ইতিহাসের পাতায় দৈনিক আজাদী

রুনা তাসমিনা | বুধবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

কলিংবেল না বাজিয়ে, নীরবে আমার ঘরে প্রতিদিন যে মেহমান আসেন তার নাম দৈনিক আজাদী। তিনি এসে বসেন। চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, দেশের বাইরের খবরগুলো বলেন। ঘরে বসেও আমরা জানতে পারি কোথায় কী ঘটলো। চট্টগ্রামের খুব কম ঘর পাওয়া যাবে যেখানে আজাদী যায় না। আজাদীশব্দের অর্থই তো স্বাধীনতা। তবুও সে ইচ্ছেমতোন কারো ঘরে ঢুকে পড়ে না। তাকে ভালোবেসে, সমাদরে ডেকে নিয়ে যায় পাঠকেরা। এ হলো কাগজ আজাদী। আর উড়ন্ত আজাদীর কথা যদি বলতে যাই, তখন বলতে হয়অনলাইনে এই পত্রিকার পাঠক হয়তো দশ বিশ লাখের বেশি হবে। লেখক, পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত দৈনিক আজাদী পদার্পণ করলো তেষট্টি বছরে। আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা রইলো প্রিয় পত্রিকা। যেহেতু এই পত্রিকার মাধ্যমে আমার লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ সেই কারণে দৈনিক আজাদীর প্রতি আমার অশেষ ভালোবাসার পাশাপাশি আছে অশেষ ঋণ। লেখক হিসেবে এই পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করার আগে থেকেই আমি এই পত্রিকার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক। আছে আরো অসংখ্য পাঠক। তাঁদের কাছেও এই পত্রিকা সমান সমাদৃত। দৈনিক আজাদী সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ মালেক স্যার ২০১৬ সালে শিল্পকলার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘দৈনিক আজাদীকে জাতীয় দৈনিকে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু আমি সেটি করিনি। দৈনিক আজাদীকে আমি চট্টগ্রামের করে রাখতে চাই’। সেই প্রথম আমার এম এ মালেক স্যারের বক্তব্য শোনা। এবং সেদিন থেকেই আমি তাঁর ভক্ত। তাঁর উপলব্ধি অসাধারণ। তাঁর কথাগুলো একটি বইয়ের মতো। যেখান থেকে শেখা যায় অনেককিছু। দৈনিক আজাদী পত্রিকা বাংলাদেশের একটি ইতিহাস। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার খবর প্রথম প্রকাশিত হয় এই পত্রিকায়। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর। লাল অক্ষরে ছাপা সেই পত্রিকার একটি কপি উপহার পাই ১৯১৭ সালের লেখকদের সম্মানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দৈনিক আজাদীর লেখক মিলনমেলায়। যেটি দেখলে একজন বাঙালি হিসেবে গৌরব বোধ করার পাশাপাশি কল্পনার চোখে দেখতে পাই লাখো শহিদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেককে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদী পরিবারে রয়েছে তিন রত্ন। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ মালেক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, খ্যাতিমান কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ। একসাথে একটি পত্রিকায় এতোগুণীর একত্রিত হওয়া ইতিহাসে নেই। এই অর্জনের পাশাপাশি দৈনিক আজাদী পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত এই তিন গুণী সাংবাদিকের কথাও একটি অনন্য ইতিহাস। আছেন পরিচালনা সম্পাদক জনাব ওয়াহিদ মালেক। যিনি পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যে যুক্ত আছেন পত্রিকার সঙ্গে। বংশ পরম্পরায় এক হাত থেকে অন্য হাত ধরে, সাফল্যের সাক্ষর রেখে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে দৈনিক আজাদী। খ্যাতিমান কবি, সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় রাশেদ রউফ ভাইয়ের উৎসাহে, দৈনিক আজাদীর মাধ্যমে অনেক মেধাবী লেখকের, লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। তাই বলা যায়, এই পত্রিকা লেখক গড়ার কারিগরও। সংবাদ পরিবেশনে পাশাপাশি সুযোগ করে দিচ্ছে কলমি সৈনিকদের। আঞ্চলিক সংবাদ, দেশবিদেশের সংবাদ পাঠক জানতে পারেন ঘরে বসেই। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন মিডিয়া থাকলেও সকালে একটি খবরের কাগজ নিয়ে না বসলে যেনো একটি শূন্যতা বিরাজ করে। সেই শূণ্যতা পূরণে চট্টগ্রামের মানুষের প্রথম পছন্দ যে কাগজ সেটি দৈনিক আজাদী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার খবর প্রকাশ করার জন্যে ইতিহাসের পাতায় বরণীয় হয়ে থাকবে এই পত্রিকা। নতুন ভাবনায়, নতুন ধারায় দৈনিক আজাদীর পথ চলা আরও সুশোভিত হবে এই প্রত্যাশা আমাদের সবার। দৈনিক আজাদী আমাদের চট্টগ্রামের গর্ব। সিআরবি রক্ষা আন্দোলনে এই পত্রিকার রয়েছে অন্যতম ভূমিকা। হাসপাতাল হওয়ার সংবাদে যখন পুরো চট্টগ্রাম উত্তাল, তখন হাসপাতাল অন্যত্র করার যে দাবী সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে উঠেছে, সেই দাবী এবং প্রস্তাব নিয়মিত ছেপে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সফল হয়েছে এই পত্রিকা। আগস্ট মাস বাঙালিদের কাছে শোকের মাস। ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দেশে অবস্থান করা তাঁর পরিবারের সবাইকে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আগস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হয়েছে শ্রদ্ধেয় কবি রাশেদ রউফ ভাইয়ের কলামে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দৈনিক আজাদী বর্তমান প্রজন্মের কাছে আরও বিষদভাবে উপস্থাপন করেছে জাতির জনককে। বছর ঘুরে আজ আবার এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই শুভ লগ্নে দৈনিক আজাদী পত্রিকার জন্য রইলো অশেষ শুভকামনা। পরিশেষে বলতে চাই, দৈনিক আজাদী এমন একটি দীপ, যে দীপের আলো দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। আরো উজ্জ্বলতা নিয়ে এগিয়ে যাবে আগামীর দিকে।

লেখক : গল্পকার, শিক্ষক; সম্পাদক, অনন্য ধারা

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম : পরিবহন সেক্টর চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের আয়না দৈনিক আজাদী