সড়কে বেড়েছে মানুষ, গাড়ি

বাজারে ভিড়, পাড়া-মহল্লায় জটলা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর পর দিন যত যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন সড়কে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যানবাহনের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে, কাঁচাবাজারে মানুষের জটলা। মুখে অনেকেরই মাস্ক থাকে না। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার তাগিদও নেই। তবে কোথাও কোথাও এমন ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেলেও নগরীর প্রবেশ মুখগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম তিন/চার দিন কঠোরভাবে নগরী ও উপজেলায় বিধিনিষেধ চলছিল। রোববার থেকে কিছু মানুষ বের হতে শুরু করে। সোমবার থেকে মানুষ এবং যানবাহন সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলেই জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারি আদেশ অমান্য করে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে জরিমানা ও ডাবল জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা মানুষকে ঘরে রাখতে চাই। কিন্তু করোনার সংক্রমণকে ভয় না করে বিভিন্ন অজুহাতে ও বিনা প্রয়োজনে তারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলা রাখছেন। যৌথ অভিযানে তাদের অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, দোকানগুলোর সামনে মানুষের ভিড়। হাজারও মানুষ বাজার করছেন। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কোনো কড়াকড়ি নেই প্রশাসন কিংবা বাজার কর্তৃপক্ষের। একইভাবে জটলা দেখা গেছে নগরীর টেরীবাজার, হাজারী গলি, আসকারদীঘির পাড়, পাথরঘাটা, কোতোয়ালীর মোড়সহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়।
নগরীর আগ্রাবাদ, বাদামতলী মোড়, টাইগারপাস এলাকায় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রিকশার পাশাপাশি প্রচুর মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস দেখা গেছে, যার সবগুলোতেই যাত্রী ছিল। মূল সড়কের আশেপাশে শুধুমাত্র মুদি-ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকে। কিন্তু সড়ক পেরিয়ে গলিতে ঢুকলেই অন্যান্য দোকানপাট যেমন লন্ড্রি, ফার্নিচার, হার্ডওয়্যার, স্টেশনারি, সেলুনসহ বিভিন্ন দোকানপাটের কোনোটি আংশিক, কোনোটি পুরোপুরি খোলা দেখা গেছে। সামনের শাটার টেনে ব্যবসা করছেন অনেকে। যেগুলো কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় পড়ে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, চেরাগী পাহাড় থেকে খাস্তগীর স্কুল পর্যন্ত রাস্তায়-ফুটপাতে লোকজন বেশি ভিড় করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা মোবাইল পার্টির মাধ্যমে নিয়মিত লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু পুলিশ চলে গেলে আবারও ভিড় করছে। পাড়াগুলোতে অহেতুক মানুষজন ভিড় করছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, কলকারখানার বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান পেয়েছি যেগুলো চালু আছে। তাদের কর্মচারীরা ঘর ছেড়ে বের হলেও কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে পারে না। ধরলে বলে, আমার মালিকের সঙ্গে বা অফিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান জরুরি কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, নানা অজুহাত দিয়ে লোকজন রাস্তায় বের হচ্ছেন। একজনকে ধরা হলো, বললেন বাবার ক্যান্সার। বাবাকে ফোন করে জানা গেল পুরোটাই মিথ্যা। কেউ আবার বছরখানেক আগের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা মানুষকে বোঝাচ্ছি, মাস্ক দিচ্ছি। এখন মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হয়, তাহলে তো পরিস্থিতি খারাপ হবে।
নগরীতে প্রবেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ পথ সিটি গেট ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় ১/২ জন করে আরোহী নিয়ে মোটরসাইকেল চলছে। শহরতলীতে চলছে সিএনজি টেঙি। আবার বাসের সামনে গার্মেন্টসের স্টিকার লাগিয়ে উপজেলা থেকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। নগরীতে ঢুকছে বিভিন্ন গণপরিবহনও।
গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ১০৫ মামলায় ৪৬ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেছেন। অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী নগরীর ডবলমুরিং ও আগ্রাবাদ এলাকায় ২৭টি মামলায় ২৪ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। খুলশী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা ইসলাম ৮টি মামলায় ২১০০ টাকা, চান্দগাঁও এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদ ৯টি মামলায় ২৬৫০ টাকা, পাঁচলাইশ এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইনামুল হাছান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনিক ৭টি মামলায় ৩৫০০ টাকা, চকবাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত ১৮টি মামলায় ৩৬০০ টাকা, হালিশহর এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী ১৩টি মামলায় ৫৩০০ টাকা, কোতোয়ালী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হাসান ২টি মামলায় ৬০০ টাকা, বায়েজিদ এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিন ৪টি মামলায় ১১০০ টাকা, হালিশহর এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা ১টি মামলায় ১০০ টাকা, পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূরজাহান আক্তার সাথী ২টি মামলায় ২৫০ টাকা, বন্দর ও ইপিজেড এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস ৬টি মামলায় ৯০০ টাকা এবং পতেঙ্গা এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত ৮টি মামলায় ১৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকয়েক হাজার নাবিকের জাহাজে যোগদান অনিশ্চিত
পরবর্তী নিবন্ধজিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নতুন মিশনে টাইগাররা