আমাজন জঙ্গলে ‘সোনার নদী’

সনেট দেব | বুধবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

মানুষের নিত্যনতুন জানার আগ্রহের শেষ নেই। এমনিতে আমাজন অরণ্য নিয়ে মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে, তার উপর নতুন করে যুক্ত হলো, আমাজন জঙ্গলে পাওয়া গেল সোনার নদী। শুনতেই কি চোখ কপালে উঠে গেল? হ্যাঁ, সত্যি বলছি। এমনি দাবি করছেন নাসার এক নভোচারী। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত নাসার নভোচারীর কয়েকটা প্রকাশিত ছবি তার সত্যতার প্রমাণ মিলায়। আমাজন অরণ্য, আমাজন জঙ্গল নামেও পরিচিত। যা দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী বিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমি। ৭০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরণ্যের প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯ টি দেশ জুড়ে এই অরণ্য বিস্মৃত। আমাজন অরণ্য ৬০% রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩% রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানা। পৃথিবী জুড়ে যে রেইনফরেস্ট তার অর্ধেক টাই এই অরণ্য নিজেই। নানা রকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ এই আমাজন। এই বনে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে যেগুলো প্রায় ১৬০০০ প্রজাতিতে বিভক্ত। আমাজন নদী দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত এবং এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এর উৎসস্থল পেরুর আন্দিজ পর্বতের নেভাদো মিস্‌মি নামক চূড়া হতে। আমাজন নদী দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৩০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে তিনটি দেশ বিধৌত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই নদী যে পরিমাণ জল ধারণ করে তা বিশ্বের যেকোন নদীর তুলনায় বেশি। আমাজন নদী যেখানে সাগরে গিয়ে মিশেছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘন ফুট জল সাগরে গিয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে এই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭ মিলিয়ন ঘন ফুট।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে লিখেছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে নাসার একজন নভোচারী গত ডিসেম্বরে ওই ছবিগুলো তোলেন। এমনিতে ওই খনিগুলো স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় ধরা পড়ে না, কিন্তু ঘটনাচক্রে রোদ প্রতিফলিত হওয়ায় ছবিতে তা ফুটে উঠেছে উজ্জ্বল সোনার নদীর রূপ নিয়ে। বিবিসি আরো লিখেছে, পেরুর দক্ষিণ-পূর্বের মাদ্রে দ্য দিয়স এলাকার আমাজন বনাঞ্চলে সোনার জন্য কতটা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চলছে, নাসার ওই ছবিতে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। পেরু লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় সোনা রপ্তানিকারক দেশ। আর মাদ্রে দ্য দিয়স অঞ্চলে প্রচুর সোনার খনি রয়েছে, যেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। স্বর্ণসন্ধানীদের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আমাজনের ওই অঞ্চলে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য। আকরিক থেকে সোনা উদ্ধারের জন্য টনকে টন পারদ ব্যবহারের কারণে বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই পারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নদী ও পরিবেশে মিশছে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। পাহাড়ের বুকে পুরনো নদী খাতে বিভিন্ন খনিজ উপাদান জমা হয়। সেই পথ ধরে সোনা খুঁজতে গিয়ে যে খনন চালানো হচ্ছে, তাতে পানি ঢুকে তৈরি হয়েছে শত শত ডোবা।
এই অঞ্চলটি একটি জীববৈচিত্র্যের হট স্পট এবং উত্তোলনকারী শিল্পটি ব্যাপকভাবে বন উজাড় এবং অত্যাবশ্যক বাসস্থান ধ্বংস করেছে। টন পারদ মূল্যবান পণ্য আহরণের জন্য ব্যবহার করা হয় বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে নদী বা বায়ুণ্ডলে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নির্গত হয়। নাসা ব্যাখ্যা করেছেন যে খনির লোকেরা যেখানে সোনার সন্ধান করছে সেগুলি কয়েকশো অববাহিকা জলে ভরাট দেখা দেয়, মাটির চারপাশে যেখানে গাছপালা সরানো হয়েছে, নাসা ব্যাখ্যা করেছেন। খনিবিদরা পুরাতন নদীগুলির সেই রুটগুলি অনুসরণ করে যেখানে খনিজ সহ পলল জমা ছিল। বানর, জাগুয়ার এবং প্রজাপতি সহ প্রজাতির আঞ্চলিক অঞ্চলে এই অঞ্চলের কিছু অংশে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে খনিজকরণ বন কাটার প্রধান কারণ। অ্যান্ডিয়ান অ্যামাজন প্রকল্পের গ্রুপ মনিটরিং অনুসারে, জানুয়ারি ২০১৯-এ একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে সোনার খনির বন উজাড় করা ২০১৮ সালে পেরুর অ্যামাজনের আনুমানিক ২২,৯৩০ একর ধ্বংস করেছিল। সোনার ক্রমবর্ধমান দাম দেখে সন্তুষ্ট, স্থানীয় সমপ্রদায়ের লোকেরা যারা প্রায়শই বঞ্চিত হন তারা খনির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দেখে। ২০১২ সালে, আনুমানিক ৩০,০০০ ছোট-বড় খনির লোকেরা সমুদ্র অঞ্চলে কর্মরত ছিল। পেরুর অপর একটি অংশে, লা পাম্পায়, এক দশকের কাছাকাছি স্থিত সোনার এক বিশাল ভিড় অবশেষে ১৯৯৯ সালে সরকার থামিয়ে দিয়েছিল যখন প্রায় ৫০ হাজার খনি শ্রমিককে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেলা
পরবর্তী নিবন্ধগ্রীষ্ম