চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

| বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি নাজুক। তাই সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, লকডাউনের সুফল শতভাগ পেতে হলে সরকারের নির্দেশিত বিধিনিষেধ পুরোপুরি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গেল ঈদুল ফিতরের সময় সরকারের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপনের জন্য বহু মানুষ গ্রামের বাড়িতে ছুটে গেছেন। ফলে ঈদের পরপর সংক্রমণ বেড়েছে। এই ধারা এখনো চলছে। অন্যদিকে, গ্রামেও করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। অথচ, এর আগে গ্রামে সীমিত সংখ্যক আক্রান্ত পাওয়া যেত।
তারা বলেন, বর্তমানে করোনার আগ্রাসী রূপ দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদুল আজহার সময়ে মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় অবস্থা বেসামাল হয়ে পড়বে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই জনসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনের বিধিনিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সক্রিয় হতে হবে।
গত বছরের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গতকালই এক দিনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ধরা পড়ে। সংক্রমণের হারও সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ০২ শতাংশ। মাত্র দুদিনে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন করোনা পরিস্থিতি খারাপ। সরকারের উদ্যোগের সাথে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। চলমান লকডাউনের মধ্যে আরোপিত বিধিনিষেধ পুরোপুরি মানতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনের সুফল আমরা দেখেছি। যারা মেনেছেন তারা আজ অনেকটা মুক্ত জীবন-যাপন করতে পারছেন। তাদের জীবন-জীবিকাও নিরাপদে চলছে। আমাদেরও এ পথ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, লকডাউনের ৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ৮ থেকে ১০ দিন পর আমরা রেজাল্ট পাব বলে আশা করি। তবে মানুষের বেপরোয়া চলাফেরায় লকডাউন অকার্যকর হয়ে গেলে সুফল তো মিলবে না। উপরন্তু সামনে আরো কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। মহানগরীতে এবং উপজেলা সদরে বিধিনিষেধ কিছুটা মানার প্রবণতা দেখা গেলেও অলিগলি ও হাট-বাজারের জটলা এখনও আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এদিকে একটু নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন গ্রামে প্রচুর আক্রান্ত হচ্ছে। নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেও সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা এতদিন দেখা যায়নি। তবে, বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্য বাতায়ন অথবা অন্যান্য টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদরঘাট সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. দীপা ত্রিপুরা বলেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর অন্যতম কারণ হতে পারে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত এক করোনা রোগী ন্যূনতম আটজনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায়। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও সংক্রমিত হয়ে পড়ে। আক্রান্তের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে যায়। এ অবস্থা আমরা গত বছর প্রথম প্রকোপের সময় দেখিনি।
তিনি বলেন, যেহেতু বর্তমান ভাইরাসটি অনেক বেশি প্রাণঘাতী, তাই আমাদেরকে অনেক বেশি সতর্কভাবে এটাকে মোকাবেলা করতে হবে। বাইরে গেলে মুখে মাস্ক রাখা, বারে বারে হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধির প্রতিটি নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালনের মাধ্যমে নিজে এবং ঘনিষ্ঠ স্বজনদের রক্ষা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবদলি নয়, চিকিৎসকদের হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকয়েক হাজার নাবিকের জাহাজে যোগদান অনিশ্চিত