কালপুরুষের শুভ্রা বিশ্বাস প্রীতিলতারূপে

ডেইজী মউদুদ | শনিবার , ৯ মার্চ, ২০২৪ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আবার নতুন করে আমাদের সামনে উঠে আসছে বারে বারে শুভ্রা বিশ্বাসের দুর্দান্ত অভিনয়ে তাঁরই নির্দেশিত এবং অভিনীত ‘ইতি প্রীতিলতা’ নাটকে। এই ঐতিহাসিক কাহিনী আমাদের সবারই জানা। চট্টগ্রামে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজেই আত্মঘাতী হয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি চেয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক সূর্যসেনের সহযোগী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। সেই কাহিনীকে আমাদের সামনে নাট্যশৈলী এবং অভিনয় দক্ষতা দিয়ে আবারো দর্শক শ্রোতাদের সামনে হাজির করলেন নাট্যকর্মী শুভ্রা বিশ্বাস তার নাট্যদল ‘কালপুরুষ’ প্রযোজিত ‘ইতি প্রীতিলতা’র মধ্য দিয়ে। মূলত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘ইতি প্রীতিলতা’ নাটকটি ছিল কালপুরুষের অষ্টম প্রদর্শনী। নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী ছিল প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবসে ধলঘাটে প্রীতিলতার জন্মভূমি প্রীতিলতা ট্রাস্ট মিলনায়তনে। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন স্থানে নাটকটি পরিবেশিত হয়।

দর্শকদের সামনে নাট্যমঞ্চে একটি নাটককে মানসম্মত এবং শিল্পরসংঘন করে ফুটিয়ে তোলা কঠিন এবং নিঃসন্দেহে দুঃসহ একটি কাজ। বিশেষ করে চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা, সংলাপ নির্মাণ, মঞ্চের সাজসজ্জা, শব্দশৈলী, পোশাকআসাক সব মিলিয়ে অত্যন্ত জটিল এবং দুরূহ এক কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে হয়। আর এই কর্মযজ্ঞে শুভ্রা যেন নিখুঁত এবং কাহিনী ও চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়া এক দারুণ শিল্পী। কাহিনীবিন্যাস, সংলাপনির্মাণ, মঞ্চসজ্জা, শব্দ পরিস্ফুটনসহ যাবতীয় নির্দেশনায় এই নাটাকটিতে শুভ্রার অভিনয় জগতে বিচরণের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আন্তরিকতা এবং নিরলস প্রচেষ্টার ছাপ নাটকটির প্রতি পরতেপরতে। নাটকটি দেখতে গিয়ে যেন সেই যুগেই ফিরে গিয়েছিলাম। খুব বেশি সময় নেয়নি, অত্যন্ত পরিমিত এবং নির্ধারিত সময়ে কাহিনীর সমাপ্তি টেনেই দর্শকদের পরিতৃপ্ত করেছে নাটকটি। অভিনয় গুণাবলীর কথা না বললেই নয়। পুরো নাটকজুড়ে স্বদেশী এবং ব্রিটিশদের অত্যাচারে নির্যাতিত ও নিপীড়িত বাঙালির বঞ্চনা, স্বাধিকারের চেতনা, বিপ্লবীদের আন্ডারগ্রাউন্ড আন্দোলনের খণ্ডচিত্রগুলো অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্দেশক শুভ্রা বিশ্বাস এই নাটকটিতে। প্রীতিলতা চরিত্রটিই এই নাটকের প্রধান চরিত্র। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভ্রা বিশ্বাস। অসাধারণ অভিনয় ক্ষমতা এবং সুনিপুণ দক্ষতা দিয়ে তিনি চরিত্রটিকে দান করেছেন পূর্ণতা। এক কথায় তাঁর অনবদ্য অভিনয়গুণেই নাটকটি দর্শকনন্দিত হয়ে ওঠে। সেই কত আগেই প্রীতিলতার দুঃসাহসী এই অভিযান, এবং ব্রিটিশদের বিতাড়িত করে দেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করার বাসনায় প্রীতিলতার এই আত্মাহুতি আমাদের দেশের স্বদেশী আন্দোলন ও বিপ্লবীদের ইতিহাসে স্মরণ থাকবে যুগে যুগে। ইতিহাসখ্যাত এবং কালজয়ী কাহিনীকে এই নাটকের মধ্য দিয়ে শুভ্রা বারে বারে আমাদের মাঝে তুলে আনেন, এটি আমাদের জন্য তো বটেই, এই প্রজন্মের জন্যও বড় এক প্রাপ্তি। এই প্রজন্মকে নাটকের মধ্য দিয়ে ইতিহাসমুখী করার নিরন্তর এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির যেখানে স্খলন চলছে, সেখানে কালপুরুষের নাট্যচর্চায় আমাদের ইতহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত থাক নিরন্তর এই কামনা করছি। কালপুরুষ এগিয়ে যাক তার নাটক নিয়ে এই কামনা। ভবিষ্যতে আরো নাটক দেখার প্রত্যাশায় রইলাম। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন শুভ্রা বিশ্বাস, নাজনীন হক, প্রবীর পাল, নটরাজ পুলক, তাপস চক্রবর্তী, শান্তা শর্মা, কালীচরণ বিশ্বাস রবিন, সৈকত দাশ, পাভেল চৌধুরী, কাউসার মজুমদার রুবেল, শান্তনু প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়’
পরবর্তী নিবন্ধজেসিকা ভ্যালেন্টির সাক্ষাৎকার