এলো খুশির ঈদ

রেজাউল করিম | বুধবার , ৩ এপ্রিল, ২০২৪ at ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ/ তোর সোনাদানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/ দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ/ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে/ যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।’

ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে খুশি। ঈদুল ফিতর কথাটি আরবি। ঈদ মানে আনন্দ উৎসব, যা ফিরে আসে প্রতিবছর। রমজানের রোজার শেষে এ ঈদ আসে বলে এর নাম ঈদুল ফিতর। অনেকে বলে থাকেন রোজার ঈদ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহকে সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ শিক্ষা দেয়। এ আনন্দের দিনে প্রতিটি মুসলিম তার সামাজিক অবস্থান ভুলে যায় এবং ভ্রাতৃত্ববোধের পরম তৃপ্তিতে একে অপরকে আলিঙ্গন করে।

বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন ঈদুল ফিতরকে। চারিদিকে সাজসাজ রব। ঈদ মানে আত্মত্যাগের মহিমায় নিজেকে শানিত করা। ধনীগরিব এক কাতারে দাঁড়ানো, একই আনন্দে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনের নামই ঈদুল ফিতর।

ঈদের দিনে সাধ্যমতো সবাই ভালো পোশাক পরে। ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় নানা পদের খাবার। আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীরাও এ আনন্দের অংশীদার হয়। দরিদ্ররাও এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় আনন্দের সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করে থাকে। মসজিদে ধনীদরিদ্র নির্বিশেষে ঈদের নামাজ আদায় করে সবশ্রেণির মানুষ।

মহানবী (সা.) ঈদের দিনে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উত্তম পোশাক পরতেন। ঈদুল ফিতরে কিছু মিষ্টি দ্রব্য খেতেন। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন। তিনি ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিবদুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন। এরপর ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

ভারত বর্ষ মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ববাংলায় আসেন। ব্যবসায়িক উদ্দেশে হরেক রকম মশলা রফতানি করতেও এদেশে ভিড় জমিয়েছিল অনেক দেশের নাগরিক। এছাড়া আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমেও বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। ধারণা করা হয়, তখন থেকেই মুসলিম সংস্কৃতিপূর্ব বাংলায় প্রভাব বিস্তার করেছিল ব্যাপকভাবে। এই বাংলায় ঈদ উদযাপনকে জনপ্রিয় করে তোলে মোগলরা। সে সময়ের চিত্রাংকনে তাই মোগল সম্রাট বাবরকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজ দরবারের সভাসদকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়। মোগল সৈন্যরা ছাউনি থেকে ঈদের আনন্দবার্তা ঘোষণা করত।

মোগল যুগে ঈদের দিন মুসলমানরা সব বয়সের নারীপুরুষ ও ছেলেমেয়েরা নতুন কাপড় পরত। নতুন পোশাকপরিচ্ছদে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রা করে ঈদগাহে যেত। অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরা উৎসবের সময়ে মুক্তহস্তে অর্থ ও উপহারাদি পথে ছড়িয়ে দিতেন। মোগলরা ঈদ উদযাপন করতো ২ থেকে ৩ দিন ধরে। খাবারের আয়োজনে থাকতো নানা বৈচিত্র্য। যার প্রভাব এখনও এদেশে বিরাজমান। মোগলাই পরোটা, কাচ্চি বিরিয়ানি আরও কত কি।

ঈদে সবচেয়ে মজা করে ছোটরা। ঈদ সেলামি নিতে তারা বেশি পছন্দ করে। সেলামির জন্য তাদের বেড়ানোটা হয় বাড়তি। আনন্দও তাদের বাড়তি। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে ঈদ কার্ড এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে কার্ডবিহীন ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়।

ঈদে খুশির হাওয়া বইতে থাকে, উৎসবের আমেজ বিরাজ করে সবখানে। মানুষের পুনর্মিলনী বা সম্মিলন ঘটে। উৎসবের সাগরে ভাসিয়ে দেয়া ঈদের শিক্ষা নয়, আনন্দ সবার মাঝে ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে সার্থক হবে ঈদ উদযাপন। বারে বারে ঘুরে ফিরে ঈদ আসে, ঈদ চলে যায়। ঈদ আমাদের হাসতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখোকার বায়না
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন ও সমন্বয় কমিটির সভা