স্বাধীনতা দিবসে জেলা প্রশাসন ও চসিকের আলাদা আয়োজন

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা বলছেন এটা সমন্বয়হীনতা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৬ মার্চ, ২০২৪ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে নগরের কাট্টলীতে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে নানা প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করেছে। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ কাউন্সিলররা আজ সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন। তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ দিবসে মেয়র ও প্রশাসনের পৃথক জায়গায় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন নিয়ে কিছুটা বিব্রত চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা। তারা কোথায় শ্রদ্ধা জানাবেন সেটা নিয়েও সংশয়ে আছেন। একইসঙ্গে এখানে সমন্বয়হীনতার কথা বলছেন।

এ বিষয়ে চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা প্রশাসন কাট্টলীতে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সিটি কর্পোরেশনকে জানায়নি। এমনকি সৌজন্যের খাতিরে মেয়রকেও অবহিত করেনি। তাই গতবারের ন্যায় এবারও অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। তবে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অফিসিয়াল প্রোগ্রাম হিসেবে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের বিষয়টি কার্ড দিয়ে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা বা ব্যক্তি প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আমরা যেটা করছি সেটা সরকারি বা অফিসিয়াল প্রোগ্রাম। আমাদের এই অফিসিয়াল প্রোগ্রামের কার্ড সবাইকে দিয়েছি। পত্রপত্রিকায়ও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কার্ডও পাঠিয়েছি। সে জায়গায় সিটি কর্পোরেশন যদি মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল ও কলেজের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানায় সেটা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তবে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, জেলা প্রশাসন যেটা করেছে সে বিষয়ে আমরা অবহিত ছিলাম না। হঠাৎ করে জানতে পেরেছি। তাই মেয়র মহোদয় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল ও কলেজের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ভবিষ্যতে সরকারি সিদ্ধান্ত হলে আমরা সেখানে (কাট্টলী) যাব।

এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমন্বয়ের ঘাটতি তো অবশ্যই আছে। আমরা যদি জানতাম ওখানে (কাট্টলী) করা হচ্ছে তাহলে হয়তো আমরা এখানে ব্যবস্থা করতাম না। মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত ছিল।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে যারা আসে তাদের জানিয়েছি। তাছাড়া এটা সর্বজনীন বিষয়। যার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবেন।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তবে দুই জায়গায় হলেও সমস্যা নেই। যার যেখানে সুবিধা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় ২১ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলো চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয় বিজয় দিবসের কর্মসূচি। এরপর একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর পুরনো কাঠামোটা ভাঙার কাজ শুরু হয়। একইসঙ্গে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সেখানে ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় দিবসের কর্মসূচিগুলো পালিত হয়ে আসছে। গতবছর শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ত্রুটি থাকায় ১৬ ডিসেম্বর নবনির্মিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আপত্তি জানান চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা। তারই ধারাবহিকতায় এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিও নবনির্মিত শহীদ মিনারের পরিবর্তে অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের সময় এখানে (উত্তর কাট্টলীর প্রস্তাবিত জায়গা) একটি নতুন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ও যাদুঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর গত ৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ বছর গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয় নতুন স্মৃতিসৌধে এ বছর স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর। এছাড়া সেখানে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। গত ২৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এর উদ্বোধন করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের কমর্সূচি শুরু হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের সব আয়োজন করা হয়েছে। এরপর নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে হবে।

এদিকে চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমদ আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার (আজ) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে মিউনিসিপ্যাল স্কুলের অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে উপস্থিত থাকবেন মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাবৃন্দ। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফাহিমের দুরন্তপনা এভাবেই শেষ হয়ে গেল!
পরবর্তী নিবন্ধঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পরিমাপ করে দেখল দুদকের টিম