চার লেইন করতে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ।। থাকবে ২৬ গার্ডার সেতু, ১৭২ কালভার্ট

আনোয়ারা প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের শেষলগ্নে এসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নিয়ে মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার। কর্ণফুলীর শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে পটিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এই প্রকল্পে সড়ক উন্নয়ন ছাড়াও নির্মিত হবে ২৬ গার্ডার সেতু ও ১৭২টি কালভার্ট। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। টানেল খুলে দেয়া হলে সরু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তা কতটুকু সুফল আসবে তা নিয়ে এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারার দিকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ছয় লেইনের ১২ কিলোমিটার সড়কই কেবল টালেলের চাপ সামলানোর সক্ষমতা রয়েছে। এরপর কালাবিবিবিদীঘি থেকে বাঁশখালী-কঙবাজার টইটং সড়কটি দুই লেইনের। একইভাবে আনোয়ারা চন্দনাইশ সড়কটিও দুই লেইনের।
এর বাইরে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কঙবাজার পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি নামে মহাসড়ক হলেও তাও ছিল দুই লেইনের। পাশাপাশি দুই গাড়ি ক্রসে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটত। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত গাড়ির চাপে ধীরগতির চলাচলে চট্টগ্রাম-কঙবাজার মাত্র ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে অনেক সময় ৫ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়।
তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু (শাহ আমানত সেতু) চালুর প্রায় ৯ বছর পর ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম-কঙবাজার সড়কে মাত্র ৮ কিলোমিটার অংশ প্রশস্ত ও আধুনিকায়ন করা হয়। ৩০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর শহর প্রান্তে ৫ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেইন ও দক্ষিণ প্রান্তে ওয়াই জংশন পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেইনে উন্নীত করা হয়। বাকি অংশটি সরু রয়ে গেছে দীর্ঘদিন।
টানেল উদ্বোধনের এই সময়ে এসে চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়ক পুরোপুরো আধুনিক রূপ দিতে নড়েচড়ে বসেছে সওজ। শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কঙবাজার পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার সড়ক চার লেইনে উন্নীত করতে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সওজ প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮২৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এই সড়কের মোট প্রশস্থতা হবে ২৫.২০ মিটার। সড়কটি চারলেন হবে এবং ধীরগতির যান চলাচলের জন্য থাকবে তিন মিটার প্রশস্থের দুটি ব্রেক ডাউন লেন। এছাড়া এই সড়কে ২৬টি পিসি গার্ডার সেতু ও ১৭২টি কালভার্ট থাকবে।
সূত্র জানায়, সড়কের বাজার অংশগুলো টেকসই করতে কংক্রিটের রিজিড পেভমেন্ট করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২২ কিলোমিটার। এই সড়কে ১৫টি ইন্টারসেকশন ও বাস স্টপেজের জন্য ৩৫টি বাস বে (স্টেশন) থাকবে। সওজ এর ইতোপূবে অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে সড়কটি ২৫ মিটারে প্রশস্থকরণ করা সম্ভব হবে। তবে সড়ক বাঁকসমূহ সরলীকরণের জন্য ১১০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ডিপিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। শিকলবাহা ওয়াইজংশন (ক্রসিং) হতে পটিয়া বাইপাস পর্যন্ত সড়ক সাড়ে ৫ মিটার হতে সাড়ে ১০ মিটার মিটার করার প্রস্তাবটি আগেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে চার লেনের প্রকল্পটি অনুমোদন হলে পুরো সড়কই ২৫ মিটার প্রশস্ত হবে।
সওজ সূত্র জানায়, ডিপিপি অনুমোদনের পর আগামী ডিসেম্বর নাগাদ চট্টগ্রাম কঙবাজার সড়ক ৪ লেইন প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ মিললে আগামী বছর জানুয়ারি থেকে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা।
দোহাজারী সড়ক বিভাগ (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে কঙবাজার পর্যন্ত সড়ক নেটওয়ার্ক হবে। ১৩০ কিলোমিটারের চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত যাতায়াত ও ব্যবসা বাণিজ্যে শতভাগ সুফল পাবে এই অঞ্চলের মানুষ। যানজট নিরসনের পাশাপাশি, দুর্ঘটনা কমে আসবে। যাতায়াতে সময় বাঁচবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়ক পরিদর্শন শেষে গাছবাড়ীয়া-বরকল-আনোয়ারা সড়ক পরিদর্শন করে সড়কটিকে সাড়ে ৫ মিটার হতে ১০ দশমিক ৩০ মিটার প্রশস্থকরণ ডিপিপি প্রস্তুতের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধফয়েজুল দম্পতির আছে ১শ ভরি স্বর্ণ