রপ্তানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতাসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি

হাসান আকবর | রবিবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

রপ্তানি আয় গত বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সংশয় দেখা দিয়েছে। অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসের রপ্তানি আয় বিশ্লেষণ করে সূত্রগুলো বলেছে, ৭২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ দূরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বাকি সময়ে যা কাটিয়ে উঠা অসম্ভব। যুদ্ধসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ প্রভাব ফেলছে বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের ৬৭ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪৩.৫৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৩৫৫ কোটি) ডলারের পণ্য। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পরবর্তী তিন মাসে ২৮.৪৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৮৪৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে হবে। উক্ত তিন মাসের মধ্যে হাতে রয়েছে মাত্র ২ মাস। এই স্বল্প সময়ে লক্ষ্যমাত্রার বাকি অর্থের পণ্য রপ্তানি কার্যতঃ অসম্ভব বলে রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

তারা বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। যা আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশ কম। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৬২৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছিল ৪ হাজার ১৭২ কোটি ডলারের পণ্য। এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় ১৮৩ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই বৃদ্ধি শেষতক রপ্তানি আয়কে লক্ষ্যমাত্রার কতটুকু কাছাকাছি নিয়ে যায় সেটা সময় বলে দেবে বলে সূত্র মন্তব্য করেছে।

আগের অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৬৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.৪৪ বিলিয়ন ডলার কম। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি অর্জিত হলেও এবার এই ব্যবধান আরো বাড়বে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতাসহ বিদ্যমান পরিস্থিতি রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাত একটি বড় উৎস। আশার কথা হচ্ছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা গতির সঞ্চার হয়েছে। একইসাথে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের বাজারও বেড়েছে, বেড়েছে আয়। তবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেঙটাইল ও প্রকৌশল খাতের পণ্যের রপ্তানি বেশ চোখে পড়ার মতো কমেছে। হাতে থাকা সময়ের মধ্যে এসব পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং রপ্তানি বাড়ানো কঠিন বলেও ইপিবির একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

তৈরি পোশাকখাতের রপ্তানি কিছুটা ভালো হলেও আশানুরূপ নয় মন্তব্য করে বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। আমরা ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোষাক রপ্তানি হওয়ার আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রধানতম বাজার ইউরোপ আমেরিকা থেকে সেভাবে অর্ডার আসেনি। ইউরোপ আমেরিকা থেকে প্রত্যাশিত অর্ডার না পাওয়ায় আমাদের প্রস্তুতি থাকলেও পণ্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারছে না। ফলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া অসম্ভব। তবে আগামী অর্থবছরের শুরুতে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে পারে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি হয়েছিল ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার। যা ওই বছরের মোট রপ্তানির ৮৪.৫৮ শতাংশ।

চলতি বছরের তৈরি পোশাক রপ্তানির তথ্য উল্লেখ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে ৩৭.২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তৈরি পোশাক ৪.৬ শতাংশ কম রপ্তানি হয়। এবছরও রপ্তানি আয়ের বড় অংশীদার তৈরি পোশাকখাতই হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতা
পরবর্তী নিবন্ধগুদামে মজুদ ৬০০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