসুফ ও গিয়াস উদ্দিনও ক্ষতি হওয়া ধান খেত দেখিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে কৃষি দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন। স্থানীয় লোকজন ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত গুমাই বিল। বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া আর শিলা বৃষ্টিতে গুমাই বিলের স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের অংশে দেড় হাজার কৃষকের অন্তত ২ হাজার কানি জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে জানালেও তারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আসেননি অভিযোগ কৃষকদের।

তবে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজগর আলী চৌধুরী বলেন, অর্ধেক ধান কাটা হয়ে গেছে। সামান্য ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকরা ফোন করলেও অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে তিনি কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন মোহাম্মদ নুরুল্লাহ বলেন, শিলা বৃষ্টি আর ঝড়ে নষ্ট হওয়া কৃষকদের ক্ষেত আমি নিজে জমিতে গিয়ে দেখেছি। কৃষকদের কান্না আর সহ্য হচ্ছে না। এসব কৃষক ঋণ নিয়ে, ধারদেনা করে বর্গা জমিতে চাষ করেছেন। এই ইউনিয়নের দেড় হাজার কৃষকের পরিবার চিন্তিত। যাদের আয় এই কৃষি থেকে। কৃষি অধিদপ্তর নজর দেবেন আশা করছি।

এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, উপজেলার ২০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় এই এলাকাটি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেনেছি। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওই এলাকার খোঁজ নিয়েছেন। জলাবদ্ধ জমি থেকে পানি নেমে যেতে বন্ধ থাকা জলকপাটগুলো খুলে দিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাপদাহে কমেছে ট্রেনের গতি, সিডিউলে সমস্যা
পরবর্তী নিবন্ধমাছ নেই সাগরে, খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা