আনোয়ারায় দুই শিবিরে আলোচনায় ৬ প্রার্থী

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | বুধবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

দলীয় প্রতীক বা দলীয় প্রার্থী কোনটাই থাকছে না এবার। তারপরও আনোয়ারায় উপজেলা নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ বেশ সরগরম। এর একদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারীরা, অপরদিকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সমর্থকেরা। দুই শিবিরে আলোচনায় রয়েছেন ৬ প্রার্থী। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দুই অনুসারী ভোট করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে থাকলেও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর চার অনুসারীর মধ্যে যে কোনো একজন প্রার্থী হবেন এমন আভাস মিলছে। সেক্ষেত্রে ত্রিমুখি লড়াইয়ের আভাস দেখছেন স্থানীয়রা। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী দুইজনই সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সমর্থনের দাবি করে ভোটের মাঠে সরব আছেন। এই দুইজনই মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মীসভা করে যাচ্ছেন প্রায় দুই মাস ধরে। এরই মধ্যে তৌহিদুল হক চৌধুরীর ব্যানার ও প্রচারপত্রে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তাঁর দুইভাইয়ের ছবি শোভা পাচ্ছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বেশিরভাগ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আবদুল মান্নান চৌধুরীর সাথে প্রচারণায় আছেন। অধ্যাপক মান্নান স্থানীয় বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ভোটে লড়তে দুয়েক দিনের মধ্যে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে গত দুই মাস ধরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সমর্থক নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা অবস্থায় আছেন। গত ৯ মার্চ আনোয়ারা কলেজ মাঠে, ২৩ মার্চ পারকি সমুদ্র সৈকত, ২০ এপ্রিল চাতরী চৌমুহনী টানেল চত্বরে সমাবেশ করে। তিনটি সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের স্পিরিট ধরে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে উপজেলা নির্বাচনের সফলতা ঘরে তুলতে চায় তারা। এই শিবিরে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশরের নাম শোনা যাচ্ছে। আবুল কালাম চৌধুরী ২০০৯ সালে চাকা প্রতীকে একবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। সেবার নির্বাচিত হন আনোয়ারুল ইসলাম খান (সওগাত)। যিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রীর চাচা। কালাম চৌধুরী ও ডা. নাসির উদ্দিন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছার কথা জানালেও কাজী মোজাম্মেল হক জানান, সমমনাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজনই প্রার্থী হবেন। সেটা সময়ে বলা যাবে।

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির দিক নির্দেশনায় গত ১০ বছর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমি এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছি। তাই জনগণ আমার সাথে আছেন। বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ আনোয়ারার মাটি ও মানুষের নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু পরিবারের সকল সদস্য ও আমার রাজনৈতিক অভিভাবক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির দোয়া, ভালবাসা, সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে আছি। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে জয় আমারই হবে ইনশাআল্লাহ।

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম. মান্নান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে পালনকালে আমি দলের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দলের থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ইউনিয়নে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও অবস্থান বেশ গুছিয়ে নেয়া হয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য তাঁকে ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব্ব পালন করেছি, আনোয়ারা সদরের চারবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। পুরো ১১ ইউনিয়নে আমার কর্মী সমর্থক রয়েছে। তাই আনোয়ারায় সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, এলাকার উন্নয়ন, দুর্বৃত্তায়ন , দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কাজ করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো জীবন রাজনীতির জন্য কেটেছে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বিএমএ নেতা ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। সব সময় আমি দলের প্রতি অনুগত থেকে রাজনীতি করেছি। আমি বিশ্বাস করি ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে আনোয়ারা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এখানে পরিকল্পিত উন্নয়ন জরুরি। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে আমি প্রার্থী হবো। জনগণ সুযোগ দিলে আনোয়ারার উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করব ইনশাল্লাহ।

গত ২০ এপ্রিল চাতরী চৌমুহনী বঙ্গবন্ধু টানেল চত্বরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সম্মানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হকের পরিকল্পনায় এই সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কাজী মোজাম্মেলের ছবি সম্বলিত ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে যায় এলাকা। এরপরই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে কাজী মোজাম্মেলের নাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। তবে তিনি নিজে প্রার্থিতার ব্যাপারে সরাসরি মন্তব্য না করে বলেছেন, কর্মীরাই আমার শক্তি। তাদের জন্যই রাজনীতি। আনোয়ারায় দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত রাজনীতি চাই। সুস্থ রাজনীতি চালু করতে চাই। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের চাপ আছে। আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি করে এসেছি। হাইব্রিড রাজনীতির উত্থানের কারণে আমরা দলে উপেক্ষিত হয়েছি। তৃণমূলের অধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই। তবে সেটা হবে সকলের মতামতের ভিত্তিতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পে ইতিবাচক পরির্বতন এসেছে
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে ননদ ও দুই জায়ের ভোটের লড়াই