আইসক্রিম পাহাড়

জুয়েল আশরাফ | বুধবার , ২৯ জুন, ২০২২ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

গরীব মেয়ে আছিয়া মায়ের সাথে গ্রামে থাকে। ঠিকমতো খাওয়ার টাকাও নেই তাদের। দিনরাত পরিশ্রম করে কোনোরকমে জীবন যাপন করছে। প্রতিদিন একজন আইসক্রিম বিক্রেতা তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যায়। আছিয়া আইসক্রিমওয়ালাকে দেখে আর ভাবে, তার কাছেও যদি টাকা থাকতো তবে সেও দুধের একটি আইসক্রিম খেতে পারতো। আশেপাশের ছেলেমেয়েরা যখন দুধসাদা আইসক্রিম চুষে তখন আছিয়ার মুখেও পানি চলে আসে। কিন্তু আছিয়া কখনও হতাশ হয়নি। সে বিশ্বাস করে যে একদিন সেও দুধের আইসক্রিম খাবে।

একদিন আছিয়া দেখল আইসক্রিম বিক্রেতা তাকে কাছে ডেকে বলল, মেয়ে, আইসক্রিম তোমার খুব ভালো লাগে!
আছিয়া বলল, হ্যাঁ, কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই কেনার জন্য।
বিক্রেতা বলল, টাকা কোনো ব্যাপার না, এই বরফকুচি নাও, এই বরফকুচিটা এই বাক্সে রাখো।
বিক্রেতা আছিয়াকে একটা বাক্স আর বরফকুচি দিল।
আছিয়া বলল, এসবে আমি কী করব? আমি শুধু আইসক্রিম খেতে চাই।
বিক্রেতা বলল, এটা একটা জাদুর বাক্স। আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলব।
এই বলে বিক্রেতা সেই বাক্সে বরফকুচি রাখল। তারপর বলল, শুরু করো।

আছিয়া দেখল বাক্সটা আপনা-আপনি বরফে ভরতে শুরু করেছে। বাক্সটা যখন ভর্তি হতে চলেছে, তখন বিক্রেতা বলল, থামো।
সঙ্গে সঙ্গেই বরফ গঠন বন্ধ হলো। তারপর ভেতর থেকে কিছু বরফ বের করে একটা বৃত্ত বানিয়ে আছিয়াকে দিল।

আছিয়া আইসক্রিমওয়ালার উপর খুব খুশি। সে জাদুর বাক্সটি তুলে নিল এবং আইসক্রিম চুষে তার মায়ের কাছে পৌঁছে গেল। সে মাকে পুরো ঘটনা জানাল। এরপর যখনই দুজনের মনে হতো, তারা বরফ বানিয়ে পুরোদমে আইসক্রিম খেতো।

একবার আছিয়া ও তার মা বেড়াতে গেল। বাক্সটি তার কাছেই ছিল। দুজনে একটা বড় মাঠে বসে খেলা শুরু করল। আছিয়ার সাথে তার কিছু বন্ধুও ছিল। মা ভাবলেন, আমি যদি সবাইকে বরফকুচির আইসক্রিম খাইয়ে দিই, তাহলে সব শিশু খুশি হবে। ভাবতেই বাক্সের কাছে বললেন, শুরু করো।
একথা বলার পর বাক্সে বরফ ভর্তি হতে থাকে। আছিয়া তার বন্ধুদের সাথে খেলছে। খেলতে খেলতে সে অনেক দূর চলে গেছে। আছিয়া নেই দেখে মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি আছিয়াকে খুঁজতে বের হলেন।

আছিয়া ও তার বন্ধুরা দৌড়ে তাদের গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল। আছিয়ার মাও পিছু পিছু বাড়ি পৌঁছে গেল। তিনি আছিয়াকে বুঝিয়ে বললেন, এভাবে না জানিয়ে বেশি দূরে যাওয়া উচিত নয়।

আছিয়া মায়ের কাছে ক্ষমা চাইল। তার বন্ধুরা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেল। এই সমস্ত জগাখিচুড়িতে তারা বরফের বাক্সটি পুরোপুরি ভুলে গেছে। মাঠের সেখানে বাক্সটি বরফ তৈরি করছিল। ধীরে ধীরে চারিদিকে তুষারপাত শুরু হয়।

রাত হয়ে গেছে, তাই আছিয়া আর তার মা ঘুমিয়ে পড়েল। মাঝরাতে হঠাৎ করেই গ্রামের সবাই শীত অনুভব করতে শুরু করে। তারা সবাই অবাক হয়ে গেল যে, হঠাৎ করে সারা গ্রাম কেমন ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তারা মোটা চাদর নিয়ে নিজেদের ঢেকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। যখন সমস্ত গ্রামবাসী, আছিয়া এবং তার মা বেরিয়ে আসে, তারা কিছু দূর তুষার একটি উঁচু পাহাড় দেখতে পায় তুষার পাহাড় তাদের গ্রামে? গ্রামবাসী অবাক ভীষণ। তারা বুঝতে পারল না। হঠাৎ আছিয়া চিৎকার করে বলল, আমার আইসক্রিম বাক্স!

সে ছুটে গেল মাঠের দিকে। সেখানে গিয়ে সবাই দেখল বরফের পাহাড় ক্রমশ উঁচু হচ্ছে। বরফ আরেকটু বাড়লে হয়তো নিচে পড়তে শুরু করবে এবং তাদের ঘরবাড়ি বরফের নিচে চাপা পড়ে যাবে। আছিয়া বরফের বাক্সটিও বরফের ভেতরে কোথাও চাপা পড়ে গেছে। সে জোরে চিৎকার করে উঠল, ‘থামো’ আর হঠাৎ পাহাড়টা উঁচু হয়ে থেমে গেল।

বিশাল একটি আইসক্রিম-পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে দেখে আছিয়ার চক্ষু চড়কগাছ। সে জীবনে এতবড় আইসক্রিম দেখেনি। গ্রামবাসী সবাই আনন্দে হইহই করে আইসক্রিমের পাহাড় চাটতে লাগল। এমন অদ্ভূত ব্যাপার ঘটল যে এই বরফের পাহাড় সূর্যের তাপেও গলে গেল না। আছিয়ার কল্যাণে গরীব গ্রামবাসীরা এখন রোজ দুধসাদা আইসক্রিম খেতে পারছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রী যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে আছেন
পরবর্তী নিবন্ধইট পাথরের শহর