রাজনৈতিক দলও মার্জ হবে, শঙ্কায় ফিরোজ রশীদ

| শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

ভবিষ্যতে বড় দলগুলো স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেছেন, দেশের যে অবস্থা বিরাজ করছে, আপনারা সব দেখছেন। নতুন করে কিছু বলার নেই। আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। কিন্তু এখন কী চলছে?

গতকাল শুক্রবার সকালে বিজয়নগরে হোটেল একাত্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফিরোজ রশীদ বলেন, যেভাবে চলছে, ভবিষ্যতে বড় রাজনৈতিক দলের বাইরে কেউ টিকতে পারবে না। স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ থাকবে না। ব্যাংকগুলো যেভাবে মার্জ (একীভূত) হয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো মার্জ হয়ে যাবে। একটি দল ছাড়া অন্য দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। খবর বিডিনিউজের।

গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারিবেসরকারি মিলিয়ে ১০ ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হতে চাইছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে জানানো হয়েছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিতে রওশপন্থি জাতীয় পার্টি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পাশাপাশি দাবদাহে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।

পরিচিতি সভা স্থগিত : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি। বিরোধের একপর্যায়ে ৯ মার্চ সম্মেলন করে রওশন এরশাদকে আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ২০ এপ্রিল এ অংশের ৮৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়, যার পরিচিতি সভা হওয়ার কথা ছিল শনিবার।

দাবদাহের কারণে এই সভা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে নির্বাহী চেয়ারম্যান ফিরোজ রশীদ বলেন, এই তীব্র তাপপ্রবাহে জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক সভাসমাবেশ করা তামাশার শামিল বলে আমরা মনে করি। তাই আগামীকালের পরিচিত সভা স্থগিত করে আজ শুক্রবার থেকে পাঁচদিনব্যাপী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে ১০টি স্থানে তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনসাধারণের মাঝে আমরা পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করব।

আজ শনিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এ পরিচিত সভা হওয়ার কথা ছিল। দলের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, জনদুর্ভোগ এবং কষ্টের সময় রাজনীতি চলে না। জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা রাজনীতি করি। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের প্রথম কাজ। আমরা পাঁচদিনব্যাপী প্রতিদিন ১০টি স্পটে তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ ভ্রাম্যমাণ ও অসহায় রিকশাচালক এবং দিনমজুরদের পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করব। সংবাদ সম্মেলনের পরে বিজয়নগরে পথচারীদের মধ্যে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেন দলের নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ অন্যরা।

বন্দনা ছাড়া কোনো রাজনীতি নেই : জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বন্দনা করা ছাড়া জাতীয় পার্টির সামনে আর কোনো রাজনীতি নেই। এজন্য জনগণ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ওই অংশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তারা এক গ্রুপ থেকে আরেক গ্রুপে যেতে পারবে, কিন্তু আস্থার সংকট আছে।

এরশাদের আমলের এ মন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার এখন একমাত্র পথ রাজনীতি। জীবনে যাদের টিন ছিল না, তারা আজ প্রাডো জিপ চালায়। রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন। রাজনীতি নিয়ে অপরাজনীতি চলছে। এভাবে রাজনীতি শূন্য হলে দেশ ও রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে।

নির্বাচন আর নির্বাচন নেই : কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন এখন নির্বাচনে নেই। একটি দলের মধ্যেই নির্বাচন হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করিনি। কাউকে বলিও নাই। যদি কারও ইচ্ছা থাকে তারা করবে। স্থানীয় সংসদ নির্বাচনে মার্কা দিয়ে কোনো হানাহানিতে আমরা যেতে চাই না।

সরকার বড় কোম্পানি ও ব্যাংক গিলে খাচ্ছে : কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, অর্থনৈতিক ও ব্যাংক খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সরকার বড় বড় কোম্পানি ও ব্যাংক গিলে খাচ্ছে, বড় বড় কোম্পানিগুলোতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল লাগিয়ে তা গিলে খাওয়া হচ্ছে। শেয়ারবাজার বিপর্যয়ের শেষ স্তরে চলে এসেছে। সড়কে অরাজকতা দেখার কেউ নেই। এমন কোনো ক্ষেত্র বা জায়গা নেই যেটা ভালোভাবে চলছে। সরকারের কি সেদিকে নজর আছে? তারা নিজের গদি ঠিক রাখতে ব্যস্ত।

দেশের এসব সমস্যা নিয়ে এখন আর সংসদে কথা হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগে জাতীয় পার্টিকে বলা হত গৃহপালিত বিরোধী দল। আর এখন বলা হয় ক্রীতদাস। এ পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের আস্থা নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এ পার্টিকে কীভাবে গুছিয়ে রাখা যায়।

সিনিয়র কোচেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন এইচএম এরশাদ। আমরা তার আদর্শ অনুসরণ করে দল করছি। এখন আমাদের চেয়ারম্যান হচ্ছে বেগম রওশন এরশাদ। আমরাই মূল স্রোত। আপনারা দেখতে থাকুন, অচিরেই বুঝতে পারবেন লাঙল কার? বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতীব্র গরমে সৈকতে স্বস্তির স্নান
পরবর্তী নিবন্ধ১২ মেট্রিক টন বিটুমিনসহ দুই ব্যক্তি আটক