ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই

বিভাগীয় শ্রমিক দলের কাউন্সিলে নজরুল ভারত আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দেবে না : খসরু

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ১১ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের কাউন্সিল। গতকাল সোমবার বিকেলে নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে এ কাউন্সিলর অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে প্রথম অধিবেশনে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছে। এতে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ বার বার গণতন্ত্রকে হত্যা করলেও বিএনপি পুনরুদ্ধার করেছে। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তারা। তাদের দাবি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এ সফর। সস্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সঞ্চলনায় প্রধান বক্তা ছিলেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ বার বার গণতন্ত্র হত্যা করেছে এবং গণতন্ত্র হত্যাকারীকে সমর্থন করেছে। বার বার গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং গণতন্ত্রের মা বেগম জিয়া। বর্তমানেও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারবে বিএনপি।
তিনি বলেন, সরকার তৈরি পোশাক রপ্তানি, রেমিটেন্স থেকে আয় এবং সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া এবং উন্নয়নের কথা বলেন। কিন্তু এসবের সূচনা করে জিয়া। যেখানে যে উন্নয়ন হয়েছে তা জিয়া নয় তো বেগম জিয়া করেছেন। জিয়ার সময়ে প্রথম ১০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। তিনি প্রথম গার্মেন্টস শ্রমিকদের কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসেন। পল্লী বিদ্যুতের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
শ্রমিকদলকে আন্দালন সংগ্রামে সামনে কাতারে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং ঐক্যবদ্ধ কঠোর আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য তৃণমূল থেকে দল ও অঙ্গসংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বর্তমানে এমন পার্সেপশন (উপলব্ধি) সৃষ্টি হয়েছে যে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা ভারতে গিয়েছেন। এটা দেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত খারাপ খবর। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্যও এটা খারাপ খবর।
খসরু বলেন, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কতটুকু শঙ্কিত হলে খোলাখুলিভাবে তাদের মনের কথা বলে দিতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে কি বলেছেন তা তো আপনারা জানেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে বলেছেন, ‘মোদি থাকলে সব ঠিক’। প্রধানমন্ত্রী যখন এমন কথা বলেন তাহলে বুঝা যায় তাদের মধ্যে কি ধরনের ভয় সৃষ্টি হয়েছে। তবে এবার ভারত তাদের ফাঁদে পা দেবে বলে আমি মনে করি না। কারণ ভারত দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশের রাস্তায় জনগণের জোয়ার নেমেছে। এই জোয়ার থামানো যাবে না।
তিনি বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগের সাথে নেই। জনগণ আছে বিএনপির সাথে। জনগণের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ ভীত সন্ত্রস্ত ও নার্ভাস হয়ে গেছে। তাই তারা কি বলবে এবং কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
খসরু বলেন, সরকার রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকজন রাস্তায় নেই। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। জনবিচ্ছিন্ন দলটি দেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে কেবল দলটির নেতাকর্মীরা বিপক্ষে অবস্থান নিলে আমাদের কোনো অসুবিধা ছিল না। পুলিশকে ব্যবহার করে তারা জনগণের বিপক্ষে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
আমীর খসরু আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিক শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। ক্ষমতাসীন সরকার শ্রমিকের আন্দোলন, শ্রমিক ইউনিয়ন ও শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, জিয়াউর রহমান শ্রমিক দলকে আলাদা সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সে শ্রমিক দলকে সংসংগঠিত করে আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে যাব। শ্রমিকের ঐক্যের শক্তি বৃহৎ শক্তি, এই শক্তি গর্জে উঠলে আওয়ামী দুঃশাসন পতন হতে বাধ্য। বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক করতে হবে। তারেক রহমানকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। তাকে আমরা দেশে ফিরিয়ে আনব। তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নাম উল্লেখ তার উদ্দেশে মীর মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আপনি ইদানিং বেশি কথা বলা শুরু করেছেন। আপনি তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যান। আপনার চিকিৎসার দরকার। তিনি বলেন, আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, বাহিনী ছাড়া আপনারা একটা সমাবেশ ডাকেন। আমরাও একটা ডাকব। আমাদের সামনে আপনার দাঁড়াতেও পারবেন না। কারণ বিএনপি এ দেশের মাটি ও মানুষের দল। তিনি বলেন, আমাদের মিছিলেও সরকার বাধা দেয়। কারণ আমাদের মিছিল করতে দিলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে বলে ভয় পায়। তিস্তার পানি ও কুশিয়ারা নদীর কোনো খবর নেই। তিস্তার মালিক মমতা বন্দোপাধ্যয়কে দিল্লিতে দাওয়াত দেয়া হয়নি।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ২২ আগস্ট থেকে সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন শুররু হয়েছে। জনগণ সরকারকে এক মুহূর্তের জন্যও ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, রাজপথে রক্ত দিয়ে হলেও জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করব।
ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঐক্যবদ্ধ যে আন্দোলনের ডাক দিবে তাতে সরকার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।
আবু সুফিয়ান বলেন, সরকার পতনের লক্ষ্যে শ্রমিকদল ঐতিহ্য ধরে রেখে মঠে নামবে।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যেখানে বাধা আসবে সেখানে প্রতিরোধ গড়া হবে।
দুই সদস্যের কমিটি :
দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বসম্মতিক্রমে এ এম নাজিম উদ্দীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি ও কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে এ এম নাজিম উদ্দীনকে সভাপতি ও আনোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। ২০১৪ সালে আনোয়ার হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গত আট বছর দায়িত্ব পালন করেন নুরুল্লাহ বাহার। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, হুমায়ুন কবির খান, শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদী আলী খান, রফিকুল ইসলাম, মিয়া মো. মিজানুর রহমান, মঞ্জুরুল ইসলাম, খুরশিদ আলম, জাকির হোসেন, কাজীর আমির খসরু, খন্দকার জুলফিকার মতিন, মাহবুবুল আলম বাদল, এম এ আজিজ, মো. মিয়া ভোলা, অ্যাড. আবদু সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, এসকে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, নুরুল আমিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, শাহ আলম, আবদুল মান্নান, মনোয়ারা বেগম মনি, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, শ ম জামাল, সামশুল আলম, তাহের আহমদ, ইদ্রিস মিয়া, সাহাব উদ্দীন, সফিকুল ইসলাম, শাহনেওয়াজ চৌধুরী মিনু, শফিকুর রহমান মজুমদার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাকের ধাক্কায় কালুরঘাট সেতুর রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত
পরবর্তী নিবন্ধকালুরঘাট সেতু সংস্কার করে চলবে কক্সবাজার রুটের ট্রেন