কয়েক হাজার নাবিকের জাহাজে যোগদান অনিশ্চিত

১৫ হাজার ডোজ টিকা বরাদ্দের আবেদন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

করোনার টিকা না পেয়ে কয়েক হাজার নাবিকের জাহাজে যোগদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে ৪শ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা) বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ভাগ বসাবে অন্য দেশ। বিভিন্ন দেশের জাহাজে কর্মরত নাবিকদের সময়মতো করোনার টিকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। মাত্র ১৫ হাজার মেরিনারকে টিকা দেওয়া হলে এ সংকটের সুরাহা হতো। প্রবাসীদের টিকা দেয়ার যে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেখানে ‘মেরিনার’ না থাকায় সংকট প্রকট হয়েছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার এসোসিয়েশন মেরিনারদের টিকা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের কয়েক হাজার মেরিনার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি করেন। এক সময় বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যে বাংলাদেশি নাবিকদের জয়জয়কার থাকলেও নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির ফলে সেই বাজার হারিয়ে গেছে। বর্তমানে বিশ হাজারের মতো নাবিক বিভিন্ন জাহাজে কাজ করেন। বর্তমানে নাবিকরা বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স দেশে প্রেরণ করেন। সাধারণ শ্রমিক বা অদক্ষ মানুষের তুলনায় নাবিকদের বেতনভাতা বেশি হওয়ায় বহু ক্ষেত্রে দশ জন প্রবাসী যে পরিমাণ টাকা পাঠান একজন নাবিক একাই তার থেকে বেশি পাঠান। এতে সংখ্যায় কম হলেও নাবিকদের প্রেরিত রেমিটেন্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বেশ বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।
করোনায় নাবিকদের বিদেশ গমন, জাহাজে চাকরিসহ সার্বিক অবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সময়মতো টিকা দিতে না পারায় বহু নাবিকই দেশে আটকা পড়েছেন। আবার অনেকেই জাহাজ থেকে নামতে পারছেন না। নাবিকরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। ফলে টিকাও জুটছে না। প্রবাসীদের টিকা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানে নাবিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার এসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে। এতে নাবিকরা চাইলেও টিকা দিকে পারছেন না। টিকা দিতে না পারায় জাহাজে যাওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার এসোসিয়েশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে ১৫ হাজারের মতো নাবিক রয়েছেন। তাঁদেরকে ভ্যাকসিন দেয়া হলে তাঁরা কাজে যোগ দিতে পারতেন। শুরুতে হাজার দশেক মেরিনারকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হলেও একটি বড় কাজ হতো।
ক্যাপ্টেন আতিক উল খান দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকার প্রবাসীদের সুুবিধা দিলেও নাবিকদের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের ওপর সরকার দুই শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করে। অথচ এ তালিকায় প্রথমে নাবিকদের অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি। পরবর্তীতে দেন-দরবার করে নাবিকদের প্রবাসী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে নাবিকরাও তাদের প্রেরিত রেমিটেন্সে দুই শতাংশ প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। নাবিকরা বিদেশে টাকা রোজগার করলেও ওয়েজ আনার্স বন্ড কেনার সুযোগ নেই।
অপর একজন মেরিনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শত শত কোটি টাকা আমরা বিদেশ থেকে আনি। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে মজবুত করি। অথচ আমাদেরকে পদে পদে হয়রানি করা হচ্ছে। নাবিকদের অনেকের এনআইডি নেই, অনেকের বয়স কম, টিকা কার্যক্রমের সময় অনেকেই জাহাজে ছিলেন। এ ধরনের বহু নাবিক টিকা দিতে না পেরে জাহাজে কাজে যোগ দিতে পারছেন না। তাই নাবিকদের টিকাদানের সুযোগ দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
করোনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার এসোসিয়েশন। এক বিবৃতিতে এসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাখায়াত হোসেন জানান, পরিবার-পরিজন ছেড়ে বাংলাদেশের নাবিকরা মাসের পর মাস বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরে কাজ করেন। রেমিটেন্সে তাদের অবদান বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। অথচ এ পর্যন্ত নাবিকদের শর্তহীনভাবে জাহাজে যোগদান ও প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে অনেকগুলো দেশ নাবিক বান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছে। কাজেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নাবিকদের টিকাদান এবং স্বাভাবিক ফ্লাইটের মাধ্যমে জাহাজে যোগদান ও প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ফিলিপাইন সরকার তাদের নাবিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাদানের ব্যবস্থা করেছে। নাবিকদের টিকা দেয়া হলে দেশই লাভবান হবে। অন্যথায় চারশ মিলিয়ন ডলারের বাজারে বহুদেশ ভাগ বসাবে।
রিক্রুটিং এজেন্সি হক এন্ড সন্সের এঙিকিউটিভ ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন জি এম কাদের বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি জাহাজ মালিকদের কাছ থেকে নাবিকদের ভ্যাঙিনেশন সনদের বিষয়ে বার বার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। খুব দ্রুত বাংলাদেশের সমুদ্‌্রগামী জাহাজের নাবিকরা ভ্যাঙিনেটেড না হলে চাকরির বাজার রক্ষা করা কঠিন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে বেড়েছে মানুষ, গাড়ি