মেলা

উৎপলকান্তি বড়ুয়া | বুধবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

-এইতো ছোটোমামা এসেছে,ছোটোমামা এসেছে! মা, ছোটোমামা এসেছে। কী মজা! কী মজা! ছোটোমামার সাথে মেলায় যাবো! কী মজা! কী মজা! দু’হাতে তালি বাজাতে বাজাতে লাফিয়ে ওঠে ছোটন। সাথে রোকনও হাততালিতে যোগ করে নিজেকে।
– ওহ! তুই এসেছিস? ছোটনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মা ভেতর থেকে শাড়ীর আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে বললো, ভালোই করেছিস এসে। নে, সামলা এবার এদের। আর পারি না এদের জ্বালায়। মেলায় যাওয়ার জন্য পাগল বানিয়ে ছাড়ছে আমাকে। কত করে বুঝালাম, এই পরিস্থিতিতে মেলা হচ্ছে না, মেলায় যাওয়া যাবে না। না, তারা কিছুই বুঝতে চায় না আমার কথা। তুই নাকি বলেছিস, মেলায় নিয়ে যাবি। এবার সামলা ওদের। আমি আর পারি না বাপু। ছোটোমামা ঘরে ঢোকার আগেই দরজাতে দাড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই মা একসাথে এতগুলো কথা ছোটোমামার উদ্দেশ্যে বলে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন,
– জুতো বাইরে খুলে রেখে ঘরে ঢুকে আয়। ওয়াশরুমে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত-পা ধুয়ে প্রথমে ফ্রেস হয়ে নে আগে, বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে যায় মা।
ছোটন আর রোকন। দুই ভাই। রোকন বড় আর ছোটন ছোটো। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণি বয়স। ইশকুলে যাচ্ছে না সেই এক বছর আগে থেকে। দেশে মহামারি করোনার কারণে সুরক্ষার জন্য দীর্ঘ এই ইশকুল ছুটি।
ওয়াশ রুম থেকে এসে ছোটোমামা রোকন ছোটনের পাশে বসতে বসতে বলে,
-তা, তোমাদের কি নিয়ে এতো হইচই হচ্ছে শুনি!
-ছোটোমামা, মা বলছে মেলা হবে না। মেলায় নাকি যেতে পারবো না। অনেকটা অভিযোগের সুরে ছোটন সামনে থেকে দুহাতে মামার গলা জড়িয়ে ধরে বলে।
রোকন ছোটোমামার ডানবাহু জড়িয়ে কিছুটা আরো ঘনিষ্ট হয়ে বলে,
-তুমিই তো বলেছো ছোটোমামা, আমাদের বৈশাখী মেলায় নিয়ে যাবে।
-হ্যাঁ, আমি বলেছি ঠিক, মেলায় নিয়ে যাবো। যখন বলেছি তখন তো ভেবেছিলাম, পরিস্থতি বুঝি আরো স্বাভাবিক হবে। কিন্তু, এরই মাঝে যে করোনা ভাইরাসের তীব্রতা আরো বাড়বে, কে জানে বলো?
-তাহলে, এবারও কি বৈশাখী মেলা হবে না ছোটোমামা?
-হুম! ঠিক বলেছো তুমি রোকন, এবারও মেলা হবে না।
-তা হলে কি ছোটোমামা মেলায় যেতে পারবো না? ছোটনের প্রশ্ন।
-করোনা সংক্রমনের অবস্থা এ মূহুর্তে অতিমাত্রায় বেড়েছে। তখনও সকলের নিরাপদ-সুরক্ষার কারণে সবকিছু স্থগিত ছিল। এবার যেহেতু গতবারের চেয়ে সংক্রমনের মাত্রা বেশি, তাই এবারও মেলা, লোক সমাগম বা নানান আনুষ্ঠানিকতা সব বন্ধ রয়েছে। তা হলে বলো, মেলা আর কি করে বসে?
