চট্টগ্রামে অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের সংকট রয়েছে। যে কয়েকজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন, তাদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আছে ভুয়া ফিজিও কিংবা টেকনোলজিস্ট। যারা কোনো বিশেষজ্ঞের অধীনে অল্প কিছুদিন কাজ করে নিজেরাই খুলে বসেছেন ফিজিওথেরাপি সেন্টার। এসব সেন্টারে রোগী ভর্তির বিধান না থাকলেও অনেকে সেন্টারে রোগীদের ভর্তি রেখে কথিত চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে। শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, হাড়ের সমস্যা, পোড়া রোগী, জন্মগতভাবে যেসব শিশু প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি ও মেরুদণ্ডের সমস্যা নিরাময়ে বিশ্বব্যাপী ফিজিওথেরাপি একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। এছাড়া সার্জারি, বার্ধক্যজনিত রোগ ও পঙ্গু পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
জানা গেছে, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঁচজনের একজন দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথায় আক্রান্ত ৪৯ শতাংশ মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে অংশ নিতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যথায় আক্রান্তরা ব্যথার সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য আমাদের দেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটিতে এ বছর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্যকর বার্ধক্য : ফিজিওথেরাপি ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে দুর্বলতা ও পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধ’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ নানা ধরনের প্রতিবন্ধিতায় ভুগছেন। জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। বাত–ব্যথা, কোমর, মেরুদণ্ড ও ঘাড়ে ব্যথা, ক্রীড়াঘাত, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা (প্যারালাইসিস), মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (স্ট্রোক) সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছে। তাদেরও ফিজিওথেরাপি জরুরি। তাই দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট দরকার। তবে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ফিজিওথেরাপি শিক্ষার জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই; কিন্তু জনমানুষের চিকিৎসার অধিকারের স্বার্থে দেশে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার নিয়ন্ত্রিত প্রসার দরকার। স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশা চর্চার কোনো সনদ দেওয়া হয় না। প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৮। আধুনিক ও যুগোপযোগী ফিজিওথেরাপি বিষয়ে এখনই আমাদের নজর দেওয়া উচিত। ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও সেবায় উদাসীনতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
আকিবুল ইসলাম নামে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বলেন, ফিজিওথেরাপি নিয়ে অনেকের মধ্যে অজ্ঞতা রয়েছে। অনেক মানুষ সাইনবোর্ড দেখে ভুয়া ও নামসর্বস্ব ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে ফিজিওথেরাপি নিতে যান। এদের মধ্যে অনেকে নামের ডাক্তারও সংযোজন করে দেন। অথচ ফিজিওথেরাপিস্ট কোনোভাবেই ডাক্তার না। এভাবে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। তাই রোগীদের স্বজনের সতর্ক থাকতে হবে।











