ইসি গঠনে নতুন পথ বাতলে দিল ওয়ার্কার্স পার্টি

| বুধবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের সুপারিশ জানিয়ে এলেও তার আগে সার্চ কমিটি গঠনসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য নতুন একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এসেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে থাকা দলটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনসভা বা সংসদকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাব, সার্চ কমিটি হোক সাংবিধানিক পদধারী ব্যক্তিদের নিয়ে। সেই কমিটি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদে চারজনের নাম প্রস্তাব করবে। সার্চ কমিটির দেওয়া নামের তালিকা সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটি বাছাই করে সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতি ওই তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেবেন।
নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হলেও একটি সুনির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে তা করার বিধান সংবিধানে রয়েছে। ৫০ বছরেও সেই আইন না হওয়ায় গত দুই বার সার্চ কমিটি গঠন করে নামের সুপারিশ নিয়ে ইসিতে নিয়োগ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। এবারও সেই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পাঁচটি দলের সঙ্গে আলোচনার পর গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গভবনে ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাষ্ট্রপ্রধান।
সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমেদ বকুল, কামরুল আহসান, নজরুল ইসলাম হাক্কানী, আলী আহমদ এনামুল হক এমরান।
সংলাপ শেষে মেনন সাংবাদিকদের বলেন, তারা নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন প্রণয়নের উপরই জোর দিয়েছেন। এই নিয়ে তিন দফা সংলাপে আসা হল। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে একই বিষয় নিয়ে তিনবার পরপর পাঁচ বছর অন্তর আসতে হবে। এটা কাম্য নয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবারই সংলাপে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়ে গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এবারও আমরা মনে করি, আইন করা প্রয়োজন। তিনিও (রাষ্ট্রপতি) আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন, আইন করা ফরজ হয়ে গেছে। কারণ প্রতিবারই আইন নিয়ে, নির্বাচন কমিশন নিয়ে একটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই বিতর্ক নির্বাচন কমিশন নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি করে।… আইনের বিষয়ে আমরা উনাকে বলেছি, এ ব্যাপারে সব দলের কনসেনশাস আছে, সরকারি দলসহ। কেউ কিন্তু অস্বীকার করছে না। সুতরাং রাষ্ট্রপতি যদি উদ্যোগ নেন, এই কনসেনশাসকেই রূপায়ন করা যেতে পারে। নতুন বছরে সংসদের প্রথম অধিবেশনে আইনটি পাসের জন্য যেন তোলা হয়, সেই প্রত্যাশা রেখেছে ওয়ার্কার্স পার্টি।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে, ফলে তার মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে। তার মধ্যে আইন প্রণয়নের সুযোগ নেই বলে এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হবে বলে আইনমন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন।
এনিয়ে মেনন বলেন, আমরা শুনছি, সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে, আইন সম্ভব হচ্ছে না। কেন সম্ভব নয়? ১৯৯৬ সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকাররের বিধান এক রাতের মধ্যে হয়েছিল। যেটা নিয়ে পরবর্তীকালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় আপিলের বিষয়ে যে প্রশ্ন এসেছিল, সেটাও সময় লাগেনি। অন্যান্য আইনের ক্ষেত্রে কিন্তু সময় কিন্তু খুব একটা লাগে না। আলোচনায় রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি নিয়ে কিছু বলেননি বলে জানান মেনন।
সার্চ কমিটি হলে সেক্ষেত্রে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাব জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আমরা বলেছি, সেক্ষেত্রে যাদের সাংবিধানিক পদাধিকার, তারাই কেবল সার্চ কমিটির সদস্য হবেন। সার্চ কমিটির সুপারিশ এরপর সংসদে নেওয়ার সুপারিশ জানিয়ে মেনন বলেন, কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী আছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আছেন, বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা আছেন। সার্চ কমিটি করা হলে পার্লামেন্টকে কনসার্ন করেই নাম দিতে হবে। তাতে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। না হলে গোপন ব্যাপার হয়ে যায়। তার ভিত্তিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। নতুন নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুজন নারী সদস্য রাখার সুপারিশও জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।
দলটি রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি তারা নাগরিক প্রতিনিধি, গণমাধ্যম, সাংবাদিক নেতৃত্ব এবং বুদ্ধিজীবীদের মতামত নেওয়ার জন্যও রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানিয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যাতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। তারা বছরের শুরুতেই জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের জন্য প্রস্তাব করেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইনসমূহের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা মতামত দেন। তারা নির্বাচন কমিশন গঠনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণেরও প্রস্তাব দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারে না ৪৬ হাজার শিক্ষার্থী
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা প্রচারণায়