জেনারেল হাসপাতালে ফের যোগদানের আবেদন ফোরকানের

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে পুরনো কর্মস্থল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই ফের যোগদানের আবেদন করেছেন হিসাবরক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মো. ফোরকান। গত ২৫ অক্টোবর ফোরকান এ সংক্রান্ত আবেদন জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলি আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন দাবি করে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তার যোগদান সংক্রান্ত আবেদন পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তবে তার আবেদনটি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ফোরকান তার যোগদানের আবেদনের সাথে আপীল বিভাগের চেম্বার আদালতের একটি আদেশ সংযুক্ত করেছেন। যেখানে তার বদলি আদেশ ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তার যোগদানের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা আদালতের আদেশসহ তার আবেদনটি বুধবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। উনারাই (বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। অথবা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা চাইবে। আদালতের আদেশসহ আবেদনটি আইন শাখায়ও পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষকের চলতি দায়িত্বে থাকা মো. ফোরকানকে গত ১৭ জুলাই এক আদেশে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. সামিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে ৫ দিনের মধ্যে কর্মস্থল থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়। অন্যথায় আদেশের ৬ষ্ঠ দিন থেকে সরাসরি অব্যাহতি পাইয়াছেন বলিয়া গন্য হইবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল ছাড় করণের চেষ্টার ঘটনায় মো. ফোরকানকে শাস্তিমূলক এ বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে আর্থিক সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে আর্থিক সংক্রান্ত দায়িত্বভার হিসাবরক্ষন কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হলেও স্ব-পদে বহাল ছিলেন ফোরকান।
এদিকে, বদলি আদেশের প্রেক্ষিতে ২১ জুলাই মো. ফোরকানকে ছাড়পত্র দেয় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সময় তার দায়িত্বভার হিসাবরক্ষন কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু ফোরকান দায়িত্বভার, নথিপত্র কিছুই বুঝিয়ে দেননি। বদলিকৃত কর্মস্থলেও যোগ দেননি। বরঞ্চ ছাড়পত্র দেয়ার পর থেকে হিসাব শাখার কক্ষের চাবিও হস্তান্তর করেননি। সে-ই থেকে হিসাব শাখার কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাও কক্ষটিতে আরেকটি তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে গত তিনমাস ধরে হিসাব শাখার কক্ষটি তালাবদ্ধ।
ফোরকান দায়িত্বভার-নথিপত্র বুঝিয়ে না দেয়ায় প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনায় নানা জটিলতার সম্মুখিন হচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে তাকে একাধিক চিঠি দেয়া হয়। পরে তার (ফোরকানের) স্থায়ী ঠিকানায়ও একাধিক তাগিদ পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু ডাকযোগে পাঠানো তাগিদ পত্র ফেরত আসে। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট এ বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবর চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়- তার (ফোরকানের) এহেন আচরণের ফলে হাসপাতালের কার্যাবলি সম্পাদনে দারুণভাবে ব্যাহত, প্রশাসনিক ও আর্থিক জটিলতার এবং বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায়, তার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও হাসপাতালের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের স্বার্থে তার এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা এবং আইন ও বিধি মোতাবেক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
অন্যদিকে, বদলি আদেশ ঠেকাতে ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে (নং-১) মামলা করেন মো. ফোরকান। শুনানি গ্রহণ করে ১৯ জুলাই এক আদেশে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার মামলা খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল করেন ফোরকান। শুনানি গ্রহণ করে ১৭ অক্টোবর প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালও তার আবেদন না মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর আপীল বিভাগের চেম্বার আদালতে লিভ টু আপীল করেন ফোরকান। ২৩ অক্টোবর শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করা হয় উল্লেখ করে যোগদানের আবেদনে ফোরকান দাবি করেছেন- চেম্বার আদালত তার বদলি আদেশে ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানের আবেদন করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরের বকেয়া বিল বাবদ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার ব্যয় মঞ্জুরি আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে ছাড়করণের চেষ্টা হয়। গত ২৮ জুন জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান এ বিল ছাড়করণের চেষ্টা চালান। বিষয়টি ধরা পড়ায় বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে মো. ফোরকানকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে তাকে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর মো. ফোরকানসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জুন দুদকে অভিযোগ দেয় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর কেনাকাটা নিয়ে দুদকে আগে থেকেই মামলা চলমান রয়েছে। মামলা থাকায় এর বিলও আটকে রয়েছে। এরই মাঝে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরি আদেশ তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে গত ২৮ জুন বকেয়া বিলটির অর্থ ছাড়করণের চেষ্টা করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএনজি করে এসে ২ লাখ টাকার ব্যাগ ছিনতাই
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে আরও চার শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার