ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার বংশ বিস্তার থামাতে হবে

| সোমবার , ১৬ জুন, ২০২৫ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস এবং ডেঙ্গু, বাংলাদেশে এখন এই দুই রোগেরই প্রকোপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য। এমনকি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তবে ডেঙ্গুর তুলনায় করোনা সংক্রমণের হার এখনও কিছুটা কম। বাংলাদেশে বর্ষা এলে প্রতি বছরই ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কিন্তু চলতি বছর একই সময়ে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটায় বিষয়টি উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা। মশা নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারের পাশাপাশি এ বছর মৃত্যুহার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। খবরে আরো বলা হয়, ঢাকায় ঈদুল আজহার ছুটির আগের দুই সপ্তাহ ধরে চলা জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১৫টি বাড়ির মধ্যে সাত থেকে আটটি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। এ বছর ৫ হাজার ৪০১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২৩ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। আর মেআগস্ট পর্যন্ত প্রকোপ থাকে সব থেকে বেশি। বর্তমান সময়টা হলো ডেঙ্গুর মৌসুম।

এডিস মশার বিস্তার আগে শুধু ঢাকাচট্টগ্রামে ছিল, এখন তা দেশের গ্রামাঞ্চলেও চলে গেছে। এর চিকিৎসা সাধারণত ঢাকাকেন্দ্রিক ও বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, এখনই সরকারের উচিত, সব পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইসিইউ সাপোর্ট বিভাগীয় পর্যায়ে থাকতে হবে। নইলে শহরে আনতে আনতে রোগী মারা যাবে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা পত্রিকান্তরে বলেন, ডেঙ্গু মশা নিধনের দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসন ব্যর্থ হলে এডিস মশার প্রকোপ বাড়বে। মানুষ আক্রান্ত হবে, মৃত্যুর হার বেশি হবে। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। বাসাবাড়ির মালিকদের দায়িত্ব আছে নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে। শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকা উচিত হবে না। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ মৃত্যু ডেকে আনবে। তাঁরা বলেন, ডেঙ্গু উপসর্গ হলো প্রচণ্ড জ্বর, গিরায় গিরায় ব্যথা, ব্যাকপেইন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা দেওয়া। এসব লক্ষণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা শার্টপ্যান্ট পরিধান করার পরামর্শ দেন তাঁরা। বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, রাজধানী থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সরকারের প্রশাসন আছে। এই চেইন যদি মশা নিধনে কাজ করে এবং মানুষ নিজেরাও সচেতন হয়, পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের যাতে ঢাকামুখী না হতে হয়, সেজন্য বিভাগীয় পর্যায়ে আইসিইউ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে জটিল রোগীদের ঢাকায় আসতে না হয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে অনেকে সিটি করপোরেশনের একার দায়িত্ব মনে করে থাকেন। আসলে শুধু সিটি করপোরেশনের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, এর প্রতিরোধে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, মশার চরিত্র আচরণ অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটার কামড়ানোর ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। একটা জরিপে দেখা গেছে, ৫০ ভাগ আবর্জনা আর ৫০ ভাগ বাসাবাড়ির স্বচ্ছ পানিতে এই মশার উৎপত্তি হয়। কীটনাশক ব্যবহার করে, এটি সাধারণত মারা যায় না। এটা নিধন করতে হলে ওষুধও পরিবর্তন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবটবৃক্ষের মতন আগলে রাখেন বাবা
পরবর্তী নিবন্ধআকাশ নীলা