এ ছাড়া বিধি নিষেধ, বিশেষ করে, সরকারি বিধিনিষেধ তো মানতেই হবে। সরকারি নিষেধ ছাড়াও নিজেদের সুরক্ষার জন্য, ভালোর জন্য আমরা নিজেরাই তো সচেতন হওয়া জরুরী তাই না!
তোমরা নিজেরাও বাইরে অযথা বের হবে না। সাবান দিয়ে হাত ধুবে প্রয়োজন অনুযায়ী। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। ইশকুল যেহেতু বন্ধ, ঘরে বসে যতটুকু পারো,ভালো করে লেখাপড়া করবে। তোমরা কিন্তু নিজেরাই নিজদের ভালো রাখতে পারবে, সুস্থ ও সুন্দর রাখতে পারবে। তাই না, কি বলো তোমরা?
-তা তো ঠিক ছোটোমামা। কিছুটা নরোম সুরে সমস্বরে রোকন ছোটনের জবাব।
-এই তো গুডবয়। আমার প্রিয় ভাগ্নে বলে কথা।
-আচ্ছা শোনো, পরিস্থতি একটু ভালো হোক। তোমাদেরকে বেড়াতে এক জায়গায় নিয়ে যাবো।
-কোথায় ছোটোমামা? কোথায় ছোটোমামা? তড়াস করে লাফিয়ে ওঠে ছোটন। সাথে সাথে রোকনেরও একই প্রশ্ন,
-কোথায় ছোটোমামা বলো, বলো না ছোটোমামা?
-বলছি তো বাবা,বলছি। ভাবছি, তোমাদের দুজনকে নিয়ে কর্ণফুলিতে নৌকা ভ্রমণে যাবো। একদিন সারা বিকেলবেলা সাম্পানে করে তোমরা দুজনকে নিয়ে শুধু বেড়াবো।
-ওয়াও! ওয়াও! ছোটন রোকন দুজনেই খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
-ছোটোমামা, নৌকা চড়া আমার খুব সখ। রোকনের সাথে সাথে ছোটনও বলে ওঠে
-আমারও! আমারও। কি মজা আমরা সাম্পানে বেড়াবো।
-আচ্ছা, ঠিক আছে এবার বলো, মেলায় যাবার জন্য,বিরক্ত করবে না আর মা’কে! করবে না তো?
রোকন েছাটন দু‘জনই চুপ। মাথা নিচু দু’জনেরই। মুখে কোনো কথা নেই। একসময় দুজন পরস্পরে আড় চোখে চোখ রাখে। তারপর হঠাৎ করেই দুজনই একসাথে বলে ওঠে,
– ঠিক আছে ছোটোমামা, বলবো না, বলেবো না। মা’কে মেলায় যাবার জন্য বিরক্ত করবো না। মেলায় যাবার কথাও বলবো না।
ছোটন মামাকে আবদারের সুরে বলে,
– তবে! ছোটোমামা করোনা অসুখ চলে গেলে তখন কিন্তু মেলায় নিতে হবে। মেলায় গিয়ে আমি নাগরদোলায় চড়বো কিন্তু। তখন না করতে পারবে না। মাকে কিন্তু বলে দিও।
– পরিস্থিতি ভালো হলে তখন তো এররকম সময়ে মেলা বসবেই। মেলা বসলে তো যেতেই পারবে। নাগরদোলায়ও চড়তে পারবে। এটাই তো ঠিক,তাই না!
-এখনো মেলা নিয়ে আছিস? আয়, আয় তোদের নাস্তা রেডি। বলেই মা আবার ভেতরের ঘরে চলে যায়। ছোটন রোকনও ছোটোমামার হাত ধরে মায়ের পিছু অনুসরণ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় টেস্টের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে টাইগাররা
পরবর্তী নিবন্ধআমাজন জঙ্গলে ‘সোনার নদী’