চীনকে রুখতেই ভারতে মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘বেকো’ চুক্তির সম্ভাবনা

বিবিসি বাংলা | মঙ্গলবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ভারত ও আমেরিকার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের যে ‘টু প্লাস টু’ ডায়ালগ চলছে, তার তৃতীয় রাউন্ডের বৈঠকে অংশ নিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার গতকাল সোমবার দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন। আজ মঙ্গলবার এস. জয়শঙ্কর ও রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে তাদের বৈঠকে দুদেশের মধ্যে সামরিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘বেকো’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সংলাপের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য যে চীনের মোকাবিলা করা তা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা একমত। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে দু’দেশের মধ্যে এধরনের কোনও চুক্তি সই হলেও সেটার ভবিষ্যৎ কি আদৌ সুরক্ষিত থাকবে, এই প্রশ্নটাও উঠছে। ভারত ও আমেরিকার মধ্যেকার মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া ‘টু প্লাস টু’ সংলাপে এবার যে ‘বেকো’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার পুরো কথাটা হল ‘বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট’। গোপনীয় স্যাটেলাইট ও সেন্সর ডেটা রিয়েল টাইমে আদানপ্রদানের জন্য যে চার ধরনের তথাকথিত ‘মৌলিক চুক্তি’ আছে এটি তার একটি। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে দিল্লির পথে রওনা হওয়ার আগেই মাইক পম্পেও টুইট করে ঘোষণা করেন এই সংলাপের লক্ষ্যই হল একটি ‘মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক’। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কাদের থেকে বিপদের সম্মুখীন বলে তারা ভাবছেন, তিনি সে কথা উল্লেখ না-করলেও বুঝে নিতে অবশ্য কোনও অসুবিধা হচ্ছে না কারওরই। দিল্লির সিনিয়র কূটনৈতিক ভাষ্যকার জ্যোতি মালহোত্রার কথায়, ‘এই টু প্লাস টু সংলাপে আলোচনার মূল এজেন্ডাই বলুন বা প্রধান আলোচ্য – সেটা হল চীন।’ আর সে কারণেই এতদিন অপেক্ষার পর এই মহামারির মধ্যেও মার্কিন মন্ত্রীরা দিল্লিতে এসেছেন। মার্কিন দূতাবাসের সূত্রগুলো আমাদের সরাসরি বলছেন এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী অবস্থানকে কীভাবে রোখা যায়, বৈঠকে যাবতীয় আলোচনা হবে সেটাকে ঘিরেই। স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট সি রাজামোহনও বিশ্বাস করেন, চীনের চমকপ্রদ উত্থান ভূরাজনীতির সমীকরণ বদলে দিয়েছে বলেই মার্কিন প্রশাসন এখন ভারতের সাথে নানা ধরনের সামরিক ও রণকৌশলগত সমঝোতা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ড: রাজামোহনের কথায়, আমেরিকা একটা সময় জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ নানা দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করত সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা মাথায় রেখে। সোভিয়েতের পতনের পর গত তিরিশ বছর ধরে সেই জায়গাটায় একটা তুলনামূলক স্থিরতা ছিল, কিন্তু এখন চীন পুরো প্রেক্ষাপটটা পাল্টে দিয়েছে। পৃথিবীর এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ইস্যুগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করা হবে আমেরিকা তা এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে- ভারতের সঙ্গে আলোচনাও তারই একটা অংশ। কিন্তুপম্পেও ও মি. এসপার এমন একটা সময় ভারতে এলেন, যখন তার মাত্র দিনসাতেকের মাথায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোটের ঠিক আগে ভারতের সঙ্গে এই ধরনের সমঝোতার উদ্যোগ কি ট্রাম্প প্রশাসনের কোনও নির্বাচনী কৌশল? আর হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার পালাবদল হলে এই নীতি যে পাল্টাবে না, তারই বা স্থিরতা কোথায়? ‘দ্য ওয়্যার’ নিউজ পোর্টালের ডিপ্লোম্যাটিক এডিটর দেবীরূপা মিত্র অবশ্য বিশ্বাস করেন, বৈদেশিক নীতি ঐতিহাসিকভাবে কখনওই মার্কিন নির্বাচনে তেমন প্রভাব ফেলে না, ফলে এবারেও তার বিশেষ ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তার কথায়, পম্পেও ও এসপার যে ভারতে এসেছেন সে খবর মার্কিন মিডিয়াতে কতটা ঠাঁই পাবে তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার ২
পরবর্তী নিবন্ধকবি টোকন ঠাকুরের জামিন