ইউক্রেন থেকে বিশ্বের কত শস্য দরকার

শস্যবাহী প্রথম জাহাজ পৌঁছাল তুরস্কে

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৪ আগস্ট, ২০২২ at ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে ঐতিহাসিক এক চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি শুরু হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দাম কমার আশা তৈরি হচ্ছে। সোমবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় সকালে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর ওডেসা থেকে ২৬ হাজার টন ভুট্টা নিয়ে ছেড়ে যায় ‘রজনি’ নামের একটি জাহাজ। সিয়েরা লিওনের পতাকাবাহী জাহাজটি মঙ্গলবার লেবাননে পৌঁছানোর কথা।

এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পর এই প্রথম ইউক্রেনের শস্যবাহী একটি জাহাজ তুরস্কের বসফরাস প্রণালীতে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সোমবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর ১৫৮ দিন পর ইউক্রেনের খাদ্যশস্য ভর্তি জাহাজ বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে কৃষ্ণসাগরের বন্দর ত্যাগ করে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

ইউক্রেন সরকার বলছে, আসছে সপ্তাহগুলোতে ১৬টি জাহাজে আরও ছয় লাখ টন খাদ্যশস্যের চালান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে কৃষ্ণসাগর অবরোধ করে রাশিয়া। তাতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দামে উল্লম্ফন দেখা দেয়। শস্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল অনেক দরিদ্র দেশে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। শস্য পরিবহনে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত মাসে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ১২০ দিন মেয়াদী ওই চুক্তি করতে সময় লেগে যায় প্রায় দুই মাস। ঠিক হয়েছে, উভয় পক্ষ রাজি থাকলে চুক্তির মেয়াদ আবার বাড়ানো হবে।

চুক্তির শর্তানুযায়ী, চালান পরিবহনকালে ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। আর ইউক্রেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, মাইনপাতা জলপথ দিয়ে মালবাহী জাহাজগুলো যাওয়ার সময় সেগুলোকে তাদের নৌবাহিনীর জাহাজ পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তুরস্ক ওই জাহাজগুলোকে পরীক্ষা করে দেখবে; কারণ রাশিয়ার আশঙ্কা, এসব জাহাজের মাধ্যমে ইউক্রেনে অস্ত্র পাচার করা হতে পারে।

মূলত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় তিনটি বন্দর, ওদেসা, চর্নমোর্স্ক ও পিভদেন্নি দিয়ে দেশটির শস্যের চালান গন্তব্যে পাঠানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্য ইস্তাম্বুল প্রণালীর ৩১০ নটিক্যাল মাইল দীর্ঘ এবং ৩ নটিক্যাল মাইল প্রশস্ত একটি করিডোর এই চুক্তির আওতায় থাকবে। রাশিয়াও কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্য ও সার রপ্তানি করতে পারবে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনে প্রায় ২ কোটি টন খাদ্যশস্য রপ্তানির জন্য আটকা পড়ে। অচলাবস্থা চলতে থাকলে এ বছর আবাদ হওয়া শস্য মিলে এই পরিমাণ সাড়ে ৭ কোটি টনে পৌঁছাতে পারে বলে জুনের শুরুতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

গবেষণা সংস্থা চ্যাথম হাউজের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লরা ওয়েলেসলি বলছেন, ইউক্রেনে প্রতি বছর ৮ কোটি ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হলেও এবার যুদ্ধের কারণে তা অন্তত ৩০ শতাংশ কমবে।

শস্য রপ্তানিতে বিশ্বে চতুর্থ হিসেবে ধরা হয় ইউক্রেনকে। বিশ্বের ৪২ শতাংশ সূর্যমুখী তেল, ১৬ শতাংশ ভুট্টা এবং ৯ শতাংশ গম ইউক্রেনেই উৎপাদন হয়। আর রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ। যুদ্ধের কারণে এবার রাশিয়াও সেভাবে শস্য রপ্তানি করতে পারেনি।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমারা দিয়েছে, তাতে কৃষি খাত অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও ইন্স্যুরেন্স ব্যয় বৃদ্ধি এবং দাম পরিশোধে জটিলতার কারণে রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটছে বলে ক্রেমলিনের ভাষ্য। আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জানিয়েছে, আফ্রিকার চাহিদার ৪০ শতাংশ গম সাধারণত ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকেই সরবরাহ করা হত। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এ অঞ্চলে ৩ কোটি টন খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, যার ফলে আফ্রিকায় খাদ্যপণ্যের দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। নাইজেরিয়ায় পাস্তা ও রুটির দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। একই চিত্র ইয়েমেনে। সিরিয়াও একই সংকটে পড়েছে।

সমুদ্রগামী জাহাজে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বীমা করা থাকে, যাতে কোনো দুর্ঘটনায় পণ্য নষ্ট হলে আমদানি ও রপ্তানিকারণের ক্ষতি এড়ানো যায়। তবে যেখানে যুদ্ধ চলে, সেই এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজের বীমার প্রিমিয়াম বেড়ে যায় অনেক।

যুদ্ধের আগে ইউক্রেন তার ৯০ শতাংশ শস্য সাগর পথেই রপ্তানি করত। কিন্তু বন্দরগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় দেশটি ট্রাক ও ট্রেনে করে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করে। আবার বাল্টিক সাগর দিয়ে যাতে ইউক্রেনের পণ্য যেতে পারে সেজন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ইউরোপ। তবে তা বেশ সময়সাপেক্ষ ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাবুলের বিলাসী জীবনই কাল হলো জাওয়াহিরির
পরবর্তী নিবন্ধশাহ আমানতে ১ কেজি স্বর্ণসহ যাত্রী আটক