বান্দরবানে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা

বান্দরবান প্রতিনিধি | সোমবার , ২ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:০৭ অপরাহ্ণ

বান্দরবানে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বান্দরবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুজাহিদুর রহমানের আদালতে মেহেরুন নেছা নামে এক নারী রবিবার মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য কক্সবাজার পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)কে নির্দেশ দিয়েছে।
উক্ত মামলায় বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ সহ ৩ জনকে আসামী করা হয়েছে।
অন্য আসামীরা হলে- রুবি প্রু মারমা এবং ব্যুরো কর্মকর্তার স্ত্রী হ্লাসিং দাই। এছাড়াও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী দেখানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আবু জাফর জানান, জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য কক্সবাজার পিবিআইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা েযায়, বান্দরবানে একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে মামলার আসামী রুবিপ্রু মারমা, জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ এবং তার স্ত্রী হ্লাসিং দাই-এর সঙ্গে বাদী সমাজসেবা কার্যালয়ের ট্রেড প্রশিক্ষক মেহেরুন নেছার পরিচয় হয়।
পরিচয়ের সূত্রে আসামীরা বাদীর মেয়ে মাসুমা আক্তারকে মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের আওতায় চাকরির জন্য আবেদন করতে বলেন।
আবেদন করার পর তার মেয়েকে চাকরি দেয়ার নামে মঞ্জুর আহমেদ ও তার স্ত্রী হ্লাসিং দাই বাদীর কাছ থেকে টাকাও দাবি করেন।
পরবর্তীতে ১নং আসামী রুবিপ্রু মারমা নিজের প্রয়োজনে ব্যুরো বাংলাদেশ নামক এনজিও থেকে কিছু টাকা লোন নেয়ার জন্য বাদীকে জামিনদার হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
আসামী হ্লাসিং দাই জামিনদার হতে সুপারিশ করেন এবং তার স্বামী জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সরকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ ঋণগ্রহীতাকে (রুবি প্রু মারমা) ব্যুরো অফিসে চাকরি করে বলে দেখিয়ে যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক করে দেবেন।
রুবি প্রুর এরূপ কথায় প্রতারিত হয়ে মামলার বাদী জামিনদার হওয়ার জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
ব্যুরো বাংলাদেশ, বান্দরবান শাখা অফিসের তৎকালীন শাখা ম্যানেজার আজাদ রুবিপ্রু মারমার কাগজপত্র সঠিক আছে বলায় মামলার বাদী জামিনদার হিসেবে স্বাক্ষর করেন।
মামলার বাদী মেহেরুন নেছা অভিযোগ করে বলেন, “আমি একজন সরকারি কর্মচারী। উল্লেখিত আসামী ৩ জন আমাকে বিভিন্নভাবে মিথ্যা বলে ঋণ গ্রহণকারীর ভুয়া প্রত্যয়ন দিয়ে ঋণ উত্তোলনে আমাকে জামিনদার বানিয়েছে। এতে আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এছাড়াও ৩নং আসামী হ্লাসিং দাই-এর কাছ থেকে আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ১ লাখ টাকা ধার নিয়ে তাকে একটি স্বাক্ষর বিহীন ব্ল্যাংক চেক প্রদান করি। পরবর্তীতে তার টাকা ফেরত দেওয়ার পরেও সে আমার স্বাক্ষর নকল করে চেকে ১০ লক্ষ টাকার অংক বসিয়ে সোনালী ব্যাংক, বান্দরবান শাখা থেকে টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ চেষ্টা করে। পরবর্তীতে চেক ডিজঅনার করে আমার নামে উল্টো মামলা দায়ের করে। তাই আমি হ্লাসিং দাই-এর নামে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছি এবং ভুয়া প্রত্যয়ন দিয়ে ঋণ গ্রহণকারীর জামিনদার বানিয়ে আমার সাথে প্রতারণা করায় রুবি প্রু, মঞ্জুর আহমেদ ও তার স্ত্রী হ্লাসিংদাই সহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে প্রতারণার মামলা দায়ের করেছি।”
তবে এ বিষয়ে জানতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মঞ্জুর আহমেদ ২০০৭ সালে বান্দরবান জেলার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে অফিস সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে কর্মরত থাকার সুবাদে তিনি বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ভুয়া প্রত্যয়ন প্রদান, প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার নামে বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বেতন আত্মসাৎ এবং চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্নজনের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটি ও সিঙ্গাপুর রেডক্রসের রক্তদান কর্মসূচি
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক কু‌মিল্লা থেকে আটক