তাপদাহ চাষিদের আতংক ‘ফ্রুট ড্রপিং’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার আম চাষি মংশিতু চৌধুরী। যাদুরাম পাড়া এলাকায় দেশি এবং বিদেশি আম মিলিয়ে ২৫ একরের বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি। চলতি বছরে তার বাগানের আম গাছে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছিল। ভালো ফলনের আশায় লাভের স্বপ্ন দেখছিল এই তরুণ। কিন্তু চলমান তাপদাহে তার সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে চলমান তাপদাহে তার বাগানের ৬০ শতাংশ আম ঝরে গেছে। এই কৃষক বলেন, বছরের শুরুতেই গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। পরে তা ঝরে যায়। এই বছর প্রচণ্ড গরম। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ আম ঝরে গেছে। আর ৪০ শতাংশ আম অবশিষ্ট আছে। এগুলো রক্ষা করা গেলে কিছুটা হয়ত বাঁচতে পারব। কিন্তু গরম অব্যাহত থাকলে সেগুলো থাকার সম্ভাবনা কম। পাহাড়ি এলাকায় সেচ দেওয়ার সুযোগ নাই। তারপরও গাছে পানি দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আম বাগানের নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজ প্রকাশ নন্দ ত্রিপুরা ও পলিন ত্রিপুরা বলেন, আমরা বাগানের আম রক্ষার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছি। নিয়মিত পানি দিচ্ছি, ওষুুধ দিচ্ছি তারপরও আমগুলো ঝরে পড়ছে।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ধুমনীঘাট এলাকার চাষি হ্ল্যাশিংমং চৌধুরী। প্রায় ৩৫ একরের পাহাড়ি টিলায় বিভিন্ন প্রজাতি আমের গাছ লাগিয়ে বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, বাগানে আম্রপালি, মিয়াজাকি, আমেরিকান পালমারসহ ৩০ প্রজাতির বেশি আম রয়েছে। তবে এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে গাছে আম রাখা যাচ্ছে না। এখন গাছের তলায় আম আর আম। ইতোমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আম ঝরে গেছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে প্রতিদিনই আম ঝরছে। এছাড়া পাহাড়ি এলাকায় নিয়মিত সেচ দেওয়ারও কোনো সুযোগ নাই। বৃষ্টি না হলে এবার ফ্রুট ড্রপিংয়ের কারণে আমরা লোকসানে পড়ব।

চলতি মৌসুমে প্রাকৃতি কারণে আমের ফলন কম হয়েছে বলে জানান খাগড়াছড়ির বড় আম চাষি হিসেবে পরিচিত সুজন চাকমা। ভাইবোন ছড়া দুর্গম পাহাড়ে শত একরের বেশি আমের বাগান রয়েছে তার। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক কারণে আমাদের এলাকায় আমের ফলন কম হয়েছে। এছাড়া গাছে যা ছিল তাও এখন অতিরিক্ত গরমে ঝরে যাচ্ছে। শতকরা ৯৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে। এবার আমের সাইজ ছোট। গরমের কারণে আম দ্রুত পেকে যাবে। সাধারণত প্রতিবছর জুনের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আম সংগ্রহ শুরু হয়। এবার মে মাসের শেষে দিকে আম সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। ফ্রুট ড্রপিং রোধের ব্যাপারে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন জানান, ফ্রুট ড্রপিং রোধে আশু কোনো সমাধান নেই। তারপরও কৃষকদের আমরা একদিন পর পর পানি দেওয়ার জন্য বলেছি। বিকেলের দিকে বাগানে পানি স্প্রে করতে হবে। এছাড়া কৃষকরা যখন বাগান সৃষ্টি করে তখন খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাগানের আশপাশে পানির উৎস থাকে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রাছিরুল আলম জানান, কৃষকরা যাতে সচেতন হয় সেজন্য আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে লিফলেট বিতরণ করেছি। নিয়মিত গাছে পানি দেওয়া ছাড়া এখন আর বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে ফ্রুট ড্রপিং কমে আসবে। চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ মেট্রিক টন বিটুমিনসহ দুই ব্যক্তি আটক
পরবর্তী নিবন্ধবহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের নিচে ডাস্টবিনে নবজাতকের মরদেহ