মাছের উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানিতে পিছিয়ে দেশ

এ খাতে আয় মাত্র ১.৩৯ শতাংশ অভাব পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

নদীমাতৃক বাংলাদেশে মাছ চাষের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে ৬০ প্রজাতিরও বেশি মাছ হারিয়ে গেছে। দেশের রপ্তানি আয়ের খুব সামান্য একটি অংশ মৎস্য সেক্টর থেকে আসে। অথচ যথাযথ উদ্যোগ এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোকে কাজে লাগানো গেলে বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশও এক্ষেত্রে বড় ধরনের সফলতা অর্জন করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে ২৬৪ প্রজাতির দেশি মাছ ছিল। অথচ জলবায়ু পরিবর্তন, যথেচ্ছ কীট নাশকের ব্যবহার, কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, খাল নদী দখল ও দূষণসহ নানা কারণে ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৬০ প্রজাতির মাছ। গত কয়েক বছরে দেশে মাছ চাষের বিস্তৃতি হয়েছে। বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কিন্তু মাছ রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। শুধুমাত্র পরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে সম্ভাবনাময় এই খাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেরই মৎস্য রপ্তানি খাত বেশ সমৃদ্ধ।

সূত্র বলেছে, দেশের সাগর, নদী, খালবিলে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এসব মাছের পরিবর্তে দেশের পুকুরে চাষের পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

মৎস্য বিভাগের হিসাব মতে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান এখন ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে মোট উৎপাদন বেড়েছে ছয়গুণ। মাছ চাষ ও ব্যবসায় দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ যুক্ত রয়েছেন। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১.৩৯ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। এ খাতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.১০ শতাংশ। দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্য খাত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সক্ষমতা অর্জন করছে।

উদ্যোক্তাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানো হলে কৃষিভিত্তিক এসব শিল্পখাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। আর তাতে প্রচুর বেকারের কর্মসংস্থান হবে এবং কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে দেশও অর্থনীতিতে স্বনির্ভর হবে।

মৎস্য চাষে বাংলাদেশ স্বর্ণালী অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। মাছের উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। স্বাদু পানির মাছে বাংলাদেশ তার তৃতীয় স্থানটি ধরে রেখে উৎপাদন বাড়ানোর হারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। চাষের মাছে দেশ গত ছয় বছরের মতোই পঞ্চম হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী,

মৎস্য বিভাগের মতে, সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। যা দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বর্তমানে দেশে বছরে অন্তত ৫ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হচ্ছে। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বের বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে উঠে আসার পেছনে সরকারের নানা পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, বিশ্বের ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপন্ন হচ্ছে।

বাংলাদেশে পুকুরে মাছ চাষে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করে সূত্রগুলো বলেছে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে শুধু আমিষেরই যোগান নয়, দেশে বেকার জনগোষ্ঠির কর্মস্থানেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। দেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা বহু মাছের উন্নত জাতের উদ্ভাবন করেছেন। যা দেশে মাছ উৎপাদনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বিজ্ঞানীরা দেশের বিলুপ্তপ্রায় ২২ প্রজাতির মাছের চাষপদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন বলে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, টেংরা, পাবদা ও মলার মতো পুষ্টিকর মাছগুলো হারিয়ে যেতে বসেছিল। এগুলো চাষের ফলে ফিরে আনা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকার মাছ চাষকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এর সুফল মিলতে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে মাছ চাষের ব্যাপ্তি আরো বাড়বে বলে উল্লেখ করে সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই খাতকে অবহেলার সুযোগ নেই। সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে গত বেশ কয়েক বছর ধরে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। মাছের উৎপাদনে যে প্রবৃদ্ধি তা আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অপর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে মাছের উৎপাদন যেভাবে বাড়ছে তাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়ানো গেলে চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার খাতও অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে। বিশ্বের বহু দেশে বাংলাদেশের মাছের ভালো চাহিদা রয়েছে। এ দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রপ্তানি করা গেলে দেশ সমৃদ্ধ হবে। বর্তমানে শুধু চিংড়ি মাছই বড় ভলিউমে রপ্তানি হয় বলে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য মাছও রপ্তানি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশে বাজার সৃষ্টির জন্য দূতাবাস এবং মিশনগুলোকে কাজে লাগানোরও পরামর্শ দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঔষধি উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে মশার লার্ভা নিধন সম্ভব
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী