সড়কের কেন এই অবস্থা

সংস্কার হলেও ছাল উঠে যায়, নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২৫ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক তীব্র তাপ প্রবাহ এবং ভারী বর্ষণে নগরীর সড়কগুলোর ‘ছাল’ উঠে গেছে। কয়েকশ’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশন মূল সড়কগুলোতে সংস্কার করেছে। কিন্তু তাও উঠে যাচ্ছে। তবে অলিগলিসহ বিস্তৃত এলাকার সড়কের অবস্থা শোচনীয়। এই বেহাল দশার জন্য নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার এবং কাজের মানও নিম্ন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নগরীতে সর্বমোট ১১শ কিলোমিটারের মতো রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটিই মূলত প্রধান সড়ক। এর বাইরে অলংকার মোড় থেকে ট্রাংক রোড, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে স্ট্যান্ড রোড, কাপাসগোলা রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোড, বায়েজিদ বোস্তামী রোডসহ ৬শ’টির মতো পিচ ঢালা রাস্তা রয়েছে। এর বাইরে নগরীতে ইট বিছানো এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে। নগরীর পিচঢালা ১১শ’ কিলোমিটার পথেই মূলতঃ ভারী যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। বড় বড় খানাখন্দে ভরে গেছে প্রায় প্রতিটি সড়ক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু বৃষ্টিই নয়, প্রচণ্ড তাপেও সড়ক নষ্ট হয়েছে। সড়ক নির্মাণ এবং সংস্কারের সময় নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। প্রচণ্ড গরমে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহৃত হওয়া রাস্তাগুলো উত্তপ্ত হয়ে যায়। বিটুমিন নরম হয়ে যায়। কোথাও কোথাও গলে যায়। বৃষ্টিতে সেই নরম বিটুমিনই ক্ষয়ে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি করেছে। যথাযথ মানসম্পন্ন বিটুমিন ব্যবহার করা হলে এতো ক্ষতি হতো না বলে জানান তারা।

খরচ বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারির বাইপ্রোডাক্ট হচ্ছে বিটুমিন। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে উৎপাদিত বিটুমিন বিপিসি তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির পাশাপাশি স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) নামের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও বাজারজাত করে। ইস্টার্ন রিফাইনারির বিটুমিনের মান যথেষ্ট উন্নত। তবে এই বিটুমিনে দেশের চাহিদা পুরোপুরি মিটে না। বেসরকারিখাতে বিদেশ থেকে প্রচুর বিটুমিন আমদানি হয়। বহু আমদানিকারকই একেবারে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি এবং বাজারজাত করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব নিম্নমানের বিটুমিনই সড়কের জন্য কাল হয়ে উঠে।

দেশে সড়ক সংস্কার ও নির্মাণে দুই ধরনের বিটুমিন ব্যবহৃত হয়। এরমধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে উৎপাদিত ৬০৭০ গ্রেডের বিটুমিনের মান অনেক উন্নত। এই বিটুমিন প্রতি ড্রামের দাম ১২ হাজার ৫শ’ টাকা। প্রতি টনের দাম ৭৭ হাজার ৩শ’ টাকা। অপরদিকে ৮০১০০ গ্রেডের বিটুমিনের মান তেমন ভালো নয়। এই বিটুমিন বিক্রি হয় প্রতি ড্রাম ১২ হাজার টাকা এবং প্রতি টন ৭৪ হাজার টাকা। শুধুমাত্র প্রতি ড্রামে ৫শ’ টাকা এবং প্রতি টনে ৩ হাজার ৩শ’ টাকা সাশ্রয় করতে ঠিকাদারেরা ৮০১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করেন না, জ্বালানি খাতে বিপুল অর্থ সাশ্রয় করতেও নিম্নমানের বিটুমিনের দিকে ঝুঁকেন ঠিকাদারেরা। উন্নতমানের ৬০৭০ গ্রেডের বিটুমিনের দাম বেশির পাশাপাশি কাজের সময় গলাতেও প্রচুর জ্বালানি লাগে। এতে অনেক টাকা খরচ হয়। তাই ঠিকাদারেরা নিম্নমানের বিটুমিনই ব্যবহার করেন। এছাড়া আমদানিকৃত বিটুমিনও মানহীন বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ফলে গাড়ির চাপ ও চাকার ঘর্ষণে নিম্নমানের বিটুমিন দেওয়া রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী বলেছেন, এসব অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। শুধু বিটুমিন দিয়ে তো আর রাস্তা রক্ষা হয় না। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এবং জলাবদ্ধতা হয়েছে তাতে যত ভালো মানের বিটুমিনই দেন না কেন রাস্তার পিচ চলে যাবে। একমাত্র ঢালাই করা রাস্তাই কেবল এমন বৃষ্টির তোড়ে রক্ষা পায়। তবে কাজে ঠিকাদারেরা নিম্নমানের বিটুমিন গছানোর চেষ্টা করেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
পরবর্তী নিবন্ধমেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ও বেশি দামে পণ্য বিক্রি