কোভিড জয়ের লড়াইয়ে

জাহানারা মুন্নী | শুক্রবার , ১৬ জুলাই, ২০২১ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

কোভিডের ভয়াবহ রূপের তৃতীয় ঢেউ পর্বে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে শনাক্তের হার ৩১% (০৭. ০৭. ২১ তারিখ হিসাবে)। সমানতালে বাড়ছে মৃত্যু। যখন কারও আপনজন, প্রিয়জন, ভরসার একজন বা নিজ বাসার কেউ কোভিডে আক্রান্ত হয়, তখন টের পাওয়া যায়-কতটা ভয়ানক এই পরিস্থিতি। কতোটা কষ্টকর, দুশ্চিন্তায় ও আতংকে কাটাতে হয় দিনগুলো। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশিতে সেরে উঠলে কপাল ভালো! যদি অক্সিজেন সেচুরেশন কমতে থাকে এবং ফুসফুস আক্রমণ করে ফেলে- তখন বুঝা যায় করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা কতটা নির্মম, জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে কিভাবে বেঁচে উঠবে!
হ্যাঁ, বাংলাদেশ এখন এমন একটা লড়াইয়ের সম্মুখীন। আমার ভাইয়ার কথা বলছি – তিনি একজন ব্যাংকার। প্রথম, দ্বিতীয় ঢেউ থেকে কোনভাবে রক্ষা পেলেও তৃতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ে শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত। তবুও কপাল ভালো, কারণ তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু, প্রথম ৪-৫ দিন ছিল কঠিন সময়পার। বিশেষত করে রাতের সময়টা কি হবে, রিপোর্ট কি আসে, শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক থাকবে-তো! সেইসাথে খবরটি জানার পর পরিবার পরিজনের কান্না। তাছাড়া দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কয়েক পরিবারকে জানি যারা আমার ভাইয়ার দিকে চেয়ে থাকে, তাদের মাসের শেষের বাজারের অর্থ যোগানদাতা মানুষটা সেরে উঠবেতো! এমন বহু পরিবার বা কাহিনী আছে, কোন না কোনভাবে মিলে যায়। কারও ভাই, বোন, মা, বাবা কিভাবে মুহূর্তে অদৃশ্য অণুজীবের কাছে হার মেনে চিরতরে চলে যাচ্ছে। ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রমণ এতটাই ভয়াবহ যা বাতাসে মিশ্রিত হয়ে সংক্রমিত করার সব সীমা পরিসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সবকিছু যেন এখন এই অণুজীবের আওতায়। টিকা দেওয়ার পরও অনেকের আক্রান্ত হওয়ার খবর থাকলেও টিকার উপরই আস্থা রাখতে হবে কেননা, টিকা গ্রহীতাদের ভাইরাসের গুরুতর কবলে পড়তে হবে না। এ পর্যন্ত টিকাই হলো প্রতিরোধের সর্বোচ্চ প্রতিষেধক। তবে সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতন হতে হবে আরও ভালোভাবে, যেখানে আগে একটা মাস্ক ব্যবহার করেছি, এখন সেখানে দুটো মাস্ক পরতে হবে অবশ্যই। বিশেষ করে যাদের বাহিরে বের হতে হচ্ছে যেমন- বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকার এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত সর্বমহলের ব্যক্তিগণ। দায়িত্ব শেষে বাসায় ফিরে অবশ্যই পরিহিত কাপড়, সাথে থাকা মাস্ক সাবান পানিতে ধুয়ে গোসলের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন হয়ে একটি নির্দিষ্ট ব্যাগে মাস্ক রেখে দেওয়া। যা অনেকগুলো জমা হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে নিজ দায়িত্বে পুড়িয়ে ফেলা। এটুকু বলা যায়, এরপরও যদি কেউ কোভিডে আক্রান্ত হন, তবে সেটি ভয়াবহ হবে না। সঠিক ও শুদ্ধ স্বাস্থ্যবিধিই পারে মহামারী করোনা ভাইরাস হতে সুরক্ষা দিতে। আমরা যেন এখনই সচেতন হই। সচেতন করি পরিবার, প্রিয়জন, পরিজন ও আশেপাশের মানুষকে। যার যার স্থান থেকে প্রার্থনা করি প্রভুর নিকট- হে আল্লাহ ; আমাদের ক্ষমা করে দিন, জনবহুল এই দেশের মানুষকে, পুরো বিশ্ববাসীকে করোনা অতিমারির ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকীর্তি মানের মৃত্যু নেই
পরবর্তী নিবন্ধআসুন, প্রকৃতি নির্ভর সাতরাস্তার মোড়কে বাঁচাই