উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতা

নির্দেশনা না মানায় বিব্রত দলের হাই কমান্ড কেন্দ্রের প্রতি তৃণমূলের আস্থার সংকট?

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন বর্জনে দলীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার মধ্যেই চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মানছেন না দলটির তৃণমূলের বহু নেতাকর্মী। নির্বাচনে অংশ নেওয়াদের মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাও রয়েছেন। ফলে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলের প্রতি তৃণমূলের কোনো অনাস্থা তৈরি হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির ভেতরেবাইরে। বিষয়টিতে বিব্রত বিএনপির হাই কমান্ড।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন। এছাড়া কাছাকাছি সময়ে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এসব নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ৮৫ জন প্রার্থী হয়েছেন বলে জানতে পারে দলটি, যা সামনে আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে দলের হাই কমান্ড।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন না যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলের হাই কমান্ড। গত ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায়ও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তা জানিয়ে দেওয়া হয় দলীয় নেতাকর্মীদের।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বিএনপির এ সিদ্ধান্তের পরও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। যাদের মধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির সভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক, উপজেলা যুবদল ও মহিলা দলের সভাপতি, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতিসহ সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতা রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এমন নেতাদের দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় দলের অভ্যন্তরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের প্রতি তৃণমূলের কোনো অনাস্থা তৈরি হচ্ছে কিনা সেটাও রয়েছে। তবে বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না মানা দলের জন্য বিব্রতকর কিনা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আজাদীকে বলেন, বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। যারা মানছে না তাদের তো জেল দেওয়া যাবে না। তবে দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, সবাই গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই, কিছু আছে।

কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না মানায় দলের প্রতি তৃণমূলের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, কেন্দ্রের প্রতি আস্থা নেই বলা যাবে না। বিএনপি দেশের বৃহত্তম দল। ধরলাম ১০০ জনও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মানেনি। এত বড় দলে ১০০ জনের আস্থায়অনাস্থায় কোনো কিছু যায় আসে না। তাই সেটা চিন্তা করার মতো বিষয় না।

তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছে তাদের মধ্যে পাঁচ শতাংশও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি নন। যদি পাঁচ শতাংশের মধ্যে জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এমনকি উপজেলার প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি নির্বাচনে অংশ নিতেন তাহলে না হয় ভেবে দেখা যেত। গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এদের মধ্যে দুয়েকজন নির্বাচন করতে পারে, কিন্তু সেটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এটা স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় অনেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের মধ্যে অনেকের সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে। এদের অনেকে হয়তো কোনো প্রলোভনে পড়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে বলেন, যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তারা দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করছে। সেজন্য তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সামনেও যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নির্দেশনা না মেনে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গত পাঁচদিনে ৮৫ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গতকাল বহিষ্কার করা হয় তিনজনকে। এর আগে ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের চারজনসহ ৭৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন ২১ জন। এর আগে ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন অংশ নেওয়ায় দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এরা হচ্ছেন চিকনদন্ডী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ ও সদস্য জহুরুল আলম। একইদিন একই অপরাধে দেশের অন্যান্য এলাকার আরো ছয় বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ২৩ এপ্রিলও একজনকে বহিষ্কার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধরপ্তানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা